বেশ কদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল কী ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন মেয়র আরিফ! সিলেট সিটির নির্বাচন করবেন না করবেন না? না করলে কেনইবা- এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল নগরবাসীর মধ্যে। সবাই তাকিয়ে ছিলেন তার পূর্ব ঘোষিত তারিখের দিকে। অবশেষে নির্ধারিত তারিখ গতকাল অনেকটা নাটকীয়তার জন্ম দেন কৌশলী এই বিএনপি নেতা। দুপুরে দলীয় নেতাকর্মী এবং শুভাকাঙ্খিদের নিয়ে কুমারপাড়ার বাসা থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছান হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে। জিয়ারত শেষে শোডাউন দিয়ে হাজির হন জনসভাস্থল রেজিস্ট্রারি মাঠে। মঞ্চে ওঠে পাঠ করেন লিখিত বক্তব্য। শেষের দিকে কেঁদে চোখের পানি মুছে বললেন, ‘আমাকে উকিল সাত্তার বানানো যাবে না। প্রহসনের এই নির্বাচনে আমি অংশ নিচ্ছি না।’ তার এই ঘোষণার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ ফেইসবুকে লিখেন, ‘এই নাটক করে কোন লাভ নেই। বিগত দিনে উন্নয়নের জন্য সরকারি বরাদ্দ ২৮শ কোটি টাকার হিসাব দিতে হবে।’ আবার কেউ বলছেন, আরিফুল হক চৌধুরী যাই বলুন না কেন-মূলত পরাজয়ের ভয় অথবা দলে লোভনীয় পদ পাওয়ার আশায় তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না।
গত ১ মে নাগরিক সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। বলেছিলেন, লন্ডন থেকে তার নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। সময়মতো তা প্রকাশ করবেন। অবশেষে গতকাল দুপুরে সেই গ্রিন সিগন্যালের জানান দিলেন তিনি। সিলেটের রাজনীতির মাঠে খেলোয়াড়’ হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক চৌধুরী। ভালো করেই জানেন কখন কীভাবে কৌশলী হতে হবে। আর সেই কৌশলী থেকেই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান বিএনপির এই নেতা।
বক্তব্যের শুরুতেই আরিফ বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ক্ষমতায় থাকার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনেক সাহায্য করেছেন এবং আমি মেয়র থাকা অবস্থায় আমাকেও একই ভাবে সাহয্য করে গেছেন।
লিখিত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাকে বিভিন্ন সময় সাহায্য করার জন্য।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তাকে উকিল আবদুস সাত্তার বানানো যাবে না।
বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে গত জানুয়ারিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘সমর্থনে’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উকিল আবদুস সাত্তার। ওই নির্বাচন ?‘উকিল আবদুস সাত্তার মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পায় রাজনীতিতে। সিলেট সিটিতে বিএনপি নেতা আরিফুল হকও সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল।
তবে গতকাল সমাবেশে এমন গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে আরিফুল হক বলেন, যারা মনে মনে আমাকে উকিল আবদুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ হতাশ হয়েছেন। আরিফুল হক কখনো উকিল আবদুস সাত্তার হবে না। আমি আপনাদের আরিফ, আমি বিএনপির আরিফ। তাই আমার নেত্রী খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান ও আমার মায়ের নির্দেশে আমি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবো না। তাদের আদেশই আমার শিরোধার্য।
আসন্ন নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোন পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সঙ্গে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।
আরিফ বলেন, নির্বাচনে কারচুপির নিলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এ রকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকেও প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সবার কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে, সব ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকবো।
প্রার্থী না হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নানা ভয়, প্রতিবন্ধকতা ও কারচুপি উপেক্ষা করে এই নগরবাসী আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। তারা ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছাড়েননি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আপনারে চাইলেও আমাকে বিজয়ী করতে পারবেন না। কারণ এবারের ভোট হবে ইভিএমে। এবার আপনারা এক জায়গায় ভোট দেবেন, কিন্তু তা অন্য বাক্সে জমা হবে।
নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আরিফুল হক বলেন, এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সব নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।
রবিবার, ২১ মে ২০২৩ , ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ৩০ শাওয়াল ১৪৪৪
