আইন সংশোধনে নির্বাচন কমিশনের ‘ক্ষমতা বাড়বে’

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’-এর নতুন যে সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাতে নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান ক্ষমতা কমেনি, বরং বেড়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে ভোট চলাকালীন সময় পর্যন্ত অনিয়ম-কারচুপির প্রমাণ পেলে কোন কেন্দ্রের ভোট বাতিল বা স্থগিত করতে পারতো। এখন গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত সেটা করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ভোটের পরেও যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নেওয়ার পথ খুলেছে, যা আগে আইনে ‘অস্পষ্ট’ ছিল। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ভোট শেষে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ হয়ে গেলেও গেজেট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভোট বাতিলের ক্ষমতা পেয়েছে কমিশন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) একমত প্রকাশ করেছেন। জানতে চাইলে গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা যা বলেছেন, যথার্থই বলেছেন।

গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে বলে আলোচনা তৈরী হয়।

এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা গতকাল রোববার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখন আমরা চাচ্ছি এক বা একাধিক কেন্দ্র - যেখানেই হোক, রিটার্নিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণার পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত, এই মধ্যবর্তী সময়ে অভিযোগ এলে সেটা যেন তদন্ত করে বন্ধ করতে পারি। যেখানে ক্ষমতাই ছিল না, সেখানে তো কিছুটা হলেও বাড়ল। পুরোটা না হলেও কিছুটা তো অর্জন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যদি বড় ধরনে কোনো অভিযোগ থাকে, যে সত্যিকার অর্থেই বড় কোনো অনিয়ম ঘটে গেছে, সেটা রেখেই যদি একটা গেজেট করে দেওয়া হয়, তখন অভিযোগকারীদের কমিশনের প্রতি একটা অনাস্থা থেকেই যায়। কাজেই তার অভিযোগ আমলে নেওয়া উচিত। এই জায়গাটাতেই আমরা চিন্তা করলাম যে শূন্য আছে। কমিশনের হাতে কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেখানেই একটা নতুন প্রস্তাব পাঠালাম সংশোধনীতে, যেটা মন্ত্রিপরিষদে গেছে।’

কমিশনের প্রস্তাব কী ছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (ক) উপ-অনুচ্ছেদে প্রস্তাব করা হয়েছে - কোনো অনিয়মের তথ্য বা অভিযোগ আসলে কমিশন সেই গেজেট নোটিফিকেশনটা স্থগিত রাখবে। এরপর তদন্ত করে যদি অভিযোগটার সত্যতা প্রমাণ হয় তখন ব্যবস্থা নিতে পারবে। তখন কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে যে জায়গাটায় অনিয়ম হয়েছে সে জায়গাটার কেন্দ্র বলেন বা যে আসনটার ভোট বাতিল করার জন্য চাচ্ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ ওইখানে পুরো আসনের (এন্টায়ার শব্দটা) কথাটা বাদ দিয়ে সেটা খণ্ড করে আংশিকভাবে একটা অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পুরোটা কপি এখনো দেখিনি।’

ইসির বিদ্যমান ক্ষমতা খর্ব হয়নি দাবি করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বিভ্রান্তি যেটা হয়েছে, অনেকে মনে করছেন যে ৯১(ক)-তে যে ক্ষমতাটা ছিল, নির্বাচন চলাকালীন (ভোটের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার যে সুযোগটা সেটা বোধহয় খর্ব হয়েছে। বিষয়টা তা না। কেননা, আমরা তো ওটা চাইনি। রিটার্নিং অফিসার ফল প্রকাশের পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টায় অনিয়ম হলে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতাটা চাওয়া হয়েছে।’

আরপিও সংশোধনী নিয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা যেটা বলেছেন, দ্যাট ইজ, শি ইজ টেলিং ফ্রম দ্যা অথরিটি। আর আমি যেটা জানি, সেটাও রাশেদা সুলতানার মতই।’

