ধর্ষণ নির্যাতনের মামলা করতে গিয়ে জীবন বিপন্ন নারীর

প্রভাবশালী এক নারী ও অপর দুই ব্যক্তিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারী রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার ধলপুর কলেস্টার গলির কাজীরবাগ এলাকায় বাসিন্দা। নির্যাতিত ওই নারী গুলশান থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ গ্রহণ না করেই থানা থেকে বের করে দেয়। ঘটনার পর ২০ দিন অতিক্রম করেছে এখনও মামলা নেয়নি গুলশান থানা পুলিশ। অবশেষে ওই নারী পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।

আরও জানা গেছে, গুলশান থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর তদন্ত শাহীনূর রহমান তার লিখিত অভিযোগের কপি, ও নির্যাতিত নারীর ছবি মোবাইলে ধারণ করে আসামিদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে ওই নারী জানিয়েছেন। গুলশান থানা অভিযোগ গ্রহণ না করে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে প্রভাবশালী নারী ও ওপর দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। থানা থেকে ওই নারীর লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার ৬০/২২/এ ধলপুর কাজীরবাগস্থ কলেস্টর গলিতে ভাড়া থাকতেন। বর্তমানে জীবন নাশের আশঙ্কায় পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগকারী দাবি করেন।

তিনি লিখিত অভিযোগে বলেছেন, গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে গুলশানস্থ বাড়ি-১০, দূতাভাস রোড, বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের বাসিন্দা বিদিশা সিদ্দিকা -এর বাসায় ও তার ব্যক্তিগত কাজের সহযোগিতা করার জন্য দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে তিনি যান। এজন্য তাকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দেয়া হতো। এরপর নির্যাতিত ধর্ষিতা নারী আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন যে, দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে রাত ৮টা থেকে ৯টার পরে বিভিন্ন অজ্ঞাত পুরুষের সমাগম হয়। বিদিশা সিদ্দিকা, জনৈক অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তিসহ বিভিন্ন লোকজন নিয়ে পার্টি করতেন।

আর সেখানে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হতো। এ বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিদিশা সিদ্দিকা তাকে বলেন, তার সহযোগী বাসায় সন্ধা ৭টার দিকে আসবে। এরপর ঠিক সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তি সেখানে আসেন। তখন বিদিশা সিদ্দিকার হুকুমে সেই ব্যক্তি বাসার রুমের সব সিসি ক্যামেরার সংযোগ খুলে ফেলেন। পরে অজ্ঞাতনামা আরও ২ জন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন। এরপর তারা জোরপূর্বক ওই নারীর গায়ে হাত দেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে তার সহযোগী ব্যক্তি ওই নারীকে চর থাপ্পর মারতে থাকেন এবং টেনে হিঁচড়ে বেডরুমের দিকে নিয়ে যায়।

পরে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রথমে মনজুর মোরশেদ নামের এক ব্যক্তি তাকে বিবস্ত্র করে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর অজ্ঞাতনামা অপর দুই ব্যক্তিও তাকে জোর পূর্বক সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদিশা সিদ্দিকা তাকে ধর্ষণের পুরো ভিডিওটি ধারণ করেন। একপর্যায়ে তারা ওই নারীর মুখ বন্ধ করে রাখতে বলে এবং তারা যা বলবে তাই করতে বলা হয়। এরপর ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়।

নারীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ভয় পেয়ে তার বাসায় চলে আসেন এবং তিনি বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন। পরে গত ২৪ মার্চ আনুমানিক রাত ৯টার দিকে মনজুর মোরশেদ ওই নারীর টিকাটুলিস্থ বাসায় গিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় বিদিশা সিদ্দিকা তার কাছে জানতে চান তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে কেন। এ সময় তার হাতের মোবাইল ফোন থেকে ওই নারীকে ধর্ষণের ভিডিও দেখানো হয়। আর তাকে জানানো হয় যে, ভিডিওটি তার স্বামীকে দেখিয়ে ৩ সন্তানসহ সংসার ভেঙে দিবে।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল করার হুমকি দেয়। এ সময় পুনরায় মনজুর মোরশেদ ওই নারীকে আগের সেই রুমে নিয়ে তাকে পুনরায় জোর পূর্বক ধর্ষণ করা হয়। আর বিদিশা সিদ্দিক অপর অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে ফোন করে ডেকে আনেন। তারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে পুনরায় ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে তাকে তাদের কথামতো চলতে হবে এবং হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। পরবর্তীতে তিনি বাসায় এসে তার স্বামী ও পরিবারকে ঘটনাটি জানান। আর বিদিশা সিদ্দিকা ও মনজুর মোরশেদের ভয়ে তিনি ও তার স্বামীসহ বাসা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

নির্যাতন ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণের ভিডিও ডিজিটাল ডিভাইসে ধারণ করে ভয়ভীতি দেখানের অভিযোগে গত ২৭ এপ্রিল গুলশান থানায় বিদিশা সিদ্দিকাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। যা থানার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও ডিউটি অফিসার তার অভিযোগটি গ্রহণ না করেই অভিযোগের কপি মোবাইলে ধারণ করেন। আর তার ছবি ধারণ করে বিদিশা সিদ্দিকার কাছে প্রেরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন। পরে সেখান থেকে ফোন আসার পর তাকে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে গতকাল গুলশান থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনূর বলেন, আলোচিত বিষয়ে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। কিন্তু গুলশান থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত শাহিনূর নির্যাতিত ধর্ষিতা নারীর কাছে থেকে স্বাক্ষর নিয়ে লিখিত অভিযোগটি নিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দেয়ার ছবি ও ভিডিও আছে। পরে গুলশান জোনের উপ পুলিশ কমিশনার এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি।

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

ধর্ষণ নির্যাতনের মামলা করতে গিয়ে জীবন বিপন্ন নারীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রভাবশালী এক নারী ও অপর দুই ব্যক্তিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারী রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার ধলপুর কলেস্টার গলির কাজীরবাগ এলাকায় বাসিন্দা। নির্যাতিত ওই নারী গুলশান থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ গ্রহণ না করেই থানা থেকে বের করে দেয়। ঘটনার পর ২০ দিন অতিক্রম করেছে এখনও মামলা নেয়নি গুলশান থানা পুলিশ। অবশেষে ওই নারী পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।

আরও জানা গেছে, গুলশান থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর তদন্ত শাহীনূর রহমান তার লিখিত অভিযোগের কপি, ও নির্যাতিত নারীর ছবি মোবাইলে ধারণ করে আসামিদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে ওই নারী জানিয়েছেন। গুলশান থানা অভিযোগ গ্রহণ না করে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে প্রভাবশালী নারী ও ওপর দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। থানা থেকে ওই নারীর লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার ৬০/২২/এ ধলপুর কাজীরবাগস্থ কলেস্টর গলিতে ভাড়া থাকতেন। বর্তমানে জীবন নাশের আশঙ্কায় পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগকারী দাবি করেন।

তিনি লিখিত অভিযোগে বলেছেন, গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে গুলশানস্থ বাড়ি-১০, দূতাভাস রোড, বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের বাসিন্দা বিদিশা সিদ্দিকা -এর বাসায় ও তার ব্যক্তিগত কাজের সহযোগিতা করার জন্য দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে তিনি যান। এজন্য তাকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দেয়া হতো। এরপর নির্যাতিত ধর্ষিতা নারী আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন যে, দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে রাত ৮টা থেকে ৯টার পরে বিভিন্ন অজ্ঞাত পুরুষের সমাগম হয়। বিদিশা সিদ্দিকা, জনৈক অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তিসহ বিভিন্ন লোকজন নিয়ে পার্টি করতেন।

আর সেখানে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হতো। এ বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিদিশা সিদ্দিকা তাকে বলেন, তার সহযোগী বাসায় সন্ধা ৭টার দিকে আসবে। এরপর ঠিক সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তি সেখানে আসেন। তখন বিদিশা সিদ্দিকার হুকুমে সেই ব্যক্তি বাসার রুমের সব সিসি ক্যামেরার সংযোগ খুলে ফেলেন। পরে অজ্ঞাতনামা আরও ২ জন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন। এরপর তারা জোরপূর্বক ওই নারীর গায়ে হাত দেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে তার সহযোগী ব্যক্তি ওই নারীকে চর থাপ্পর মারতে থাকেন এবং টেনে হিঁচড়ে বেডরুমের দিকে নিয়ে যায়।

পরে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রথমে মনজুর মোরশেদ নামের এক ব্যক্তি তাকে বিবস্ত্র করে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর অজ্ঞাতনামা অপর দুই ব্যক্তিও তাকে জোর পূর্বক সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদিশা সিদ্দিকা তাকে ধর্ষণের পুরো ভিডিওটি ধারণ করেন। একপর্যায়ে তারা ওই নারীর মুখ বন্ধ করে রাখতে বলে এবং তারা যা বলবে তাই করতে বলা হয়। এরপর ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়।

নারীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ভয় পেয়ে তার বাসায় চলে আসেন এবং তিনি বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন। পরে গত ২৪ মার্চ আনুমানিক রাত ৯টার দিকে মনজুর মোরশেদ ওই নারীর টিকাটুলিস্থ বাসায় গিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় বিদিশা সিদ্দিকা তার কাছে জানতে চান তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে কেন। এ সময় তার হাতের মোবাইল ফোন থেকে ওই নারীকে ধর্ষণের ভিডিও দেখানো হয়। আর তাকে জানানো হয় যে, ভিডিওটি তার স্বামীকে দেখিয়ে ৩ সন্তানসহ সংসার ভেঙে দিবে।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল করার হুমকি দেয়। এ সময় পুনরায় মনজুর মোরশেদ ওই নারীকে আগের সেই রুমে নিয়ে তাকে পুনরায় জোর পূর্বক ধর্ষণ করা হয়। আর বিদিশা সিদ্দিক অপর অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে ফোন করে ডেকে আনেন। তারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে পুনরায় ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে তাকে তাদের কথামতো চলতে হবে এবং হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। পরবর্তীতে তিনি বাসায় এসে তার স্বামী ও পরিবারকে ঘটনাটি জানান। আর বিদিশা সিদ্দিকা ও মনজুর মোরশেদের ভয়ে তিনি ও তার স্বামীসহ বাসা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

নির্যাতন ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণের ভিডিও ডিজিটাল ডিভাইসে ধারণ করে ভয়ভীতি দেখানের অভিযোগে গত ২৭ এপ্রিল গুলশান থানায় বিদিশা সিদ্দিকাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। যা থানার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও ডিউটি অফিসার তার অভিযোগটি গ্রহণ না করেই অভিযোগের কপি মোবাইলে ধারণ করেন। আর তার ছবি ধারণ করে বিদিশা সিদ্দিকার কাছে প্রেরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন। পরে সেখান থেকে ফোন আসার পর তাকে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে গতকাল গুলশান থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনূর বলেন, আলোচিত বিষয়ে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। কিন্তু গুলশান থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত শাহিনূর নির্যাতিত ধর্ষিতা নারীর কাছে থেকে স্বাক্ষর নিয়ে লিখিত অভিযোগটি নিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দেয়ার ছবি ও ভিডিও আছে। পরে গুলশান জোনের উপ পুলিশ কমিশনার এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি।