উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন গায়ক নোবেল : ডিবি

প্রতিদিন মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। তিনি প্রতিদিন ৩-৪টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুমান। এই ঘুমের কারণে তিনি টাকা নিয়েও প্রোগ্রামে যেতে পারেন না। উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে স্ত্রীকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবি প্রধান বলেন, নোবেল বিভিন্ন জায়গায় প্রোগ্রাম করতে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় মঞ্চ ভেঙে ফেলেন এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তার স্ত্রীকে তিনি প্রচ- পরিমাণে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। তার স্ত্রীও আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে, তিনি টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম না করে এসব টাকা আত্মসাৎ করে ফেলেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমরা নিয়ে এসেছি। যেহেতু তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আমরা আদালতে পাঠাব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি অনেক সময় টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম করতে যান না। আর যদি যানও সেখানে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে প্রোগ্রামের মঞ্চে ভাঙচুর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আমরা বিভিন্ন সময় বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রী আমাদের কাছে তিন-চার দিন এসেছেন। তিনি স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় মারধর করতেন, মারধর করার পর তাকে চিকিৎসাও করাতেন। তার স্ত্রী এসব বিষয়ে আমাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছে।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, নোবেলের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, তার জীবনে অধঃপতন নেমে এসেছে। তাকে প্রতিদিন মদপান করতে হয় এবং প্রতিদিন ৩-৪টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে তাকে ঘুমাতে হয়। তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, অন্য শিল্পীদের কাছ থেকে মদ্যপান, গাঁজা ও ইয়াবা সেবন শিখেছেন। আমরা তার কথায় বুঝতে পারি, তিনি এসব কারণে সারাদিন ঘুমান এবং ঘুমের কারণে টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম করতে যেতে পারেন না। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে প্রোগ্রামের তারিখ দিলেও তিনি যেতে পারেন না।

নোবেলের স্ত্রী বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন যে, তার স্বামী প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মদ্যপান করেন। তার পেছনে একটি বড় চক্র রয়েছে এ বিষয়ে ডিবি কোন তথ্য পেয়েছে কি-না জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, এ বিষয়ে ওনার স্ত্রী বলতে পারবেন বিস্তারিত। তবে এসব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। তাকে রিমান্ডে এনে আমরা এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

এদিকে, এক নারী এয়ার হোস্টেসের কারণে গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল মাদকাসক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার সাবেক স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। গতকাল ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তিনি। তবে নোবেলের সাবেক স্ত্রী ওই এয়ার হোস্টেসের নাম বলেননি। সালসাবিল মাহমুদ বলেন, নোবেলের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে কয়েকজন শিল্পী ও ইন্টারন্যাশনাল রুটে চলাচল করা বিমানের এয়ার হোস্টেস জড়িত। তারাই প্রতিনিয়ত নোবেলকে মাদক সাপ্লাই দেন। এ বিষয়ে আমি তাদের বলায় আমার নম্বরে ফোন করে বিভিন্ন জন হুমকিও দেয়।

তাকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, নোবেল মাদকসেবন করে বাসায় এসে আমাকে মারধর করত। পরে একদিন আমি ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশ ডাকি। তারা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। নোবেল সেই পুলিশ সদস্যদের সামনে স্বীকার করেছে মাদকসেবনের কারণে আমাকে মারধর করে। এরপর আমি গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। যদিও পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। সালসাবিল বলেন, ডিবি পুলিশ থেকে আমাকে ডাকা হয়েছে। আমি তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। তারা পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা।

নোবেলকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

বিতর্কিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গতকাল দুপুরে রাজারবাগে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রতারণার অভিযোগে গায়ক নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের কথা বলে সে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডিবি কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠানে না গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা হয়।

জানা যায়, গত ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর প্রতিনিধি মো. সাফায়েত ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। গত ১৭ মে আদালত এই মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৯ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৮ এপ্রিল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর প্রথম পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য মাইনুল আহসান নোবেলের সঙ্গে মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কথা চূড়ান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে নোবেলকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা দেয়া হয়। তবে অনুষ্ঠানে না গিয়ে তিনি প্রতারণা করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন।