এম সাখাওয়াত বলেন, ‘যে জায়গাটায় ভয়েড (অকার্যকর) ছিল, সেই জায়গাটাতে তারা (নির্বাচন কমিশন) একটা অথরিটি (কর্তৃত্ব) চেয়েছিল। সেই অথরিটিটা হাফ (অর্ধেক) পেয়েছে, হাফ পায়নি। হাফ ইন অ্যা সেন্স (অর্ধেক এই অর্থে), বলছে যে কেন্দ্র বাতিল করতে পারবেন, পুরো আসনের ইলেকশন বাতিল করতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘একটা ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে- আমার মনে হয়, আমি জানি না। আমি এখনো দেখিনি...দুইটা স্টেজ। একটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময় ইলেকশন কমিশনের অথরিটি আছে, টু ক্যানসেল দ্যা ইলেকশন। যে কোন নির্বাচনী এলাকার।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সিইসি বলেছেন, ওটা অলরেডি আরপিওতে এস্টাবলিশ রুল, ল্য। কাজেই ওটাতে হাত দিতে পারবে না।

‘যেখানে তারা একটা নতুন প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেটা আগে ছিল না- সেটা হল রিটানিং কর্মকর্তা প্রাইমারি রেজাল্ট দেওয়ার পর গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু থাকে ওই সময়ের মধ্যে অনেক কমপ্লেইন (অভিযোগ) আসে। এই অভিযোগ গুলো ক্ষতিয়ে দেখার ক্ষমতা কমিশনের নাই। কমিশন এটা লিখিতভাবে আইনের মধ্যে চেয়েছিল।’

‘কমিশন বলেছে, অভিযোগ তদন্ত করে যদি দেখা যায়, কোন অনিয়ম-কারচুপি হয়েছে, তাহলে কমিশন পুরো আসনের ফল বাতিল করতে পারবে। সেইটা সরকার বলেছে, পুরো আসনের ফল না, কেন্দ্রভিত্তিক ফল বাতিল করতে পারবে কমিশন,’ বলেন সাখাওয়াত।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি গেজেটে প্রকাশের পরও ভোট বাতিল করার ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সেই ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা নিজেদের প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পরে অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই বলে তারা সেই ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম, ফলাফল ঘোষণার পরেও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে। কিন্তু (আইন মন্ত্রণালয়) উনারা বললেন যে, ৯১ অনুচ্ছেদ দিয়েই কভার হচ্ছে।’

তবে গত ২৮ মার্চ আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চাওয়া হয়নি।

গেজেটর পরে ফল বাতিলে কমিশনের ক্ষমতা চাওয়া প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা ভুল। নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের পর ফল বাতিল করতে পারে না। কোন আইনেই এটা পারে না। গ্যাজেটের পরে বাকীটা আদালতের বিষয়। কেউ মামলা করলে সেটা আদালতের বিষয়। কমিশনের বিষয় না। আদালত রায় দিলে কমিশন পরে কিছু করতে পারবে।’

গেজেট পর্যন্ত কমিশনের কাজ। এরপর ক্ষমতা চাওয়ার কোন ‘যুক্তি’ নেই বলেও মন্তব্য করেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

তবে গত ২৮ মার্চ আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চাওয়া হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন চলাকালে বা তাদের যদি মনে হয় কোনো কেন্দ্রের নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছে, তখন তারা ওই কেন্দ্রের, সেটি এক বা একাধিক হলে তা বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে। কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে এক বা একাধিক। এখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়নি।

সম্প্রতি গাইবন্ধার পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধে ইসির ক্ষমতার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে চাননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে মো. মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন চলাকালে বা তাদের যদি মনে হয় কোনো কেন্দ্রের নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছে, তখন তারা ওই কেন্দ্রের, সেটি এক বা একাধিক হলে তা বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে। কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে এক বা একাধিক। এখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়নি।

এই খসড়া জাতীয় সংসদে উঠবে; সেখানে আইনপ্রণেতাদের আলোচনার পর প্রয়োজনে কিছু সংযোজন-বিয়োজনের পর তা চূড়ান্ত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সংসদে পাশ হওয়া সংশোধিত আরপিও দিয়েই হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। আসছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যেকোন দিন ওই নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

###১৮:৩৫###

সোমবার, ২২ মে ২০২৩ , ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০২ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

