রাশিয়ার দখলে বাখমুত, সৈন্যদের পুরস্কারের ঘোষণা পুতিনের

কয়েক মাসের লড়াইয়ের পর অবশেষে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুত রাশিয়ার দখলে এসেছে বলে দাবি করেছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। এক ভিডিও বার্তায় এ দাবি করেন তিনি।

বাখমুত দখলে নিয়োজিত সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে সেনাদের পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেন, বাখমুতকে পুরোপুরি দখল করে নেয়া হয়েছে। শহরের শেষ অংশে যেখানে ইউক্রেনিয়ান সৈন্যরা উঁচু দালানের মাঝে আশ্রয় নিয়েছিল, তাও এখন রাশিয়ার দখলে। প্রিগোজিন জানান, ওয়াগনার সৈন্যরা শহরটিতে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এ সময়ের মধ্যে শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর শহরটিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়া হবে ও ওয়াগনারের সৈন্যরা বিশ্রাম নিয়ে আবারও নতুন কোনো লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হবে। প্রিগোজিনের দেয়া তথ্যানুসারে, বাখমুত দখলের লড়াইটি চলেছে সবমিলিয়ে ২২৪ দিন। তিনি বলেন, আমরা পুরো শহরটিই দখল করেছি। এর প্রতিটি দালান আমাদের দখলে, যাতে কেউ বলতে না পারে যে, আমরা শুধু শহরের ছোট্ট একটি অংশ দখল করেছি। ভিডিওবার্তায় ওয়াগনারপ্রধান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকেও সম্বোধন করেন। তিনি বলেন, কোনো রসিকতা নয়, ইউক্রেনের সৈন্যরা বাখমুত রক্ষায় সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে। জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আজ যখন আপনার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখা হবে, তখন তার কপালে চুমু দেবেন ও বলবেন, আমি তাকে (বাইডেনকে) হাই জানিয়েছি।’

তবে প্রিগোজিনের এ দাবি অস্বীকার করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সের্গেই শেরেভাতি বলেছেন, বিষয়টি সত্য নয়। আমাদের যোদ্ধারা এখনো বাখমুতে লড়াই করছে। বাখমুতের পরিস্থিতিকে জটিল বলে বর্ণনা করেছেন ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানি তিনি। বাখমুতের দখল গত ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতে মস্কোর প্রথম বড় বিজয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। মূলত মাসের পর মাস ধরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এই শহর দখলে নিতে লড়াই চালিয়ে গেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তাই এই শহরের দখল রাশিয়ার জন্য বিরল সাফল্য বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাখমুতের দখল নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক লাইনের বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ওয়াগনার অ্যাসল্ট ইউনিটের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের ফলে এবং আর্টিলারি ও সাউদার্ন গ্রুপ অব ফোর্সের বিমান হামলার মাধ্যমে আর্টিওমভস্ককে মুক্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’ বাখমুত শহরটি দখলে নেয়া রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে পূর্ব দিক থেকে ইউক্রেনের ভেতরে আরও সহজেই অগ্রসর হতে পারবে রুশ সেনারা। এমন সময় এই খবরটি এলো যখন জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিতে জাপানে অবস্থান করছেন জেলেনস্কি। জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তাকে ইউক্রেনের শান্তি ফর্মুলায় যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, মোদির সঙ্গে তার বৈঠকে ইউক্রেনে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তারা আলাপ করেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর এটিই জেলেনস্কির সঙ্গে মোদির প্রথম সরাসরি বৈঠক। মোদি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ভারত সরকার এবং আমি আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব। ইউক্রেনে চলমান এ যুদ্ধ শুধু অর্থনীতি কিংবা রাজনীতির বিষয় নয়, এটা মানবতার ইস্যু।’

জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বন্ধ করে ‘স্থায়ী শান্তির’ আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে বিশ্বনেতারা ইউক্রেনে রাশিয়ার এ হামলাকে ‘নিষ্ঠুর যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে নিন্দা জানান এবং এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে মনে করেন। এছাড়া ইউক্রেনকে আর্থিক, মানবিক এবং সাময়িক সহায়তা প্রদানের জন্য বিবেচনা করতে বলেন। এদিকে ইউক্রেনকে যদি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হয়, তাহলে তা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য ‘বড় ধরনের ঝুঁকি’ তৈরি করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। কিইভকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার গ্রুসকো এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। জি-৭ সম্মেলনে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যেসব মিত্র দেশের কাছে চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আছে, তারা চাইলে সেগুলো ইউক্রেনকে দিতে পারবে।

সোমবার, ২২ মে ২০২৩ , ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০২ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

রাশিয়ার দখলে বাখমুত, সৈন্যদের পুরস্কারের ঘোষণা পুতিনের

image

বাখমুতের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে রাশিয়া ও ওয়াগনারের পতাকা হাতে ইয়েভগেনি প্রিগোজিন -বিবিসি

কয়েক মাসের লড়াইয়ের পর অবশেষে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুত রাশিয়ার দখলে এসেছে বলে দাবি করেছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। এক ভিডিও বার্তায় এ দাবি করেন তিনি।

বাখমুত দখলে নিয়োজিত সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে সেনাদের পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেন, বাখমুতকে পুরোপুরি দখল করে নেয়া হয়েছে। শহরের শেষ অংশে যেখানে ইউক্রেনিয়ান সৈন্যরা উঁচু দালানের মাঝে আশ্রয় নিয়েছিল, তাও এখন রাশিয়ার দখলে। প্রিগোজিন জানান, ওয়াগনার সৈন্যরা শহরটিতে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এ সময়ের মধ্যে শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর শহরটিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়া হবে ও ওয়াগনারের সৈন্যরা বিশ্রাম নিয়ে আবারও নতুন কোনো লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হবে। প্রিগোজিনের দেয়া তথ্যানুসারে, বাখমুত দখলের লড়াইটি চলেছে সবমিলিয়ে ২২৪ দিন। তিনি বলেন, আমরা পুরো শহরটিই দখল করেছি। এর প্রতিটি দালান আমাদের দখলে, যাতে কেউ বলতে না পারে যে, আমরা শুধু শহরের ছোট্ট একটি অংশ দখল করেছি। ভিডিওবার্তায় ওয়াগনারপ্রধান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকেও সম্বোধন করেন। তিনি বলেন, কোনো রসিকতা নয়, ইউক্রেনের সৈন্যরা বাখমুত রক্ষায় সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে। জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আজ যখন আপনার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখা হবে, তখন তার কপালে চুমু দেবেন ও বলবেন, আমি তাকে (বাইডেনকে) হাই জানিয়েছি।’

তবে প্রিগোজিনের এ দাবি অস্বীকার করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সের্গেই শেরেভাতি বলেছেন, বিষয়টি সত্য নয়। আমাদের যোদ্ধারা এখনো বাখমুতে লড়াই করছে। বাখমুতের পরিস্থিতিকে জটিল বলে বর্ণনা করেছেন ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানি তিনি। বাখমুতের দখল গত ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতে মস্কোর প্রথম বড় বিজয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। মূলত মাসের পর মাস ধরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এই শহর দখলে নিতে লড়াই চালিয়ে গেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তাই এই শহরের দখল রাশিয়ার জন্য বিরল সাফল্য বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাখমুতের দখল নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক লাইনের বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ওয়াগনার অ্যাসল্ট ইউনিটের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের ফলে এবং আর্টিলারি ও সাউদার্ন গ্রুপ অব ফোর্সের বিমান হামলার মাধ্যমে আর্টিওমভস্ককে মুক্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’ বাখমুত শহরটি দখলে নেয়া রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে পূর্ব দিক থেকে ইউক্রেনের ভেতরে আরও সহজেই অগ্রসর হতে পারবে রুশ সেনারা। এমন সময় এই খবরটি এলো যখন জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিতে জাপানে অবস্থান করছেন জেলেনস্কি। জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তাকে ইউক্রেনের শান্তি ফর্মুলায় যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, মোদির সঙ্গে তার বৈঠকে ইউক্রেনে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তারা আলাপ করেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর এটিই জেলেনস্কির সঙ্গে মোদির প্রথম সরাসরি বৈঠক। মোদি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ভারত সরকার এবং আমি আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব। ইউক্রেনে চলমান এ যুদ্ধ শুধু অর্থনীতি কিংবা রাজনীতির বিষয় নয়, এটা মানবতার ইস্যু।’

জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বন্ধ করে ‘স্থায়ী শান্তির’ আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে বিশ্বনেতারা ইউক্রেনে রাশিয়ার এ হামলাকে ‘নিষ্ঠুর যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে নিন্দা জানান এবং এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে মনে করেন। এছাড়া ইউক্রেনকে আর্থিক, মানবিক এবং সাময়িক সহায়তা প্রদানের জন্য বিবেচনা করতে বলেন। এদিকে ইউক্রেনকে যদি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হয়, তাহলে তা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য ‘বড় ধরনের ঝুঁকি’ তৈরি করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। কিইভকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার গ্রুসকো এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। জি-৭ সম্মেলনে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যেসব মিত্র দেশের কাছে চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আছে, তারা চাইলে সেগুলো ইউক্রেনকে দিতে পারবে।