আকাশ চৌধুরী, সিলেট
বেশ কদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল কী ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন মেয়র আরিফ! সিলেট সিটির নির্বাচন করবেন না করবেন না? না করলে কেনইবা- এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল নগরবাসীর মধ্যে। সবাই তাকিয়ে ছিলেন তার পূর্ব ঘোষিত তারিখের দিকে। অবশেষে নির্ধারিত তারিখ গতকাল অনেকটা নাটকীয়তার জন্ম দেন কৌশলী এই বিএনপি নেতা। দুপুরে দলীয় নেতাকর্মী এবং শুভাকাঙ্খিদের নিয়ে কুমারপাড়ার বাসা থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছান হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে। জিয়ারত শেষে শোডাউন দিয়ে হাজির হন জনসভাস্থল রেজিস্ট্রারি মাঠে। মঞ্চে ওঠে পাঠ করেন লিখিত বক্তব্য। শেষের দিকে কেঁদে চোখের পানি মুছে বললেন, ‘আমাকে উকিল সাত্তার বানানো যাবে না। প্রহসনের এই নির্বাচনে আমি অংশ নিচ্ছি না।’ তার এই ঘোষণার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ ফেইসবুকে লিখেন, ‘এই নাটক করে কোন লাভ নেই। বিগত দিনে উন্নয়নের জন্য সরকারি বরাদ্দ ২৮শ কোটি টাকার হিসাব দিতে হবে।’ আবার কেউ বলছেন, আরিফুল হক চৌধুরী যাই বলুন না কেন-মূলত পরাজয়ের ভয় অথবা দলে লোভনীয় পদ পাওয়ার আশায় তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না।
গত ১ মে নাগরিক সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। বলেছিলেন, লন্ডন থেকে তার নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। সময়মতো তা প্রকাশ করবেন। অবশেষে গতকাল দুপুরে সেই গ্রিন সিগন্যালের জানান দিলেন তিনি। সিলেটের রাজনীতির মাঠে খেলোয়াড়’ হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক চৌধুরী। ভালো করেই জানেন কখন কীভাবে কৌশলী হতে হবে। আর সেই কৌশলী থেকেই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান বিএনপির এই নেতা।
বক্তব্যের শুরুতেই আরিফ বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ক্ষমতায় থাকার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনেক সাহায্য করেছেন এবং আমি মেয়র থাকা অবস্থায় আমাকেও একই ভাবে সাহয্য করে গেছেন।
লিখিত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাকে বিভিন্ন সময় সাহায্য করার জন্য।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তাকে উকিল আবদুস সাত্তার বানানো যাবে না।
বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে গত জানুয়ারিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘সমর্থনে’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উকিল আবদুস সাত্তার। ওই নির্বাচন ?‘উকিল আবদুস সাত্তার মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পায় রাজনীতিতে। সিলেট সিটিতে বিএনপি নেতা আরিফুল হকও সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল।
তবে গতকাল সমাবেশে এমন গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে আরিফুল হক বলেন, যারা মনে মনে আমাকে উকিল আবদুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ হতাশ হয়েছেন। আরিফুল হক কখনো উকিল আবদুস সাত্তার হবে না। আমি আপনাদের আরিফ, আমি বিএনপির আরিফ। তাই আমার নেত্রী খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান ও আমার মায়ের নির্দেশে আমি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবো না। তাদের আদেশই আমার শিরোধার্য।
আসন্ন নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোন পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সঙ্গে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।
আরিফ বলেন, নির্বাচনে কারচুপির নিলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এ রকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকেও প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সবার কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে, সব ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকবো।
প্রার্থী না হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নানা ভয়, প্রতিবন্ধকতা ও কারচুপি উপেক্ষা করে এই নগরবাসী আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। তারা ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছাড়েননি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আপনারে চাইলেও আমাকে বিজয়ী করতে পারবেন না। কারণ এবারের ভোট হবে ইভিএমে। এবার আপনারা এক জায়গায় ভোট দেবেন, কিন্তু তা অন্য বাক্সে জমা হবে।
নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আরিফুল হক বলেন, এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সব নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।