অপরিপক্ব লিচুতে বাজার সয়লাব, ‘স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’

সাধারণত মে মাসের শেষ দিক থেকে জুন পর্যন্ত লাল রঙে আচ্ছাদিত থাকে দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলো। তবে এবার মৌসুম শুরুর আগেই দিনাজপুরের বাজারে উঠেছে অপরিপক্ব লিচু। বেশি দামের আশায় পরিপক্ব হয়ে ওঠার আগেই এসব লিচু বিত্রেুতারা বাজারে তুলেছেন। ত্রেুতারা আগ্রহের সঙ্গে কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কোনভাবেই শিশুদের হাতে দেয়া যাবে না। এসব লিচু খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌসুমি ফলের (আম-লিচু-কাঁঠাল) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মে মাসের ২০ তারিখের পর বাজারে আসবে মাদ্রাজি লিচু। জুন মাসের ১০ তারিখের পর বাজারে আসবে বেদানা জাতের লিচু, ২০ জুনের পর বোম্বে এবং এরপরের সপ্তাহে চায়না থ্রি লিচু বাজারে আসবে। সবশেষে বাজারে আসবে কাঁঠালি ও মোজাফ্ফর জাতের লিচু।

অথচ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাজারে উঠেছে লিচু। ইতোমধ্যে শহরে ফল মার্কেট কালিতলা, বাহাদুর বাজার ও হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মাদ্রাজি জাত বলে এসব লিচুর শ’ ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এসব লিচুর স্বাদ যারা নিয়েছেন কিংবা খেয়েছেন তারা বলছেন, এখনও টক। মিষ্টতা আসেনি। লিচুর শরীরে মাংস ভরাট ও পর্যাপ্ত রস হয়নি। তবু নতুন ফল হিসেবে অনেকে কিনছেন।

হকার্স মার্কেটের সামনে দেখা গেছে, সাদা ও লালচে লিচু নিয়ে বসেছেন কয়েকজন ফল বিক্রেতা। দিনাজপুরের লিচু, মিষ্টতায় ভরপুর, দাম মাত্র আড়াইশ টাকা। এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।

কথা হয় রানা আহমেদ নামের এক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নতুন ফল বাজারে উঠেছে। তাই দাম বেশি। কেউ কেউ কিনছেন, অনেকে কিনছেন না।’

এবার এক সপ্তাহ আগে লিচু পেকেছে দাবি করে এই বিক্রেতা বলেন, ‘বৃষ্টি নেই, প্রচণ্ড রোদ। এই তাপে লিচু পেকেছে। ১০০ লিচু ২২০-২৫০ টাকা বিক্রি করছি। তিন ঝুড়ি ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বিক্রি হবে। এ ছাড়া অনেকে ঢাকা, সিলেট, রংপুর ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে লিচু পাঠাচ্ছেন।’

সফিকুল ইসলাম নামে এক লিচু ক্রেতা বলেন, ‘নতুন ফল বাজারে উঠেছে, তাই ৫০টি কিনলাম ১২৫ টাকায়। খেয়ে দেখেছি, টক। টক হলেও সমস্যা নেই, ভিটামিন সি। পরিবারের সবাই খাবে, খুশি হবে। এটি অপরিপক্ব কি না তা আমার জানা নেই।’

দাম একটু বেশি তবু নতুন ফল দেখে কিনলাম উল্লেখ করে আলাল মিয়া বলেন, ‘এসব লিচু সাদা ও লালচে। দেখে মনে হচ্ছে পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি।’

দামাদামি করেও বেশি হওয়ায় কেনেননি শহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ক্ষতি কতটুকু জানি না। যদি বিষ না দিয়ে থাকে তাহলে তেমন ক্ষতি নেই। দাম বেশি, এজন্য কিনিনি। আরও কয়েকদিন পর কিনব।’

