সুন্দরবনের বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলে-বাওয়ালিদের বিস্তর অভিযোগ

খুলনার পশ্চিম সুন্দরবনের কয়রা উপজেলায় কাশিয়াবাদ স্টেশনের আওতাধীন বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ তানজিরুল ইসলাম ও খাসিটানা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জেলেরা। জেলেরা জানান, বৈধ পাশ-পারমিটে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গেলেও টাকা না দিলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। চাঁদা না দিলে নিরীহ জেলে ও বাওয়ালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা হয়রানি করেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন ওই দুই বনকর্মকর্তারা। টাকার বিনিময়ে হরিণ শিকারেও সহায়তা করেন তারা। গত ১৮ মে বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বাজারে জোড়শিং, পাতাখালি, খাসিটানা গ্রামের দেড় শতাধিক মাছ ও কাঁকড়া ধরা জেলে এবং বাওয়ালির মানববন্ধনে এমন অভিযোগ তুলে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার কয়রা উপজেলায় সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের বিপুল কুমার সরকার। স্থানীয় জেলে শফিকুল গাজী, দিদারুল শেখ, গোলাম রসুল, আকবার ফকির, বাবলু রহমান, আছাদুল গাজী, নজরুল গাজি, খায়রুল গাজী বলেন, আমরা কখনো হরিণ শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু হঠাৎ করে বজবজা বন ফাঁড়ি ইনচার্জ কয়রা উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমাদের নামে একাধিক মামলা দিয়েছেন। চাঁদা না দিলে এমন মিথ্যা মামলা বারবার দেওয়ার হুমকিও দেন ওই কর্মকর্তা। জোড়শিং বাজারের নুরুজ্জামান গাজী বলেন, তিনি গত ছয় মাস ধরে ঢাকার একটি ইটভাটায় কাজ করছেন। অথচ তার নামে হরিণ শিকারের মামলা হয়েছে। রাকিব গাজী বলেন, চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু আমার নামে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা প্রকৃত হরিণ শিকারি তারা বনবিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করে চলে বলে তাদের কোনো মামলা হচ্ছে না। তারা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলা হচ্ছে আমাদের মতো নিরীহ মানুষের নামে। জেলে গোলাম রসুল ও আছাদুল গাজী বলেন, দীর্ঘদিন তারা সুন্দরবনে মাছ ধরতে যান না। কী কারণে বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ এক ডজনের বেশি মামলা দিয়েছেন তা তাদের জানা নেই। এখন মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে মামলা প্রত্যাহারের কথাও বলেছেন তিনি। উত্তর বেদকাশির আকবার হোসেন জানান, তিনি এখনো সুন্দরবনে প্রবেশ করেননি। তার নামে তিনটি হরিণ শিকারের মামলা হয়েছে। খাসিটানা গ্রামের বাসিন্দা লতিফ গাজী বলেন, খাসিটানা ফাঁড়ির বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আমার নামে হরিণ শিকারের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। তার দাবি, তিনি কখনো সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ তানজিরুল ও খাসিটানা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার তারা বলেন, কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা দেওয়া হয়নি। প্রকৃত দোষী ও চিহ্নিত পেশাদার হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।

আরও খবর
ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে এসএসসি পরীক্ষা, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
রাজশাহীতে জমে উঠেছে কুটির শিল্প মেলা
শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাটকেলঘাটা আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
ভুয়া ডেপুটি জেলার সেজে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ
শরণখোলায় রাজনৈতিক সহাবস্থানের দাবিতে মানববন্ধন
সরকারি অনুমতি নিয়েও নদীতে মাছ শিকার করতে পারছে না পাথরঘাটার অর্ধশতাধিক জেলে
শহরের সুবিধা মিলছে ঘিওরের ৭টি ইউনিয়নের গ্রামেও
মহাদেবপুরে পরীক্ষামূলক চিনা বাদাম চাষ
নরসিংদীতে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
রাজাপুরে অসহায় নারীকে ঘর তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় আ.লীগ নেতা মনির
জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : নিহত ২ আহত ১০

রবিবার, ২১ মে ২০২৩ , ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ৩০ শাওয়াল ১৪৪৪

সুন্দরবনের বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলে-বাওয়ালিদের বিস্তর অভিযোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

খুলনার পশ্চিম সুন্দরবনের কয়রা উপজেলায় কাশিয়াবাদ স্টেশনের আওতাধীন বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ তানজিরুল ইসলাম ও খাসিটানা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জেলেরা। জেলেরা জানান, বৈধ পাশ-পারমিটে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গেলেও টাকা না দিলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। চাঁদা না দিলে নিরীহ জেলে ও বাওয়ালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা হয়রানি করেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন ওই দুই বনকর্মকর্তারা। টাকার বিনিময়ে হরিণ শিকারেও সহায়তা করেন তারা। গত ১৮ মে বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বাজারে জোড়শিং, পাতাখালি, খাসিটানা গ্রামের দেড় শতাধিক মাছ ও কাঁকড়া ধরা জেলে এবং বাওয়ালির মানববন্ধনে এমন অভিযোগ তুলে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার কয়রা উপজেলায় সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের বিপুল কুমার সরকার। স্থানীয় জেলে শফিকুল গাজী, দিদারুল শেখ, গোলাম রসুল, আকবার ফকির, বাবলু রহমান, আছাদুল গাজী, নজরুল গাজি, খায়রুল গাজী বলেন, আমরা কখনো হরিণ শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু হঠাৎ করে বজবজা বন ফাঁড়ি ইনচার্জ কয়রা উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমাদের নামে একাধিক মামলা দিয়েছেন। চাঁদা না দিলে এমন মিথ্যা মামলা বারবার দেওয়ার হুমকিও দেন ওই কর্মকর্তা। জোড়শিং বাজারের নুরুজ্জামান গাজী বলেন, তিনি গত ছয় মাস ধরে ঢাকার একটি ইটভাটায় কাজ করছেন। অথচ তার নামে হরিণ শিকারের মামলা হয়েছে। রাকিব গাজী বলেন, চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু আমার নামে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা প্রকৃত হরিণ শিকারি তারা বনবিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করে চলে বলে তাদের কোনো মামলা হচ্ছে না। তারা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলা হচ্ছে আমাদের মতো নিরীহ মানুষের নামে। জেলে গোলাম রসুল ও আছাদুল গাজী বলেন, দীর্ঘদিন তারা সুন্দরবনে মাছ ধরতে যান না। কী কারণে বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ এক ডজনের বেশি মামলা দিয়েছেন তা তাদের জানা নেই। এখন মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে মামলা প্রত্যাহারের কথাও বলেছেন তিনি। উত্তর বেদকাশির আকবার হোসেন জানান, তিনি এখনো সুন্দরবনে প্রবেশ করেননি। তার নামে তিনটি হরিণ শিকারের মামলা হয়েছে। খাসিটানা গ্রামের বাসিন্দা লতিফ গাজী বলেন, খাসিটানা ফাঁড়ির বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আমার নামে হরিণ শিকারের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। তার দাবি, তিনি কখনো সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ তানজিরুল ও খাসিটানা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার তারা বলেন, কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা দেওয়া হয়নি। প্রকৃত দোষী ও চিহ্নিত পেশাদার হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।