চীনে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে

চীনে কভিড-১৯ মহামারী বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতি পেয়েছে। কিন্তু যুব বেকারত্ব এখনও মাথাব্যথার কারণ হিসেবেই রয়ে গেছে। এতে চীনা নবীন স্নাতকদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পেতে তারা নানা কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতি পাঁচজন তরুণের মধ্যে একজন কর্মহীন থাকছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সু সিয়াং নামের ২১ বছর বয়সী এক তরুণী ফেব্রুয়ারি থেকে চাকরি খুঁজছেন বলে জানান। এখন পর্যন্ত ১০০-এর বেশি আবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু মাত্র পাঁচটি অফিস থেকে তাকে ডাকা হয়েছে। তার পড়াশোনা অবশ্য এখনও শেষ হয়নি। সু সিয়াং যে চাকরি পাবেন, সে বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাসও কম। তবে একটাই সান্ত¡না, তিনি একা নন, তার সহপাঠীদেরও একই অবস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সু সিয়াংয়ের মতো আরও প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ তরুণ চীনের চাকরির বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করবেন, অর্থাৎ তাদের স্নাতক শেষ হবে। অথচ চীনের সরকারি এক প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী যে তরুণরা চাকরি বা কাজ খুঁজছেন, এপ্রিলে তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৪ শতাংশই কাজের বাইরে ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে চীন এ বিষয়ক পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে, তখন থেকে এটাই সর্বোচ্চ।

তরুণদের কর্মসংস্থানে গতি আনতে চীন সরকার অবশ্য বেশকিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেয়া। কারণ, তরুণরা সাধারণত এসব প্রতিষ্ঠানেই কর্মজীবন শুরু করেন। এছাড়া দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তরুণদের নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চীনা সরকার এসব বেকার তরুণকে কাজের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে তাদের ‘কায়িক শ্রমের’ কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে চীনের অর্থনীতিতে খুব ধীরে ধীরে এক ধরনের স্থিতি আসছে। তবে এটা অনেকটাই অসম প্রকৃতির। এছাড়া বেইজিং থেকে প্রকাশিত অন্যান্য প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিলে খুচরা বিক্রি ও কারখানা উৎপাদনে গতি এসেছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা আরও বেশি আশা করেছিলেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকরা যে ধরনের কাজ খুঁজছেন, বাজারে সে ধরনের কাজের অভাব। অর্থাৎ বাজার বাস্তবতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চাহিদার অসামঞ্জস্য বিদ্যমান। চীনের জব সাইট ঝিলিয়ানের তথ্যানুসারে, মার্চে দেশটির পর্যটন, যাত্রী ও কার্গো পরিবহনে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। খুচরা বিক্রি খাতেও অনেক কাজের সুযোগ আছে। এছাড়া চীনের নির্মাণ, যোগাযোগ ও ওয়্যারহাউজ খাতেও গতি এসেছে।

সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ল-এর গবেষক নি রিমিং বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিত তরুণরা মূলত প্রযুক্তি, শিক্ষা ও ওষুধ শিল্প খাতে চাকরি খোঁজেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে এসব খাতের প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। শুধু তাই নয়, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পাশাপাশি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।’

নি রিমিং আরও জানান, যেসব খাতে শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহ, সেসব খাত সংকুচিত হচ্ছে অথচ স্নাতক ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, চলতি জুনে ১১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১৬ লাখ তরুণ স্নাতক সম্পন্ন করবেন, যা গত বছরের চেয়ে ৮ লাখ ২০ হাজার বেশি।

সোমবার, ২২ মে ২০২৩ , ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০২ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

চীনে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে

সংবাদ ডেস্ক

চীনে কভিড-১৯ মহামারী বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতি পেয়েছে। কিন্তু যুব বেকারত্ব এখনও মাথাব্যথার কারণ হিসেবেই রয়ে গেছে। এতে চীনা নবীন স্নাতকদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পেতে তারা নানা কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতি পাঁচজন তরুণের মধ্যে একজন কর্মহীন থাকছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সু সিয়াং নামের ২১ বছর বয়সী এক তরুণী ফেব্রুয়ারি থেকে চাকরি খুঁজছেন বলে জানান। এখন পর্যন্ত ১০০-এর বেশি আবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু মাত্র পাঁচটি অফিস থেকে তাকে ডাকা হয়েছে। তার পড়াশোনা অবশ্য এখনও শেষ হয়নি। সু সিয়াং যে চাকরি পাবেন, সে বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাসও কম। তবে একটাই সান্ত¡না, তিনি একা নন, তার সহপাঠীদেরও একই অবস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সু সিয়াংয়ের মতো আরও প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ তরুণ চীনের চাকরির বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করবেন, অর্থাৎ তাদের স্নাতক শেষ হবে। অথচ চীনের সরকারি এক প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী যে তরুণরা চাকরি বা কাজ খুঁজছেন, এপ্রিলে তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৪ শতাংশই কাজের বাইরে ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে চীন এ বিষয়ক পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে, তখন থেকে এটাই সর্বোচ্চ।

তরুণদের কর্মসংস্থানে গতি আনতে চীন সরকার অবশ্য বেশকিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেয়া। কারণ, তরুণরা সাধারণত এসব প্রতিষ্ঠানেই কর্মজীবন শুরু করেন। এছাড়া দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তরুণদের নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চীনা সরকার এসব বেকার তরুণকে কাজের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে তাদের ‘কায়িক শ্রমের’ কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে চীনের অর্থনীতিতে খুব ধীরে ধীরে এক ধরনের স্থিতি আসছে। তবে এটা অনেকটাই অসম প্রকৃতির। এছাড়া বেইজিং থেকে প্রকাশিত অন্যান্য প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিলে খুচরা বিক্রি ও কারখানা উৎপাদনে গতি এসেছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা আরও বেশি আশা করেছিলেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকরা যে ধরনের কাজ খুঁজছেন, বাজারে সে ধরনের কাজের অভাব। অর্থাৎ বাজার বাস্তবতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চাহিদার অসামঞ্জস্য বিদ্যমান। চীনের জব সাইট ঝিলিয়ানের তথ্যানুসারে, মার্চে দেশটির পর্যটন, যাত্রী ও কার্গো পরিবহনে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। খুচরা বিক্রি খাতেও অনেক কাজের সুযোগ আছে। এছাড়া চীনের নির্মাণ, যোগাযোগ ও ওয়্যারহাউজ খাতেও গতি এসেছে।

সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ল-এর গবেষক নি রিমিং বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিত তরুণরা মূলত প্রযুক্তি, শিক্ষা ও ওষুধ শিল্প খাতে চাকরি খোঁজেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে এসব খাতের প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। শুধু তাই নয়, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পাশাপাশি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।’

নি রিমিং আরও জানান, যেসব খাতে শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহ, সেসব খাত সংকুচিত হচ্ছে অথচ স্নাতক ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, চলতি জুনে ১১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১৬ লাখ তরুণ স্নাতক সম্পন্ন করবেন, যা গত বছরের চেয়ে ৮ লাখ ২০ হাজার বেশি।