মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবে ঘটছে ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব চলছে। একের পর এক অভিযানের পরও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য থামছে না। তুচ্ছ কারণে তারা খুনাখুনিতেও জড়িয়ে পড়ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে কিশোর-তরুণরা আন্ডারওয়ার্ল্ডে নাম লেখাচ্ছে। এছাড়া তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

কিশোরগ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, এলাকায় অহরহ ঘটছে ছিনতাই, চাঁদাবাজী, দিনে-দুপুরে জমি বা স্থাপনা দখল ও সিনিয়র-জুনিয়রের দ্বন্দ্বে মারামারি। স্কুল পড়ুয়া কিশোররাও বিভিন্ন গণ পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছে। এমনকি খুনাখুনিও হচ্ছে। গতমাসেও (এপ্রিল মাস) কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে লেগুনার লাইনম্যান মোহাম্মদ নবী হোসেন। গণ পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, গোটা মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন গণ পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছে কিশোর গ্যাংরা। তাদের চাহিদা মতো চাঁদা না দিলেই হামলা, ভাংচুরসহ নানা হুমকি ধামকি চলে। এছাড়া ফুটপাতের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, জমিদখল আর কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজীর নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাদল ওরফে কিলার বাদল। ১৯৯৯ সালে কাটাসুরে ডিস ব্যবসায়ী ইকবালকে হত্যার মধ্য দিয়ে কিলিং মিশন শুরু হয় তার। এরপর একই এলাকার বাবুল নামে একজন, ২০০২ সালে ওয়ার্ড কমিশনার রাজু হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় সে। ২০০৩ সালে ব্রাশ ফায়ারে দুটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সে। আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের মস্টারমাইন্ড সে। বাদলের এই অপরাধ সাম্রাজ্যর সঙ্গে আছে কাইল্যা সুমন, লালু, তাজেল গাজী, হালিম, গ্যারেজ সোহেল, লটারি জসিম, ঘাট বাবু, ক্যাশিয়ার শাহজাহানসহ আরও অনেকে।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, রাজধানীর অপরাধ জোনগুলোর মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকা। এ এলাকার ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বাড়ি দখল, জমি দখলে একাধিক বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এসব বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য কিশোর। তারা মাদক ব্যাবসা ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা তাদের মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্তত সাতটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দে ও ঝিরঝির গ্রুপ নামের গ্যাং। বিভিন্ন সময় মোহাম্মদপুর থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের জুনে বিভিন্ন গ্যাংয়ের ২২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মাদকসেবন, মাদক ব্যাবসা, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ২২ জনের মধ্যে আটজন বিভিন্ন গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা পড়ালেখা করে না। এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত তাদের কয়েকজন খুবই দুর্ধর্ষ।

এবিষয়ে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের কাছে বেশ কিছু গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, মোহাম্মদপুরে অস্ত্রধারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপরাধ তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের ধরার জন্য আমরা গোয়েন্দা নজরদারী চালাচ্ছি।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের ডিসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, সন্ত্রাসী বাদলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সে পলাতক রয়েছে। তাকে ও তার বাহিনীর সদস্যদের ধরার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর পরও সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছে।

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৪

মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবে ঘটছে ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব চলছে। একের পর এক অভিযানের পরও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য থামছে না। তুচ্ছ কারণে তারা খুনাখুনিতেও জড়িয়ে পড়ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে কিশোর-তরুণরা আন্ডারওয়ার্ল্ডে নাম লেখাচ্ছে। এছাড়া তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

কিশোরগ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, এলাকায় অহরহ ঘটছে ছিনতাই, চাঁদাবাজী, দিনে-দুপুরে জমি বা স্থাপনা দখল ও সিনিয়র-জুনিয়রের দ্বন্দ্বে মারামারি। স্কুল পড়ুয়া কিশোররাও বিভিন্ন গণ পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছে। এমনকি খুনাখুনিও হচ্ছে। গতমাসেও (এপ্রিল মাস) কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে লেগুনার লাইনম্যান মোহাম্মদ নবী হোসেন। গণ পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, গোটা মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন গণ পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছে কিশোর গ্যাংরা। তাদের চাহিদা মতো চাঁদা না দিলেই হামলা, ভাংচুরসহ নানা হুমকি ধামকি চলে। এছাড়া ফুটপাতের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, জমিদখল আর কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজীর নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাদল ওরফে কিলার বাদল। ১৯৯৯ সালে কাটাসুরে ডিস ব্যবসায়ী ইকবালকে হত্যার মধ্য দিয়ে কিলিং মিশন শুরু হয় তার। এরপর একই এলাকার বাবুল নামে একজন, ২০০২ সালে ওয়ার্ড কমিশনার রাজু হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় সে। ২০০৩ সালে ব্রাশ ফায়ারে দুটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সে। আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের মস্টারমাইন্ড সে। বাদলের এই অপরাধ সাম্রাজ্যর সঙ্গে আছে কাইল্যা সুমন, লালু, তাজেল গাজী, হালিম, গ্যারেজ সোহেল, লটারি জসিম, ঘাট বাবু, ক্যাশিয়ার শাহজাহানসহ আরও অনেকে।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, রাজধানীর অপরাধ জোনগুলোর মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকা। এ এলাকার ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বাড়ি দখল, জমি দখলে একাধিক বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এসব বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য কিশোর। তারা মাদক ব্যাবসা ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা তাদের মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্তত সাতটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দে ও ঝিরঝির গ্রুপ নামের গ্যাং। বিভিন্ন সময় মোহাম্মদপুর থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের জুনে বিভিন্ন গ্যাংয়ের ২২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মাদকসেবন, মাদক ব্যাবসা, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ২২ জনের মধ্যে আটজন বিভিন্ন গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা পড়ালেখা করে না। এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত তাদের কয়েকজন খুবই দুর্ধর্ষ।

এবিষয়ে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের কাছে বেশ কিছু গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, মোহাম্মদপুরে অস্ত্রধারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপরাধ তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের ধরার জন্য আমরা গোয়েন্দা নজরদারী চালাচ্ছি।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের ডিসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, সন্ত্রাসী বাদলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সে পলাতক রয়েছে। তাকে ও তার বাহিনীর সদস্যদের ধরার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর পরও সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছে।