বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

সরকারের পদত্যাগ, গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শুরু হয়। এতে খুলনায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে, আহত ১৫ এবং ফেনীতে আ.লীগের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

খুলনায় পুলিশ-বিএনপি

সংঘর্ষে আহত ১৫

খুলনা নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পদত্যাগ, গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল দুপুরে নগরের প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করে বিএনপি। সমাবেশে আসা মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর তাদেরকে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। দিঘলিয়া সেনাটি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান, খালিশপুর বিএনপির নেতা রিপন, যুবদল নেতা জাহিদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ এবং অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

তবে পুলিশ বলছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

খুলনা নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরে প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলের ভেতরে বিএনপির কর্মীসভা ছিল। রাস্তায় কোন কর্মসূচির অনুমতি বিএনপির ছিল না। সেখানে বিকেলে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এলে দলের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে সড়কের ওপর বসে পড়েন। এ সময় পুলিশ একটু পিছিয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। সিলেটে পুলিশি বাধায়

বিএনপির সমাবেশ

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির জনসমাবেশ বেলা তিনটার দিকে শুরুর প্রস্তুতি নিলেও সেখানে পুলিশের বাধার মুখে পরে সমাবেশটি। পরে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হন নেতাকর্মীরা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন।

তবে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদিপ দাশ বলেন, ? খোলা কোন জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি নেই। এজন্য তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দূর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা বাস্তবায়নে আমাদের এই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। তবে আমাদের এই আন্দোলনকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। রেজিস্ট্রারি মাঠ দখল করেছে পুলিশ আর সিলেট দখল করেছে বিএনপি।

ফেনীতে আ.লীগের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত

ফেনীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে দলটি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলাব্যাপী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আগের দিন রাত থেকেই হামলা চালিয়েছে। হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দুই শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। এদিকে এসব হামলা ও অভিযোগের বিষয়ে ফেনী জেলা পুলিশ ও অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফেনী সদর হাসপাতালে আসা আহতরা হলেন পরশুরাম উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শাকিল, ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছির আরাফাত, মোটবি ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি বাদল, যুবদল নেতা ইয়াসিন, মাসুম, ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা হৃদয়, ওমর প্রমুখ। গুরুতর আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান, গতকালের ঘোষিত জনসভায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম করার প্রস্তুতি ছিল বিএনপির। ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচি হিসেবে ফেনী জেলা বিএনপির জনসভা নির্ধারণ রয়েছে। তারা ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসভা করতে চাইলেও প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। বাধ্য হয়ে ইসলামপুর রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগামী শুক্রবার আমরা জনসভা করব। জনসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তিনি আরও জানান, হামলা-মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যাবে না।

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

খুলনা : পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

সরকারের পদত্যাগ, গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শুরু হয়। এতে খুলনায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে, আহত ১৫ এবং ফেনীতে আ.লীগের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

খুলনায় পুলিশ-বিএনপি

সংঘর্ষে আহত ১৫

খুলনা নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পদত্যাগ, গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল দুপুরে নগরের প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করে বিএনপি। সমাবেশে আসা মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর তাদেরকে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। দিঘলিয়া সেনাটি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান, খালিশপুর বিএনপির নেতা রিপন, যুবদল নেতা জাহিদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ এবং অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

তবে পুলিশ বলছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

খুলনা নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরে প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলের ভেতরে বিএনপির কর্মীসভা ছিল। রাস্তায় কোন কর্মসূচির অনুমতি বিএনপির ছিল না। সেখানে বিকেলে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এলে দলের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে সড়কের ওপর বসে পড়েন। এ সময় পুলিশ একটু পিছিয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। সিলেটে পুলিশি বাধায়

বিএনপির সমাবেশ

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির জনসমাবেশ বেলা তিনটার দিকে শুরুর প্রস্তুতি নিলেও সেখানে পুলিশের বাধার মুখে পরে সমাবেশটি। পরে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হন নেতাকর্মীরা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন।

তবে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদিপ দাশ বলেন, ? খোলা কোন জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি নেই। এজন্য তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দূর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা বাস্তবায়নে আমাদের এই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। তবে আমাদের এই আন্দোলনকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। রেজিস্ট্রারি মাঠ দখল করেছে পুলিশ আর সিলেট দখল করেছে বিএনপি।

ফেনীতে আ.লীগের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত

ফেনীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে দলটি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলাব্যাপী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আগের দিন রাত থেকেই হামলা চালিয়েছে। হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দুই শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। এদিকে এসব হামলা ও অভিযোগের বিষয়ে ফেনী জেলা পুলিশ ও অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফেনী সদর হাসপাতালে আসা আহতরা হলেন পরশুরাম উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শাকিল, ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছির আরাফাত, মোটবি ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি বাদল, যুবদল নেতা ইয়াসিন, মাসুম, ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা হৃদয়, ওমর প্রমুখ। গুরুতর আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান, গতকালের ঘোষিত জনসভায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম করার প্রস্তুতি ছিল বিএনপির। ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচি হিসেবে ফেনী জেলা বিএনপির জনসভা নির্ধারণ রয়েছে। তারা ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসভা করতে চাইলেও প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। বাধ্য হয়ে ইসলামপুর রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগামী শুক্রবার আমরা জনসভা করব। জনসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তিনি আরও জানান, হামলা-মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যাবে না।