উজবেকিস্তানকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান

বাংলাদেশের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের জন্য উজবেকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাংলাদেশ-উজবেকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং পর্যটন খাত সম্প্রসারণে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট পরিষেবা চালু করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম অ্যালোয়েভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।

টিপু মুনশি বলেন, ‘উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতের বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্ক নির্মাণ করেছেন এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ এবং সুবিধা ঘোষণা দিয়েছেন।’ তিনি উজবেক বিনিয়োগকারীদের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ভিসা সহজীকরণ হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সফর করে বিনিয়োগের ক্ষেত্র বের করতে পারবেন। সরকার টু সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী টু ব্যবসায়ী যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক সুবিধার জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোকে খুঁজে বের করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।’ এ সময় উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম অ্যালোয়েভ সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে তার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ‘আগামী আগস্ট মাসে বাংলাদেশ উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘ইন্টার গভার্নমেন্টাল কমিশন’ যোগদান করবে। দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই সফরে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল থাকবেন।’

২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৬.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির বিপরীতে উজবেকিস্তান থেকে ৮.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি করে। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া একইদিন উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র বাখরোম আলয়েভের নেতৃত্বে দেশটির প্রতিনিধিদল এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উজবেকিস্তানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ও প্রবৃদ্ধির অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের সফর এবং অংশীদারত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশই গতি পেয়েছে। ঢাকা-তাসখন্দ সম্পর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা। টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও আসিয়ান দেশগুলোর আঞ্চলিক প্রবেশদ্বার এবং এশিয়ার দুই জায়ান্ট ভারত ও চীনের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সংযোগ হিসেবে কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার আধুনিক অবকাঠামোসহ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩০টি আইটি পার্ক এবং পর্যটন পার্ক তৈরি করছে। উজবেকিস্তান এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে পারে। এছাড়া পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, হিমায়িত সামুদ্রিক খাবার, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, আইসিটি, এফএমসিজি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং অন্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি রয়েছে। উজবেকিস্তান বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং জেনেরিক ওষুধ আমদানি করতে পারে।’

বৈঠকে উজবেকিস্তানের উপমন্ত্রী বাখরোম আলয়েভ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তৃত করার সময় এসেছে এখন। পরিবহন ও যোগাযোগ একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল, তবে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার করার জন্য প্রস্তুত আমরা।’ তিনি এফবিসিসিআইকে উজবেকিস্তানে সফর করার এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা অন্বেষণের আমন্ত্রণ জানান।

এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘আজকের এ আয়োজন বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানকে পারস্পরিক বিনিয়োগে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।’

এই বৈঠকে হাবিব উল্লাহ ডন এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালকরাসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

উজবেকিস্তানকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের জন্য উজবেকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাংলাদেশ-উজবেকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং পর্যটন খাত সম্প্রসারণে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট পরিষেবা চালু করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম অ্যালোয়েভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।

টিপু মুনশি বলেন, ‘উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতের বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্ক নির্মাণ করেছেন এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ এবং সুবিধা ঘোষণা দিয়েছেন।’ তিনি উজবেক বিনিয়োগকারীদের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ভিসা সহজীকরণ হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সফর করে বিনিয়োগের ক্ষেত্র বের করতে পারবেন। সরকার টু সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী টু ব্যবসায়ী যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক সুবিধার জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোকে খুঁজে বের করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।’ এ সময় উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম অ্যালোয়েভ সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে তার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ‘আগামী আগস্ট মাসে বাংলাদেশ উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘ইন্টার গভার্নমেন্টাল কমিশন’ যোগদান করবে। দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই সফরে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল থাকবেন।’

২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৬.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির বিপরীতে উজবেকিস্তান থেকে ৮.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি করে। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া একইদিন উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র বাখরোম আলয়েভের নেতৃত্বে দেশটির প্রতিনিধিদল এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উজবেকিস্তানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ও প্রবৃদ্ধির অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের সফর এবং অংশীদারত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশই গতি পেয়েছে। ঢাকা-তাসখন্দ সম্পর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা। টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও আসিয়ান দেশগুলোর আঞ্চলিক প্রবেশদ্বার এবং এশিয়ার দুই জায়ান্ট ভারত ও চীনের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সংযোগ হিসেবে কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার আধুনিক অবকাঠামোসহ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩০টি আইটি পার্ক এবং পর্যটন পার্ক তৈরি করছে। উজবেকিস্তান এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে পারে। এছাড়া পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, হিমায়িত সামুদ্রিক খাবার, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, আইসিটি, এফএমসিজি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং অন্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি রয়েছে। উজবেকিস্তান বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং জেনেরিক ওষুধ আমদানি করতে পারে।’

বৈঠকে উজবেকিস্তানের উপমন্ত্রী বাখরোম আলয়েভ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তৃত করার সময় এসেছে এখন। পরিবহন ও যোগাযোগ একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল, তবে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার করার জন্য প্রস্তুত আমরা।’ তিনি এফবিসিসিআইকে উজবেকিস্তানে সফর করার এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা অন্বেষণের আমন্ত্রণ জানান।

এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘আজকের এ আয়োজন বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানকে পারস্পরিক বিনিয়োগে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।’

এই বৈঠকে হাবিব উল্লাহ ডন এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালকরাসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।