বাহাদুর বাজার এলাকার রিপন ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. রিপন বলেন, ‘এখনও স্থানীয় লিচু পাকেনি। তবে কিছু লিচু বাজারে আসছে। দামও বেশি। আমরা ১৯০ টাকায় শ’ কিনে বিক্রি করছি ২২০-২৫০ টাকায়। তবে লিচু বাজারে ওঠার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। মাদ্রাজি লিচু বাজারে উঠেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বেদানা লিচু বাজারে আসবে।’

বাগান থেকে লিচু নিয়ে এসেছি দাবি করে বাহাদুর বাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার বাগানে ফল কম। তবে চাহিদা আছে। সামনে আরও দাম বাড়বে। আবহাওয়ার কারণে এবার আগেভাগেই লিচু পেকেছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি পাকবে। লিচুতে ফরমালিন কিংবা কীটনাশক দেয়া হয় না। তবে বাজারে আসা লিচুতে মিষ্টতা কম, একটু টক। কয়েকদিন পর আর টক লাগবে না, পাকলে পুরোপুরি মিষ্টি হবে।’

অপরিপক্ব লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘অপরিপক্ব লিচুতে এক প্রকার এনজাইম থাকে। এনজাইমের কারণে পেটব্যথা, মাথাব্যথা ও যে কেউ অসুস্থ হতে পারে। খালি পেটে বেশি খেলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই অপরিপক্ব লিচু না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে শিশুদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।’

এ বছর ১৩ হাজার ৯শ’ ৯১টি বাগানে ৫ হাজার ৪শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান। গত বছর জেলায় ৩৫ হাজার মেট্রিকটন লিচুর ফলন পাওয়া গেলেও এ বছর লিচুর কিছুটা কম হবে। তিনি বলেন, ‘আরও এক সপ্তাহ পর লিচু পাকবে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেচ দিতে বলেছি চাষিদের। এখন বাজারে ওঠা লিচু অপরিপক্ব। না খাওয়াই উত্তম।’

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

অপরিপক্ব লিচুতে বাজার সয়লাব, ‘স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’

চিত্ত ঘোষ, দিনাজপুর

image

সাধারণত মে মাসের শেষ দিক থেকে জুন পর্যন্ত লাল রঙে আচ্ছাদিত থাকে দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলো। তবে এবার মৌসুম শুরুর আগেই দিনাজপুরের বাজারে উঠেছে অপরিপক্ব লিচু। বেশি দামের আশায় পরিপক্ব হয়ে ওঠার আগেই এসব লিচু বিত্রেুতারা বাজারে তুলেছেন। ত্রেুতারা আগ্রহের সঙ্গে কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কোনভাবেই শিশুদের হাতে দেয়া যাবে না। এসব লিচু খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌসুমি ফলের (আম-লিচু-কাঁঠাল) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মে মাসের ২০ তারিখের পর বাজারে আসবে মাদ্রাজি লিচু। জুন মাসের ১০ তারিখের পর বাজারে আসবে বেদানা জাতের লিচু, ২০ জুনের পর বোম্বে এবং এরপরের সপ্তাহে চায়না থ্রি লিচু বাজারে আসবে। সবশেষে বাজারে আসবে কাঁঠালি ও মোজাফ্ফর জাতের লিচু।

অথচ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাজারে উঠেছে লিচু। ইতোমধ্যে শহরে ফল মার্কেট কালিতলা, বাহাদুর বাজার ও হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মাদ্রাজি জাত বলে এসব লিচুর শ’ ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এসব লিচুর স্বাদ যারা নিয়েছেন কিংবা খেয়েছেন তারা বলছেন, এখনও টক। মিষ্টতা আসেনি। লিচুর শরীরে মাংস ভরাট ও পর্যাপ্ত রস হয়নি। তবু নতুন ফল হিসেবে অনেকে কিনছেন।