আইন সংশোধনে নির্বাচন কমিশনের ‘ক্ষমতা বাড়বে’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’-এর নতুন যে সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাতে নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান ক্ষমতা কমেনি, বরং বেড়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে ভোট চলাকালীন সময় পর্যন্ত অনিয়ম-কারচুপির প্রমাণ পেলে কোন কেন্দ্রের ভোট বাতিল বা স্থগিত করতে পারতো। এখন গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত সেটা করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ভোটের পরেও যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নেওয়ার পথ খুলেছে, যা আগে আইনে ‘অস্পষ্ট’ ছিল। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ভোট শেষে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ হয়ে গেলেও গেজেট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভোট বাতিলের ক্ষমতা পেয়েছে কমিশন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) একমত প্রকাশ করেছেন। জানতে চাইলে গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা যা বলেছেন, যথার্থই বলেছেন।

গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে বলে আলোচনা তৈরী হয়।

এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা গতকাল রোববার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখন আমরা চাচ্ছি এক বা একাধিক কেন্দ্র - যেখানেই হোক, রিটার্নিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণার পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত, এই মধ্যবর্তী সময়ে অভিযোগ এলে সেটা যেন তদন্ত করে বন্ধ করতে পারি। যেখানে ক্ষমতাই ছিল না, সেখানে তো কিছুটা হলেও বাড়ল। পুরোটা না হলেও কিছুটা তো অর্জন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যদি বড় ধরনে কোনো অভিযোগ থাকে, যে সত্যিকার অর্থেই বড় কোনো অনিয়ম ঘটে গেছে, সেটা রেখেই যদি একটা গেজেট করে দেওয়া হয়, তখন অভিযোগকারীদের কমিশনের প্রতি একটা অনাস্থা থেকেই যায়। কাজেই তার অভিযোগ আমলে নেওয়া উচিত। এই জায়গাটাতেই আমরা চিন্তা করলাম যে শূন্য আছে। কমিশনের হাতে কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেখানেই একটা নতুন প্রস্তাব পাঠালাম সংশোধনীতে, যেটা মন্ত্রিপরিষদে গেছে।’

কমিশনের প্রস্তাব কী ছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (ক) উপ-অনুচ্ছেদে প্রস্তাব করা হয়েছে - কোনো অনিয়মের তথ্য বা অভিযোগ আসলে কমিশন সেই গেজেট নোটিফিকেশনটা স্থগিত রাখবে। এরপর তদন্ত করে যদি অভিযোগটার সত্যতা প্রমাণ হয় তখন ব্যবস্থা নিতে পারবে। তখন কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে যে জায়গাটায় অনিয়ম হয়েছে সে জায়গাটার কেন্দ্র বলেন বা যে আসনটার ভোট বাতিল করার জন্য চাচ্ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ ওইখানে পুরো আসনের (এন্টায়ার শব্দটা) কথাটা বাদ দিয়ে সেটা খণ্ড করে আংশিকভাবে একটা অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পুরোটা কপি এখনো দেখিনি।’

ইসির বিদ্যমান ক্ষমতা খর্ব হয়নি দাবি করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বিভ্রান্তি যেটা হয়েছে, অনেকে মনে করছেন যে ৯১(ক)-তে যে ক্ষমতাটা ছিল, নির্বাচন চলাকালীন (ভোটের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার যে সুযোগটা সেটা বোধহয় খর্ব হয়েছে। বিষয়টা তা না। কেননা, আমরা তো ওটা চাইনি। রিটার্নিং অফিসার ফল প্রকাশের পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টায় অনিয়ম হলে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতাটা চাওয়া হয়েছে।’

আরপিও সংশোধনী নিয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা যেটা বলেছেন, দ্যাট ইজ, শি ইজ টেলিং ফ্রম দ্যা অথরিটি। আর আমি যেটা জানি, সেটাও রাশেদা সুলতানার মতই।’

এম সাখাওয়াত বলেন, ‘যে জায়গাটায় ভয়েড (অকার্যকর) ছিল, সেই জায়গাটাতে তারা (নির্বাচন কমিশন) একটা অথরিটি (কর্তৃত্ব) চেয়েছিল। সেই অথরিটিটা হাফ (অর্ধেক) পেয়েছে, হাফ পায়নি। হাফ ইন অ্যা সেন্স (অর্ধেক এই অর্থে), বলছে যে কেন্দ্র বাতিল করতে পারবেন, পুরো আসনের ইলেকশন বাতিল করতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘একটা ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে- আমার মনে হয়, আমি জানি না। আমি এখনো দেখিনি...দুইটা স্টেজ। একটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময় ইলেকশন কমিশনের অথরিটি আছে, টু ক্যানসেল দ্যা ইলেকশন। যে কোন নির্বাচনী এলাকার।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সিইসি বলেছেন, ওটা অলরেডি আরপিওতে এস্টাবলিশ রুল, ল্য। কাজেই ওটাতে হাত দিতে পারবে না।

‘যেখানে তারা একটা নতুন প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেটা আগে ছিল না- সেটা হল রিটানিং কর্মকর্তা প্রাইমারি রেজাল্ট দেওয়ার পর গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু থাকে ওই সময়ের মধ্যে অনেক কমপ্লেইন (অভিযোগ) আসে। এই অভিযোগ গুলো ক্ষতিয়ে দেখার ক্ষমতা কমিশনের নাই। কমিশন এটা লিখিতভাবে আইনের মধ্যে চেয়েছিল।’

‘কমিশন বলেছে, অভিযোগ তদন্ত করে যদি দেখা যায়, কোন অনিয়ম-কারচুপি হয়েছে, তাহলে কমিশন পুরো আসনের ফল বাতিল করতে পারবে। সেইটা সরকার বলেছে, পুরো আসনের ফল না, কেন্দ্রভিত্তিক ফল বাতিল করতে পারবে কমিশন,’ বলেন সাখাওয়াত।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি গেজেটে প্রকাশের পরও ভোট বাতিল করার ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সেই ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা নিজেদের প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পরে অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই বলে তারা সেই ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম, ফলাফল ঘোষণার পরেও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে। কিন্তু (আইন মন্ত্রণালয়) উনারা বললেন যে, ৯১ অনুচ্ছেদ দিয়েই কভার হচ্ছে।’

তবে গত ২৮ মার্চ আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চাওয়া হয়নি।

গেজেটর পরে ফল বাতিলে কমিশনের ক্ষমতা চাওয়া প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা ভুল। নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের পর ফল বাতিল করতে পারে না। কোন আইনেই এটা পারে না। গ্যাজেটের পরে বাকীটা আদালতের বিষয়। কেউ মামলা করলে সেটা আদালতের বিষয়। কমিশনের বিষয় না। আদালত রায় দিলে কমিশন পরে কিছু করতে পারবে।’

গেজেট পর্যন্ত কমিশনের কাজ। এরপর ক্ষমতা চাওয়ার কোন ‘যুক্তি’ নেই বলেও মন্তব্য করেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

তবে গত ২৮ মার্চ আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চাওয়া হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন চলাকালে বা তাদের যদি মনে হয় কোনো কেন্দ্রের নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছে, তখন তারা ওই কেন্দ্রের, সেটি এক বা একাধিক হলে তা বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে। কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে এক বা একাধিক। এখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়নি।

সম্প্রতি গাইবন্ধার পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধে ইসির ক্ষমতার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে চাননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে মো. মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন চলাকালে বা তাদের যদি মনে হয় কোনো কেন্দ্রের নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছে, তখন তারা ওই কেন্দ্রের, সেটি এক বা একাধিক হলে তা বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে। কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে এক বা একাধিক। এখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়নি।

এই খসড়া জাতীয় সংসদে উঠবে; সেখানে আইনপ্রণেতাদের আলোচনার পর প্রয়োজনে কিছু সংযোজন-বিয়োজনের পর তা চূড়ান্ত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সংসদে পাশ হওয়া সংশোধিত আরপিও দিয়েই হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। আসছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যেকোন দিন ওই নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

###১৮:৩৫###