রবিবার, ২১ মে ২০২৩ , ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ৩০ শাওয়াল ১৪৪৪

উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন গায়ক নোবেল : ডিবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রতিদিন মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। তিনি প্রতিদিন ৩-৪টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুমান। এই ঘুমের কারণে তিনি টাকা নিয়েও প্রোগ্রামে যেতে পারেন না। উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে স্ত্রীকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবি প্রধান বলেন, নোবেল বিভিন্ন জায়গায় প্রোগ্রাম করতে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় মঞ্চ ভেঙে ফেলেন এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তার স্ত্রীকে তিনি প্রচ- পরিমাণে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। তার স্ত্রীও আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে, তিনি টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম না করে এসব টাকা আত্মসাৎ করে ফেলেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমরা নিয়ে এসেছি। যেহেতু তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আমরা আদালতে পাঠাব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি অনেক সময় টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম করতে যান না। আর যদি যানও সেখানে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে প্রোগ্রামের মঞ্চে ভাঙচুর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আমরা বিভিন্ন সময় বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রী আমাদের কাছে তিন-চার দিন এসেছেন। তিনি স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় মারধর করতেন, মারধর করার পর তাকে চিকিৎসাও করাতেন। তার স্ত্রী এসব বিষয়ে আমাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছে।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, নোবেলের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, তার জীবনে অধঃপতন নেমে এসেছে। তাকে প্রতিদিন মদপান করতে হয় এবং প্রতিদিন ৩-৪টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে তাকে ঘুমাতে হয়। তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, অন্য শিল্পীদের কাছ থেকে মদ্যপান, গাঁজা ও ইয়াবা সেবন শিখেছেন। আমরা তার কথায় বুঝতে পারি, তিনি এসব কারণে সারাদিন ঘুমান এবং ঘুমের কারণে টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম করতে যেতে পারেন না। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে প্রোগ্রামের তারিখ দিলেও তিনি যেতে পারেন না।

নোবেলের স্ত্রী বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন যে, তার স্বামী প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মদ্যপান করেন। তার পেছনে একটি বড় চক্র রয়েছে এ বিষয়ে ডিবি কোন তথ্য পেয়েছে কি-না জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, এ বিষয়ে ওনার স্ত্রী বলতে পারবেন বিস্তারিত। তবে এসব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। তাকে রিমান্ডে এনে আমরা এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

এদিকে, এক নারী এয়ার হোস্টেসের কারণে গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল মাদকাসক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার সাবেক স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। গতকাল ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তিনি। তবে নোবেলের সাবেক স্ত্রী ওই এয়ার হোস্টেসের নাম বলেননি। সালসাবিল মাহমুদ বলেন, নোবেলের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে কয়েকজন শিল্পী ও ইন্টারন্যাশনাল রুটে চলাচল করা বিমানের এয়ার হোস্টেস জড়িত। তারাই প্রতিনিয়ত নোবেলকে মাদক সাপ্লাই দেন। এ বিষয়ে আমি তাদের বলায় আমার নম্বরে ফোন করে বিভিন্ন জন হুমকিও দেয়।

তাকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, নোবেল মাদকসেবন করে বাসায় এসে আমাকে মারধর করত। পরে একদিন আমি ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশ ডাকি। তারা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। নোবেল সেই পুলিশ সদস্যদের সামনে স্বীকার করেছে মাদকসেবনের কারণে আমাকে মারধর করে। এরপর আমি গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। যদিও পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। সালসাবিল বলেন, ডিবি পুলিশ থেকে আমাকে ডাকা হয়েছে। আমি তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। তারা পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা।

নোবেলকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

বিতর্কিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গতকাল দুপুরে রাজারবাগে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রতারণার অভিযোগে গায়ক নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের কথা বলে সে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডিবি কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠানে না গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা হয়।

জানা যায়, গত ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর প্রতিনিধি মো. সাফায়েত ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। গত ১৭ মে আদালত এই মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৯ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৮ এপ্রিল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর প্রথম পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য মাইনুল আহসান নোবেলের সঙ্গে মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কথা চূড়ান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে নোবেলকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা দেয়া হয়। তবে অনুষ্ঠানে না গিয়ে তিনি প্রতারণা করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন।