গাছকাটার প্রতিবাদে নগর ভবন ঘেরাও করতে গেলে পুলিশি বাধা

গাছ কাটা বন্ধের দাবি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোন আশ্বাস পাননি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা। পরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দক্ষিণ সিটির নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচি শেষ করেছেন তারা।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সাতমসজিদ সড়কের বিভাজকের গাছ কাটার প্রতিবাদে এবং বাকি গাছ রক্ষার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবন ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের মিছিল বঙ্গবাজার মোড়ে অ্যানেক্স টাওয়ার মার্কেটের সামনে পৌঁছায়। সে সময় পুলিশ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মিছিলকারীদের বাধা দেন।

পুলিশের বাধা পেয়ে আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নেন এবং তাদের সঙ্গে দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে এসে কথা বলার দাবি জানান। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে দুপুর ১২টা ৩২ মিনিটে বঙ্গবাজার মোড়ে যান দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা। এ সময় দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এবং প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ছিলেন।

আন্দোলনকারীরা মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চান, ‘পুরোনো গাছ না কেটে নতুন গাছ লাগানো যেত কি না?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে কিছু ইয়ে করতেই হয়।’

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দাবি নিয়ে এসেছেন, আপনাদের সম্মান প্রদর্শনে এ পর্যন্ত এসেছি। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্মান প্রদর্শনের নমুনা। মেয়র পূর্বনির্ধারিত সভায় ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি। তাই দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’

আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, দক্ষিণ সিটির কিছু আইন, বিধিবিধান আছে। নগরপিতা হিসেবে মেয়রের দায়িত্ব নাগরিকদের ভালোমন্দ দেখা। তার ভাষ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে অনেক গাছ লাগানো হয়েছে। খাল ও জলাধারে গাছ লাগানো হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘দাবিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে দেন। মেয়রের কাছে এসব দাবি উপস্থাপন করা হবে।’ আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো ওই কর্মকর্তার কাছে দেন এবং সিদ্ধান্ত কবে, কীভাবে জানাবেন, তা জানতে চান। পরে প্রধান নির্বাহী আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় চান।

এর আগে মেয়রের উদ্দেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ওনার সিদ্ধান্তটি এতই অজনপ্রিয় হয়েছে যে এমন অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি জনগণের মুখোমুখি হতে পারছেন না। জবাবদিহির জায়গা থেকে তিনি একেবারেই প্রস্তুত নন। অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ওনার কাছে কোন যুক্তি নেই।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মানুষকে ছায়া দেয়া গাছগুলো কেটে ফেলে বাগানবিলাস, কামিনী গাছ লাগিয়েছে? এটা কী ধরনের উপহাস আমাদের সঙ্গে? এটা তো আমাদের করের টাকা। ওনার নিজের পয়সা তো না!’

নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক মেয়রের উদ্দেশে বলেন, ‘ওনার তো একটি দায়িত্ব আছে নাগরিকদের কথা শোনার।’

গাছ কাটা বন্ধের দাবির বিষয়ে দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা সুস্পষ্ট কোন সিদ্ধান্ত না দেয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা তথাকথিত গৎবাঁধা উত্তর দিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন। তারা এটাও বললেন না যে আমাদের দাবি বিষয়ে তারা কবে সিদ্ধান্ত দেবেন। তাই আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হবে।’

সোমবার, ২২ মে ২০২৩ , ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০২ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

গাছকাটার প্রতিবাদে নগর ভবন ঘেরাও করতে গেলে পুলিশি বাধা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

সাতমসজিদ সড়কের বিভাজকের গাছ কাটার প্রতিবাদে এবং বাকি গাছ রক্ষার দাবিতে নগর ভবন অভিমুখে পরিবেশবাদীদের পদযাত্রা -সংবাদ

গাছ কাটা বন্ধের দাবি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোন আশ্বাস পাননি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা। পরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দক্ষিণ সিটির নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচি শেষ করেছেন তারা।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সাতমসজিদ সড়কের বিভাজকের গাছ কাটার প্রতিবাদে এবং বাকি গাছ রক্ষার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবন ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের মিছিল বঙ্গবাজার মোড়ে অ্যানেক্স টাওয়ার মার্কেটের সামনে পৌঁছায়। সে সময় পুলিশ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মিছিলকারীদের বাধা দেন।

পুলিশের বাধা পেয়ে আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নেন এবং তাদের সঙ্গে দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে এসে কথা বলার দাবি জানান। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে দুপুর ১২টা ৩২ মিনিটে বঙ্গবাজার মোড়ে যান দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা। এ সময় দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এবং প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ছিলেন।

আন্দোলনকারীরা মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চান, ‘পুরোনো গাছ না কেটে নতুন গাছ লাগানো যেত কি না?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে কিছু ইয়ে করতেই হয়।’

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দাবি নিয়ে এসেছেন, আপনাদের সম্মান প্রদর্শনে এ পর্যন্ত এসেছি। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্মান প্রদর্শনের নমুনা। মেয়র পূর্বনির্ধারিত সভায় ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি। তাই দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’

আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, দক্ষিণ সিটির কিছু আইন, বিধিবিধান আছে। নগরপিতা হিসেবে মেয়রের দায়িত্ব নাগরিকদের ভালোমন্দ দেখা। তার ভাষ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে অনেক গাছ লাগানো হয়েছে। খাল ও জলাধারে গাছ লাগানো হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘দাবিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে দেন। মেয়রের কাছে এসব দাবি উপস্থাপন করা হবে।’ আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো ওই কর্মকর্তার কাছে দেন এবং সিদ্ধান্ত কবে, কীভাবে জানাবেন, তা জানতে চান। পরে প্রধান নির্বাহী আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় চান।

এর আগে মেয়রের উদ্দেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ওনার সিদ্ধান্তটি এতই অজনপ্রিয় হয়েছে যে এমন অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি জনগণের মুখোমুখি হতে পারছেন না। জবাবদিহির জায়গা থেকে তিনি একেবারেই প্রস্তুত নন। অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ওনার কাছে কোন যুক্তি নেই।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মানুষকে ছায়া দেয়া গাছগুলো কেটে ফেলে বাগানবিলাস, কামিনী গাছ লাগিয়েছে? এটা কী ধরনের উপহাস আমাদের সঙ্গে? এটা তো আমাদের করের টাকা। ওনার নিজের পয়সা তো না!’

নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক মেয়রের উদ্দেশে বলেন, ‘ওনার তো একটি দায়িত্ব আছে নাগরিকদের কথা শোনার।’

গাছ কাটা বন্ধের দাবির বিষয়ে দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা সুস্পষ্ট কোন সিদ্ধান্ত না দেয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা তথাকথিত গৎবাঁধা উত্তর দিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন। তারা এটাও বললেন না যে আমাদের দাবি বিষয়ে তারা কবে সিদ্ধান্ত দেবেন। তাই আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হবে।’