বিশ্বে গম সরবরাহ ব্যাপক হারে কমতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের আশঙ্কা

চাহিদার দিক থেকে ২০২৩-২৪ মৌসুমে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে গমের বৈশ্বিক সরবরাহ রেকর্ড সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর এবারই প্রথম সরবরাহ এতটা নিম্নমুখী হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ফলে আরও বাড়তে পারে শস্যটির বাজারদর। রয়টার্স।

বিশ্বজুড়ে গম উৎপাদন ও বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা কাজ করছে। বিশেষ করে কৃষ্ণসাগরীয় ইস্যু এ অনিশ্চয়তায় সবচেয়ে বেশি জ্বালানি জোগাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বর্তমানে গমের বৈশ্বিক সরবরাহ কম। ফলে যে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তা ব্যাপক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারকে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়, এ মৌসুমে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোয় গমের মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমতে পারে। অর্থাৎ মৌসুমে যে পরিমাণ গমের মজুদ থাকবে তার চেয়ে ব্যবহারের হার থাকবে বেশি। মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত গত ১০ বছরের গড় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে অনেক নিচে নামবে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত ছিল ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর খাদ্যশস্য বিশেষ করে গমের বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন তৈরি হয়। এরপর থেকেই অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক ইউক্রেনে উৎপাদন ও রপ্তানি সমানতালে কমছে। গত বছর দেশটি প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা বেশি রপ্তানি করলেও এ বছর পরিস্থিতি আবারও নেতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে ইউক্রেন ২ কোটি ৯ লাখ টন গম উৎপাদন করতে পারে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে যা কমে ১ কোটি ৬৫ লাখ টনে নামবে। অন্যদিকে ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশটি ১ কোটি ৫০ লাখ টন রপ্তানি করবে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে যা এক কোটি টনে নামতে পারে। অর্থাৎ আগামী মৌসুমে দেশটির উৎপাদন ও রপ্তানি উভয়ই কমবে।

ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি সিংহভাগই নির্ভর করছে কৃষ্ণসাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তি সম্প্রসারণের ওপর। রাশিয়া এরই মধ্যে আলোচনায় না বসার হুমকি দিয়েছে। তবে তুরস্ক বলছে সব পক্ষই চুক্তিতে আগ্রহী।

বিশ্বের অন্য শীর্ষ রপ্তানিকারক রাশিয়ায় ২০২৩-২৪ মৌসুমে গম উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কমার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। তবে রপ্তানি ২ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন বৈশ্বিক গম সরবরাহের ২৯ শতাংশ জোগান দিয়েছে।

এদিকে এল নিনোর প্রভাবে এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় গম উৎপাদন কমে চার বছরের সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশটির রপ্তানি ২ কোটি ৪০ লাখ থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টনে নামতে পারে। এর আগে টানা তিন বছর দেশটিতে গমের বাম্পার ফলন হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানির পরিমাণ ইতিহাসের সর্বনিম্নে নামতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৩-২৪ মৌসুমে রপ্তানি কমতে পারে ৯ শতাংশ। খরার প্রভাবে শীতকালীন শক্ত লাল জাতের গম উৎপাদন কমে ৬৬ বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে।

২০২১-২২ মৌসুমে ভারত রেকর্ড ৮০ লাখ টন গম রফতানি করেছিল। তবে ২০২৩-২৪ মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি তলানিতে নামবে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। এমনকি শীঘ্রই রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও নেই ভারতের।

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

বিশ্বে গম সরবরাহ ব্যাপক হারে কমতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের আশঙ্কা

সংবাদ ডেস্ক

image

চাহিদার দিক থেকে ২০২৩-২৪ মৌসুমে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে গমের বৈশ্বিক সরবরাহ রেকর্ড সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর এবারই প্রথম সরবরাহ এতটা নিম্নমুখী হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ফলে আরও বাড়তে পারে শস্যটির বাজারদর। রয়টার্স।

বিশ্বজুড়ে গম উৎপাদন ও বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা কাজ করছে। বিশেষ করে কৃষ্ণসাগরীয় ইস্যু এ অনিশ্চয়তায় সবচেয়ে বেশি জ্বালানি জোগাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বর্তমানে গমের বৈশ্বিক সরবরাহ কম। ফলে যে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তা ব্যাপক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারকে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়, এ মৌসুমে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোয় গমের মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমতে পারে। অর্থাৎ মৌসুমে যে পরিমাণ গমের মজুদ থাকবে তার চেয়ে ব্যবহারের হার থাকবে বেশি। মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত গত ১০ বছরের গড় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে অনেক নিচে নামবে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত ছিল ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর খাদ্যশস্য বিশেষ করে গমের বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন তৈরি হয়। এরপর থেকেই অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক ইউক্রেনে উৎপাদন ও রপ্তানি সমানতালে কমছে। গত বছর দেশটি প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা বেশি রপ্তানি করলেও এ বছর পরিস্থিতি আবারও নেতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে ইউক্রেন ২ কোটি ৯ লাখ টন গম উৎপাদন করতে পারে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে যা কমে ১ কোটি ৬৫ লাখ টনে নামবে। অন্যদিকে ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশটি ১ কোটি ৫০ লাখ টন রপ্তানি করবে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে যা এক কোটি টনে নামতে পারে। অর্থাৎ আগামী মৌসুমে দেশটির উৎপাদন ও রপ্তানি উভয়ই কমবে।

ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি সিংহভাগই নির্ভর করছে কৃষ্ণসাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তি সম্প্রসারণের ওপর। রাশিয়া এরই মধ্যে আলোচনায় না বসার হুমকি দিয়েছে। তবে তুরস্ক বলছে সব পক্ষই চুক্তিতে আগ্রহী।

বিশ্বের অন্য শীর্ষ রপ্তানিকারক রাশিয়ায় ২০২৩-২৪ মৌসুমে গম উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কমার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। তবে রপ্তানি ২ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন বৈশ্বিক গম সরবরাহের ২৯ শতাংশ জোগান দিয়েছে।

এদিকে এল নিনোর প্রভাবে এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় গম উৎপাদন কমে চার বছরের সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশটির রপ্তানি ২ কোটি ৪০ লাখ থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টনে নামতে পারে। এর আগে টানা তিন বছর দেশটিতে গমের বাম্পার ফলন হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানির পরিমাণ ইতিহাসের সর্বনিম্নে নামতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৩-২৪ মৌসুমে রপ্তানি কমতে পারে ৯ শতাংশ। খরার প্রভাবে শীতকালীন শক্ত লাল জাতের গম উৎপাদন কমে ৬৬ বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে।

২০২১-২২ মৌসুমে ভারত রেকর্ড ৮০ লাখ টন গম রফতানি করেছিল। তবে ২০২৩-২৪ মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি তলানিতে নামবে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। এমনকি শীঘ্রই রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও নেই ভারতের।