বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের পথ অনুসরণ করা দরকার

‘শুধু রাজনীতিই নয় সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি তার কর্ম দিয়ে সব মহলের সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি রাজনীতিবিদের ব্রত কেমন হওয়া উচিত তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়েছেন। একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে তার পথ অনুসরণ করা দরকার।’

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি প্রয়াত পঙ্কজ ভট্টাচার্যের স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় এভাবেই স্মরণ করেন বক্তারা। গতকাল জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেসা মুজিব মিলনায়তনে আয়োজিত এই স্মরণসভায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আ?নোয়ার হো?সেন, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী ও মফিদুল হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, সাম্যবাদী দলের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, গণফোরামের (একাংশ) নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গণতন্ত্রী পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ডা. শহীদুল্লাহ্ শিকদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেমসহ বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাসহ পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শুভাকা?ঙ্খী এবং প?রিবা?রবর্গ অংশ নেন। সভায় অংশ নিয়ে নেতারা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

সভায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে খুব কম রাজনী?তি?বিদ আছেন যারা সবমহ?লের শ্রদ্ধা অর্জন কর?তে পে?রে?ছেন বা যা?কে সব মহল শ্রদ্ধা ক?রে। তেমনই একজন রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। একজন রাজনীতিবিদদের ব্রত কেমন হওয়া উচিত সেটার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। নতুন প্রজন্মের যারা রাজনীতি করে তাদের তাকে অনুসরণ করা প্রয়োজন।’

তিনি ব?লেন, ‘রাজ?নী?তি এক?টি ব্রত। রাজ?নী?তি প্রতিষ্ঠা লা?ভের সোপান নয়, রাজ?নীতি বিত্ত লা?ভের সোপান নয়। রাজ?নীতি মানু?ষের কল?্যা?ণের জন?্য একটি ব্রত। দুঃখ?জনক হ?লেও সত?্য সে?টি বে?শিরভাগ রাজনীতিবিদ ভুলে গেছেন। কিন্তু পঙ্কজ ভট্টাচার্য রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি যেটি বিশ্বাস করতেন সেটির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, লড়াই করে গেছেন। বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রধান ছিলেন। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ, সত্যিকারের রাজনীতিবিদ। আমি মনে করি এই ধরনের রাজনীতিবিদ আমাদের মাঝে থাকা প্রয়োজন।’

সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে রাজধানীর পোস্তগোলায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সমাধি সৌধ স্থাপনের জন্য তথ্যমন্ত্রীর সহযোগীতা কামনা করা হয়। এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে কথা বলব। আপনাদের পক্ষ থেকে কেউ যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এক্ষেত্রে আমার পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জীবনের ওপর যদি কোন গ্রন্থ রচিত হয়, একটি স্মারকগ্রন্থ যদি প্রকাশিত হয় তাহলে খুব ভালো হয়। তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের মানুষ আমাদের ছেলেমেয়েরা তাকে জানতে ও অনুসরণ করতে পারবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের সহযাত্রী ছিলাম। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সঙ্গে ছাত্র আন্দোলন যেমন করেছি আবার নিজেদেরে মধ্যে বিরোধও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, সেটি হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক দেশ গড়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য সমবেত করার চেষ্টা করেছেন। যাতে আমরা সেই পাকিস্তান আমলের সেই পুরোনো দিনগুলোর মতো এদেশের গণতান্তিক আন্দোলনকে, এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে, এ দেশের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনকে আমরা যেন পুনর্গঠিত করতে পারি। এ জন্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য ঐক্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন।’

অধ?্যাপক ড. সৈয়দ আ?নোয়ার হো?সেন বলেন, ‘ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক ছিলেন।’

মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘পঙ্কজ ভট্টাচার্য ইচ্ছে ছিল বৈষম্যহীন একটি সমাজ গঠন করা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত রেখে গেছেন।’ নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘তিনি অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের পথ দেখিয়ে গেছেন।’

কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার জন্য ভারত পাকিস্তানের গণতন্ত্র নষ্ট হয়েছে। আমাদের দেশেও নতুন ভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পঙ্কজ দার আরাধ্য কাজ করতে হলে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’

অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘সব মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্যের। কর্মজীবনে তার অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।’ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘পঙ্কজ ভট্টাচার্য আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন দেখতে চেয়েছিলেন। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে তার অবদান ও অভাব সারাজীবন মনে রাখবে আদিবাসী মানুষরা।’ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘পঙ্কজ দা আলাদা করে নারী আন্দোলনের কথা ভাবেননি। তিনি এ আন্দোলনকে মানব মুক্তির একটি অংশ হিসেবেই দেখতেন।’

৮৪ বছর বয়সে গত ২৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পঙ্কজ ভট্টাচার্য। পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী, সহযোদ্ধা, বন্ধু, স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। শহীদ মিনারে তাকে জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মানও। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পোস্তগোলার মহাশ্মশানে। সেখানে তার শেষকৃত্য হয়।

