কুমিল্লায় মসজিদের সামনে আ’লীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা

মাদক সেবনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়া ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে কুমিল্লায় এনামুল হক (৩৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মসজিদের সামনে গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল জুম্মার নামাজ শেষে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দূর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের আলেখারচর এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত এনামুল হক আলেখারচর গ্রামের আবদুল ওয়াদুদের ছেলে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় নিহতের স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। গতকাল রাত পৌনে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। আজ নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল জুম্মার নামাজ শেষে এনামুল হক মসজিদ থেকে বের হলে ব্যবসায়ী কাজী জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন এনামুলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। একপর্যায়ে এনামুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পাশের একটি দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে তার গলা ও ডান হাতের রগ কেটে দেয়া হয়। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ময়নামতি জেনারেল হাসপাতাল, পরে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি দেখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকেল ৩টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জানান, এনামুল হকের গলা ও হাতের রগ কাটা ছিল। হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাভেল সাংবাদিকদের জানান, এনামুলের সঙ্গে স্থানীয় কাজী জহির ও তার লোকজনের বিরোধ চলছিল। এছাড়া এনামুলের প্রতিষ্ঠিত আলেখারচর দক্ষিণপাড়া জমিরিয়া তালিমুল হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার দখল নিয়ে কাজী জহিরদের বিরোধ চলে আসছিল। এ মাদ্রাসার সেক্রেটারি ছিলেন এনামুল। কাজী জহির ও তার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এ মাদ্রাসাটি দখলের চেষ্টা করে আসছিল। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে এটি একটি কারণ হতে পারে।

হত্যাকাণ্ডের পর সরেজমিন এলাকায় গিয়ে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, নিহত এনামুল আত্মরক্ষার্থে মসজিদের পাশে যে বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন, সে বাড়ির ওঠানে জমাটবাঁধা রক্ত পড়ে আছে। ঘটনাস্থল ও নিহতের বাড়ির সামনে মোতায়েন করা আছে পুলিশ। বাড়িজুড়ে স্বজনদের আহাজারি। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠেছে এলাকার পরিবেশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, গত বৃহস্পতিবার কাজী জহিরের মাদক সেবন ও জুয়া খেলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এর জন্য সে (কাজী জহির) এনামুলকে দায়ী করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কাজী জহিরের উপস্থিতিতে তার লোকজন এনামুলের গলা ও হাতের রগ কেটে আহত করলে সে হাসপাতালে মারা যায়। নিহতের পরিবার কাজী জহিরকে জামায়াতকর্মী বলে দাবি করেছেন। তবে সে একজন রোটারিয়ান এবং ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। নিহতের মা আমেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলের কোন অপরাধ ছিল না, তাকে কেন এভাবে মরতে হলো। পশুর ন্যায় আমার ছেলের গলা কেটে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।’ এদিকে অবুঝ দুই ছেলেকে বুকে নিয়ে ঘরের মধ্যে কান্না করছেন নিহতের স্ত্রী শান্তা আক্তার। জানতে চাইলে শান্তা আক্তার বলেন, স্থানীয় আমানুল্লাহ ও কাজী জহিরের সঙ্গে পূর্ব বিরোধ ছিল। এর আগেও তাকে আমানুল্লাহ হত্যার চেষ্টা করেছিল। গতকাল আমানুল্লাহসহ অন্যরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। এদিকে খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে যান কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কামরান হোসেন, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

সন্ধ্যায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জনান, মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল করা কিংবা একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এনামুলকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর বাইরে অন্য কোন কারণ আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। সহসাই জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

কুমিল্লায় মসজিদের সামনে আ’লীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

মাদক সেবনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়া ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে কুমিল্লায় এনামুল হক (৩৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মসজিদের সামনে গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল জুম্মার নামাজ শেষে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দূর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের আলেখারচর এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত এনামুল হক আলেখারচর গ্রামের আবদুল ওয়াদুদের ছেলে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় নিহতের স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। গতকাল রাত পৌনে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। আজ নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল জুম্মার নামাজ শেষে এনামুল হক মসজিদ থেকে বের হলে ব্যবসায়ী কাজী জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন এনামুলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। একপর্যায়ে এনামুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পাশের একটি দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে তার গলা ও ডান হাতের রগ কেটে দেয়া হয়। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ময়নামতি জেনারেল হাসপাতাল, পরে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি দেখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকেল ৩টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জানান, এনামুল হকের গলা ও হাতের রগ কাটা ছিল। হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাভেল সাংবাদিকদের জানান, এনামুলের সঙ্গে স্থানীয় কাজী জহির ও তার লোকজনের বিরোধ চলছিল। এছাড়া এনামুলের প্রতিষ্ঠিত আলেখারচর দক্ষিণপাড়া জমিরিয়া তালিমুল হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার দখল নিয়ে কাজী জহিরদের বিরোধ চলে আসছিল। এ মাদ্রাসার সেক্রেটারি ছিলেন এনামুল। কাজী জহির ও তার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এ মাদ্রাসাটি দখলের চেষ্টা করে আসছিল। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে এটি একটি কারণ হতে পারে।

হত্যাকাণ্ডের পর সরেজমিন এলাকায় গিয়ে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, নিহত এনামুল আত্মরক্ষার্থে মসজিদের পাশে যে বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন, সে বাড়ির ওঠানে জমাটবাঁধা রক্ত পড়ে আছে। ঘটনাস্থল ও নিহতের বাড়ির সামনে মোতায়েন করা আছে পুলিশ। বাড়িজুড়ে স্বজনদের আহাজারি। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠেছে এলাকার পরিবেশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, গত বৃহস্পতিবার কাজী জহিরের মাদক সেবন ও জুয়া খেলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এর জন্য সে (কাজী জহির) এনামুলকে দায়ী করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কাজী জহিরের উপস্থিতিতে তার লোকজন এনামুলের গলা ও হাতের রগ কেটে আহত করলে সে হাসপাতালে মারা যায়। নিহতের পরিবার কাজী জহিরকে জামায়াতকর্মী বলে দাবি করেছেন। তবে সে একজন রোটারিয়ান এবং ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। নিহতের মা আমেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলের কোন অপরাধ ছিল না, তাকে কেন এভাবে মরতে হলো। পশুর ন্যায় আমার ছেলের গলা কেটে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।’ এদিকে অবুঝ দুই ছেলেকে বুকে নিয়ে ঘরের মধ্যে কান্না করছেন নিহতের স্ত্রী শান্তা আক্তার। জানতে চাইলে শান্তা আক্তার বলেন, স্থানীয় আমানুল্লাহ ও কাজী জহিরের সঙ্গে পূর্ব বিরোধ ছিল। এর আগেও তাকে আমানুল্লাহ হত্যার চেষ্টা করেছিল। গতকাল আমানুল্লাহসহ অন্যরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। এদিকে খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে যান কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কামরান হোসেন, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

সন্ধ্যায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জনান, মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল করা কিংবা একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এনামুলকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর বাইরে অন্য কোন কারণ আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। সহসাই জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।