সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলেন, দুই পাড়ে অনুমোদনহীন স্থাপনা উচ্ছেদ না করে যেভাবে নদী খনন করা হচ্ছে তা কোনো উপকারে আসবে না, বরং নদী খনন করে খাল বানানো হবে। কোথাও কোথাও এরই মধ্যে খননকৃত নদীর পাড় ধসে যাচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা নদীতেই যাচ্ছে।
খননে অনিয়মের কথা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ছোট যমুনা পুনঃখননে কোনোরকম অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১-এর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে সারা দেশে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায় দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে) ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদীর ১৫ দশমিক ৯০ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে খননকাজ শুরু করে ৩০ মের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, কিন্তু কাজের যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া তলদেশে ২৮ ফুট ও উপরের অংশে ৮০-১০০ ফুট প্রশস্ত রেখে খনন করতে হবে।
এ ব্যাপারে ছোট যমুনা নদীসংলগ্ন দুদলী গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম, সোহেল হোসেন বলেন, যমুনা নদী পুনঃখনন করে সরু খালে পরিণত করা হচ্ছে। তাদের দাবি, আগে নদীর আকার যতটুকু ছিল বর্তমানে তার ৪ ভাগের ১ ভাগও খনন করা হচ্ছে না। সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে ছোট যমুনা পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে তা পূরণ হবে না। নদীর তলদেশের পলিমাটি তুলে উপরে রাখা হচ্ছে, যা কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় নদীগর্ভে ধসে পড়বে। এভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় মথুরাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বলেন, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে চরম অনিয়ম হচ্ছে। এভাবে খননকাজ সম্পন্ন করা হলে সরকারের টাকার অপচয় হবে। প্রয়োজনে এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ করা হবে।
নদী বাঁচাও আন্দোলন নেতা অধ্যক্ষ আশেক-ইলাহী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ছোট যমুনা নদী খননে চরম অনিয়ম করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে দায়সারা গোছের খনন করছে, যা এলাকার মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। যেভাবে খনন করলে নদী জোয়ারভাটা বা নাব্যতা ফিরে পাবে তা হচ্ছে না। এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ ফুট গভীর করে কোনো ভরাট নদী খনন করা হলে তাতে কি নাব্যতা ফিরে পাবে ? শুধু সরকারের টাকা নষ্ট করা ছাড়া কোনো কাজে আসবে না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী বলেন, ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়নি। তবে নদীপাড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, যা উচ্ছেদ করার জন্য বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় নদী খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এসব স্থাপনার কারণে খননকৃত মাটি রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তার পরও খুব কষ্ট করে খনন করা হচ্ছে ছোট যমুনা নদী।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, নদী খনন কাজে ত্রুটি হয়েছে শুনেছি। তবে ?খননকাজে কোনো রকম অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। সিডিউল অনুযায়ী খননকাজ বুঝিয়ে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। আমি সদ্য সাতক্ষীরায় যোগদান করেছি। তার পরও খনন এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাতক্ষীরা : ছোট যমুনা নদীর খাল খনন -সংবাদ
আরও খবরশনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪
প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা : ছোট যমুনা নদীর খাল খনন -সংবাদ
সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলেন, দুই পাড়ে অনুমোদনহীন স্থাপনা উচ্ছেদ না করে যেভাবে নদী খনন করা হচ্ছে তা কোনো উপকারে আসবে না, বরং নদী খনন করে খাল বানানো হবে। কোথাও কোথাও এরই মধ্যে খননকৃত নদীর পাড় ধসে যাচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা নদীতেই যাচ্ছে।
খননে অনিয়মের কথা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ছোট যমুনা পুনঃখননে কোনোরকম অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১-এর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে সারা দেশে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায় দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে) ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদীর ১৫ দশমিক ৯০ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে খননকাজ শুরু করে ৩০ মের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, কিন্তু কাজের যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া তলদেশে ২৮ ফুট ও উপরের অংশে ৮০-১০০ ফুট প্রশস্ত রেখে খনন করতে হবে।
এ ব্যাপারে ছোট যমুনা নদীসংলগ্ন দুদলী গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম, সোহেল হোসেন বলেন, যমুনা নদী পুনঃখনন করে সরু খালে পরিণত করা হচ্ছে। তাদের দাবি, আগে নদীর আকার যতটুকু ছিল বর্তমানে তার ৪ ভাগের ১ ভাগও খনন করা হচ্ছে না। সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে ছোট যমুনা পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে তা পূরণ হবে না। নদীর তলদেশের পলিমাটি তুলে উপরে রাখা হচ্ছে, যা কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় নদীগর্ভে ধসে পড়বে। এভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় মথুরাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বলেন, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে চরম অনিয়ম হচ্ছে। এভাবে খননকাজ সম্পন্ন করা হলে সরকারের টাকার অপচয় হবে। প্রয়োজনে এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ করা হবে।
নদী বাঁচাও আন্দোলন নেতা অধ্যক্ষ আশেক-ইলাহী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ছোট যমুনা নদী খননে চরম অনিয়ম করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে দায়সারা গোছের খনন করছে, যা এলাকার মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। যেভাবে খনন করলে নদী জোয়ারভাটা বা নাব্যতা ফিরে পাবে তা হচ্ছে না। এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ ফুট গভীর করে কোনো ভরাট নদী খনন করা হলে তাতে কি নাব্যতা ফিরে পাবে ? শুধু সরকারের টাকা নষ্ট করা ছাড়া কোনো কাজে আসবে না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী বলেন, ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়নি। তবে নদীপাড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, যা উচ্ছেদ করার জন্য বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় নদী খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এসব স্থাপনার কারণে খননকৃত মাটি রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তার পরও খুব কষ্ট করে খনন করা হচ্ছে ছোট যমুনা নদী।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, নদী খনন কাজে ত্রুটি হয়েছে শুনেছি। তবে ?খননকাজে কোনো রকম অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। সিডিউল অনুযায়ী খননকাজ বুঝিয়ে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। আমি সদ্য সাতক্ষীরায় যোগদান করেছি। তার পরও খনন এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।