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের পথ অনুসরণ করা দরকার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

‘শুধু রাজনীতিই নয় সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি তার কর্ম দিয়ে সব মহলের সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি রাজনীতিবিদের ব্রত কেমন হওয়া উচিত তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়েছেন। একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে তার পথ অনুসরণ করা দরকার।’

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি প্রয়াত পঙ্কজ ভট্টাচার্যের স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় এভাবেই স্মরণ করেন বক্তারা। গতকাল জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেসা মুজিব মিলনায়তনে আয়োজিত এই স্মরণসভায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আ?নোয়ার হো?সেন, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী ও মফিদুল হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, সাম্যবাদী দলের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, গণফোরামের (একাংশ) নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গণতন্ত্রী পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ডা. শহীদুল্লাহ্ শিকদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেমসহ বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাসহ পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শুভাকা?ঙ্খী এবং প?রিবা?রবর্গ অংশ নেন। সভায় অংশ নিয়ে নেতারা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

সভায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে খুব কম রাজনী?তি?বিদ আছেন যারা সবমহ?লের শ্রদ্ধা অর্জন কর?তে পে?রে?ছেন বা যা?কে সব মহল শ্রদ্ধা ক?রে। তেমনই একজন রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। একজন রাজনীতিবিদদের ব্রত কেমন হওয়া উচিত সেটার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। নতুন প্রজন্মের যারা রাজনীতি করে তাদের তাকে অনুসরণ করা প্রয়োজন।’

তিনি ব?লেন, ‘রাজ?নী?তি এক?টি ব্রত। রাজ?নী?তি প্রতিষ্ঠা লা?ভের সোপান নয়, রাজ?নীতি বিত্ত লা?ভের সোপান নয়। রাজ?নীতি মানু?ষের কল?্যা?ণের জন?্য একটি ব্রত। দুঃখ?জনক হ?লেও সত?্য সে?টি বে?শিরভাগ রাজনীতিবিদ ভুলে গেছেন। কিন্তু পঙ্কজ ভট্টাচার্য রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি যেটি বিশ্বাস করতেন সেটির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, লড়াই করে গেছেন। বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রধান ছিলেন। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ, সত্যিকারের রাজনীতিবিদ। আমি মনে করি এই ধরনের রাজনীতিবিদ আমাদের মাঝে থাকা প্রয়োজন।’

সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে রাজধানীর পোস্তগোলায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সমাধি সৌধ স্থাপনের জন্য তথ্যমন্ত্রীর সহযোগীতা কামনা করা হয়। এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে কথা বলব। আপনাদের পক্ষ থেকে কেউ যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এক্ষেত্রে আমার পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জীবনের ওপর যদি কোন গ্রন্থ রচিত হয়, একটি স্মারকগ্রন্থ যদি প্রকাশিত হয় তাহলে খুব ভালো হয়। তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের মানুষ আমাদের ছেলেমেয়েরা তাকে জানতে ও অনুসরণ করতে পারবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের সহযাত্রী ছিলাম। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সঙ্গে ছাত্র আন্দোলন যেমন করেছি আবার নিজেদেরে মধ্যে বিরোধও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, সেটি হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক দেশ গড়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য সমবেত করার চেষ্টা করেছেন। যাতে আমরা সেই পাকিস্তান আমলের সেই পুরোনো দিনগুলোর মতো এদেশের গণতান্তিক আন্দোলনকে, এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে, এ দেশের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনকে আমরা যেন পুনর্গঠিত করতে পারি। এ জন্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য ঐক্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন।’

অধ?্যাপক ড. সৈয়দ আ?নোয়ার হো?সেন বলেন, ‘ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক ছিলেন।’

মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘পঙ্কজ ভট্টাচার্য ইচ্ছে ছিল বৈষম্যহীন একটি সমাজ গঠন করা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত রেখে গেছেন।’ নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘তিনি অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের পথ দেখিয়ে গেছেন।’

কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার জন্য ভারত পাকিস্তানের গণতন্ত্র নষ্ট হয়েছে। আমাদের দেশেও নতুন ভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পঙ্কজ দার আরাধ্য কাজ করতে হলে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’

অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘সব মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্যের। কর্মজীবনে তার অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।’ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘পঙ্কজ ভট্টাচার্য আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন দেখতে চেয়েছিলেন। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে তার অবদান ও অভাব সারাজীবন মনে রাখবে আদিবাসী মানুষরা।’ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘পঙ্কজ দা আলাদা করে নারী আন্দোলনের কথা ভাবেননি। তিনি এ আন্দোলনকে মানব মুক্তির একটি অংশ হিসেবেই দেখতেন।’

৮৪ বছর বয়সে গত ২৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পঙ্কজ ভট্টাচার্য। পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী, সহযোদ্ধা, বন্ধু, স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। শহীদ মিনারে তাকে জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মানও। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পোস্তগোলার মহাশ্মশানে। সেখানে তার শেষকৃত্য হয়।