হকার্স মার্কেটের সামনে দেখা গেছে, সাদা ও লালচে লিচু নিয়ে বসেছেন কয়েকজন ফল বিক্রেতা। দিনাজপুরের লিচু, মিষ্টতায় ভরপুর, দাম মাত্র আড়াইশ টাকা। এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।

কথা হয় রানা আহমেদ নামের এক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নতুন ফল বাজারে উঠেছে। তাই দাম বেশি। কেউ কেউ কিনছেন, অনেকে কিনছেন না।’

এবার এক সপ্তাহ আগে লিচু পেকেছে দাবি করে এই বিক্রেতা বলেন, ‘বৃষ্টি নেই, প্রচণ্ড রোদ। এই তাপে লিচু পেকেছে। ১০০ লিচু ২২০-২৫০ টাকা বিক্রি করছি। তিন ঝুড়ি ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বিক্রি হবে। এ ছাড়া অনেকে ঢাকা, সিলেট, রংপুর ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে লিচু পাঠাচ্ছেন।’

সফিকুল ইসলাম নামে এক লিচু ক্রেতা বলেন, ‘নতুন ফল বাজারে উঠেছে, তাই ৫০টি কিনলাম ১২৫ টাকায়। খেয়ে দেখেছি, টক। টক হলেও সমস্যা নেই, ভিটামিন সি। পরিবারের সবাই খাবে, খুশি হবে। এটি অপরিপক্ব কি না তা আমার জানা নেই।’

দাম একটু বেশি তবু নতুন ফল দেখে কিনলাম উল্লেখ করে আলাল মিয়া বলেন, ‘এসব লিচু সাদা ও লালচে। দেখে মনে হচ্ছে পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি।’

দামাদামি করেও বেশি হওয়ায় কেনেননি শহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ক্ষতি কতটুকু জানি না। যদি বিষ না দিয়ে থাকে তাহলে তেমন ক্ষতি নেই। দাম বেশি, এজন্য কিনিনি। আরও কয়েকদিন পর কিনব।’

বাহাদুর বাজার এলাকার রিপন ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. রিপন বলেন, ‘এখনও স্থানীয় লিচু পাকেনি। তবে কিছু লিচু বাজারে আসছে। দামও বেশি। আমরা ১৯০ টাকায় শ’ কিনে বিক্রি করছি ২২০-২৫০ টাকায়। তবে লিচু বাজারে ওঠার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। মাদ্রাজি লিচু বাজারে উঠেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বেদানা লিচু বাজারে আসবে।’

বাগান থেকে লিচু নিয়ে এসেছি দাবি করে বাহাদুর বাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার বাগানে ফল কম। তবে চাহিদা আছে। সামনে আরও দাম বাড়বে। আবহাওয়ার কারণে এবার আগেভাগেই লিচু পেকেছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি পাকবে। লিচুতে ফরমালিন কিংবা কীটনাশক দেয়া হয় না। তবে বাজারে আসা লিচুতে মিষ্টতা কম, একটু টক। কয়েকদিন পর আর টক লাগবে না, পাকলে পুরোপুরি মিষ্টি হবে।’

অপরিপক্ব লিচু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘অপরিপক্ব লিচুতে এক প্রকার এনজাইম থাকে। এনজাইমের কারণে পেটব্যথা, মাথাব্যথা ও যে কেউ অসুস্থ হতে পারে। খালি পেটে বেশি খেলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই অপরিপক্ব লিচু না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে শিশুদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।’

এ বছর ১৩ হাজার ৯শ’ ৯১টি বাগানে ৫ হাজার ৪শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান। গত বছর জেলায় ৩৫ হাজার মেট্রিকটন লিচুর ফলন পাওয়া গেলেও এ বছর লিচুর কিছুটা কম হবে। তিনি বলেন, ‘আরও এক সপ্তাহ পর লিচু পাকবে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেচ দিতে বলেছি চাষিদের। এখন বাজারে ওঠা লিচু অপরিপক্ব। না খাওয়াই উত্তম।’