ভর্তুকি আর কত, সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে বিদেশি ক্রেতারা

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সরকারের দেয়া ভর্তুকি সুবিধা তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের বিদেশি ক্রেতারা নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

বাংলদেশি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সস্তা বাজার তৈরির এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে নিজেদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সবাইকে এখন জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারে জোর দিতে হবে। জ্বালানির দাম কমানো নয়, দক্ষ ব্যবহারই শিল্পের খরচ সাশ্রয় করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, ভিয়েতনাম কোথাও জ্বালানি পণ্যে ভর্তুকি নেই। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের কথা ভেবে সরকার দিচ্ছে। কিন্তু সরকার আর কতদিন ভর্তুকি দেবে?’

‘অনুমেয় ভবিষ্যতের পথে জ্বালানি কৌশল’ শিরোনামে আয়োজিত সংলাপে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন নসরুল হামিদ।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) গতকাল ঢাকায় নিজস্ব কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে মূল নিবন্ধ উপস্থাপনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।

জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে হলে এর দামও ‘ওই রকম’ হতে হবে- এমন মন্তব্য করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকির সুবিধা পাচ্ছেন তৈরি পোশাক খাতের বিদেশি ক্রেতারা। এটা হতে পারে না। বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সস্তা বাজার তৈরির এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে নিজেদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ধীরে ধীরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হবে। এ জন্য নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।’

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মিলে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমস্যা সবার সামনে এসেছে বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির কথা কেউ অনুমান করতে পারেননি। এর আগে তো কোন সমস্যা ছিল না। পরে দাম বেশি হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি তোলেন ব্যবসায়ীরা। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ডলারের সংকট আছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে অনেকে গ্যাস না পেয়ে অভিযোগ করছেন।’

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ- মূল নিবন্ধে এমন তথ্য জানিয়ে বলা হয়, এ জন্য বছরে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করতে হবে। এটি এখন পাঁচে নেমে এসেছে। এটা বাড়াতে হলে বিনিয়োগ লাগবে। সে জন্য উচ্চ মূল্যে হলেও সবার কাছে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য জ্বালানি খাতে ১৭০ থেকে ২০০ বিলিয়ন (১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি) ডলারের বিনিয়োগ লাগবে।

বর্তমানে দৈনিক ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, ২০৩০ সালে গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৫০০ কোটি ঘনফুট। এ চাহিদা পূরণে আমদানি করা এলএনজি থেকে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। এতে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন (১ হাজার ২০০ কোটি) ডলার লাগবে। সরকার সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে জোর দেয়া হয়েছে। তবে দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক আছে।

রবিবার, ২১ মে ২০২৩ , ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ৩০ শাওয়াল ১৪৪৪

ভর্তুকি আর কত, সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে বিদেশি ক্রেতারা

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সরকারের দেয়া ভর্তুকি সুবিধা তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের বিদেশি ক্রেতারা নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

বাংলদেশি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সস্তা বাজার তৈরির এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে নিজেদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সবাইকে এখন জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারে জোর দিতে হবে। জ্বালানির দাম কমানো নয়, দক্ষ ব্যবহারই শিল্পের খরচ সাশ্রয় করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, ভিয়েতনাম কোথাও জ্বালানি পণ্যে ভর্তুকি নেই। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের কথা ভেবে সরকার দিচ্ছে। কিন্তু সরকার আর কতদিন ভর্তুকি দেবে?’

‘অনুমেয় ভবিষ্যতের পথে জ্বালানি কৌশল’ শিরোনামে আয়োজিত সংলাপে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন নসরুল হামিদ।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) গতকাল ঢাকায় নিজস্ব কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে মূল নিবন্ধ উপস্থাপনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।

জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে হলে এর দামও ‘ওই রকম’ হতে হবে- এমন মন্তব্য করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকির সুবিধা পাচ্ছেন তৈরি পোশাক খাতের বিদেশি ক্রেতারা। এটা হতে পারে না। বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সস্তা বাজার তৈরির এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে নিজেদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ধীরে ধীরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হবে। এ জন্য নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।’

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মিলে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমস্যা সবার সামনে এসেছে বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির কথা কেউ অনুমান করতে পারেননি। এর আগে তো কোন সমস্যা ছিল না। পরে দাম বেশি হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি তোলেন ব্যবসায়ীরা। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ডলারের সংকট আছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে অনেকে গ্যাস না পেয়ে অভিযোগ করছেন।’

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ- মূল নিবন্ধে এমন তথ্য জানিয়ে বলা হয়, এ জন্য বছরে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করতে হবে। এটি এখন পাঁচে নেমে এসেছে। এটা বাড়াতে হলে বিনিয়োগ লাগবে। সে জন্য উচ্চ মূল্যে হলেও সবার কাছে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য জ্বালানি খাতে ১৭০ থেকে ২০০ বিলিয়ন (১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি) ডলারের বিনিয়োগ লাগবে।

বর্তমানে দৈনিক ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, ২০৩০ সালে গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৫০০ কোটি ঘনফুট। এ চাহিদা পূরণে আমদানি করা এলএনজি থেকে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। এতে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন (১ হাজার ২০০ কোটি) ডলার লাগবে। সরকার সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে জোর দেয়া হয়েছে। তবে দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক আছে।