জুন থেকে দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা

জুন থেকে আইএমএফ নির্দেশিত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরনো পদ্ধতি- দুইভাবেই রিভার্জ গণনা হবে। জুনে মুদ্রনীতি ঘোষণার পরে এই দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জুনের প্রথম সপ্তাহেই মুদ্রনীতি ঘোষণার হওয়ার কথা রয়েছে। তবে রিজার্ভ গণনা কবে থেকে শুরু হবে তার নিদিষ্ট কোন তারিখ জানায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত রোববার নতুন মুদ্রানীতির খসড়া উপস্থাপনায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত জুলাইয়ে গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এটি হবে আবদুর রউফ তালুকদারের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি।

রিজার্ভ কী

একটি দেশের রিজার্ভ হলো সেই দেশটির রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশে বা সংস্থা থেকে পাওয়া ঋণ বা অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। সেই মজুদ থেকে আবার অনেক অর্থ খরচ হয়ে যায়। যেমন আমদানি, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশিকর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটন বা বিদেশে শিক্ষা ইত্যাদি খাতে খরচ হয়।

গতকাল পর্যন্ত পুরনো হিসাবে রিজার্রভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন। আর আইএমএফের হিসাবে ২৩ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন।

কী বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘জুনের মধ্যে দুই পদ্ধতিতেই রিজার্ভ গণনা করা হবে। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দুইভাবে রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি দেয়া থাকবে। আমরা আমাদের হিসাব অনুয়ায়ী হিসাব করবো। আর তাদের তাদেরটা তাদের মতো করে তারা গণনা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবারের মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন থাকবে। তার মধ্যে সুদহার করিডোর, একক বিনিময় হার নির্ধারণ, রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতিসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।’অর্থনীতিতে চাপ

বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময়ে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করছে যখন, টাকার মান কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির পারদ প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি, ব্যাংকিং খাত রয়েছে তারল্য সংকটের চাপ। গত এক বছর ধরে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহে টান রয়েছে, লেনদেন ভারসাম্য হয়ে আছে মাথাব্যথার কারণ। রাজস্ব আদায় আশানুরূপ না হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে সরকারের। টাকা মান হারাতে শুরু করায় ডলার সাশ্রয়ে গত বছর জুলাই মাসে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, এখনও তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমদানি কমে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এলেও বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়নি। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি হারিয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে।

তখন মুদ্রানীতিতে নেয়া পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়াজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

মুদ্রানীতি

জানুয়ারি-জুন ২০২৩ সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতির সময় পার হয়েছে সাড়ে চার মাস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক বিভিন্ন সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। হাতে গোনা কয়েকটি সূচকের ক্ষেত্রে মার্চ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে।

চলমান মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম-২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। গত মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৭.৭ শতাংশ, গত মার্চ পর্যন্ত হয়েছে ৩৭.৮২ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে গত মার্চ শেষে অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, মার্চ পর্যন্ত যা হয়েছে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ফের রেপো হার বাড়িয়ে সতর্ক মুদ্রানীতি মাঝে বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও আইএমএফ এর পরামর্শে এখন আবার ছয় মাস অন্তর মুদ্রানীতি ঘোষণার পথে ফিরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ধরে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। আর সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।

মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩ , ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৩ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

জুন থেকে দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা

রমজান আলী

জুন থেকে আইএমএফ নির্দেশিত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরনো পদ্ধতি- দুইভাবেই রিভার্জ গণনা হবে। জুনে মুদ্রনীতি ঘোষণার পরে এই দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জুনের প্রথম সপ্তাহেই মুদ্রনীতি ঘোষণার হওয়ার কথা রয়েছে। তবে রিজার্ভ গণনা কবে থেকে শুরু হবে তার নিদিষ্ট কোন তারিখ জানায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত রোববার নতুন মুদ্রানীতির খসড়া উপস্থাপনায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত জুলাইয়ে গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এটি হবে আবদুর রউফ তালুকদারের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি।

রিজার্ভ কী

একটি দেশের রিজার্ভ হলো সেই দেশটির রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশে বা সংস্থা থেকে পাওয়া ঋণ বা অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। সেই মজুদ থেকে আবার অনেক অর্থ খরচ হয়ে যায়। যেমন আমদানি, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশিকর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটন বা বিদেশে শিক্ষা ইত্যাদি খাতে খরচ হয়।

গতকাল পর্যন্ত পুরনো হিসাবে রিজার্রভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন। আর আইএমএফের হিসাবে ২৩ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন।

কী বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘জুনের মধ্যে দুই পদ্ধতিতেই রিজার্ভ গণনা করা হবে। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দুইভাবে রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি দেয়া থাকবে। আমরা আমাদের হিসাব অনুয়ায়ী হিসাব করবো। আর তাদের তাদেরটা তাদের মতো করে তারা গণনা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবারের মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন থাকবে। তার মধ্যে সুদহার করিডোর, একক বিনিময় হার নির্ধারণ, রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতিসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।’অর্থনীতিতে চাপ

বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময়ে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করছে যখন, টাকার মান কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির পারদ প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি, ব্যাংকিং খাত রয়েছে তারল্য সংকটের চাপ। গত এক বছর ধরে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহে টান রয়েছে, লেনদেন ভারসাম্য হয়ে আছে মাথাব্যথার কারণ। রাজস্ব আদায় আশানুরূপ না হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে সরকারের। টাকা মান হারাতে শুরু করায় ডলার সাশ্রয়ে গত বছর জুলাই মাসে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, এখনও তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমদানি কমে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এলেও বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়নি। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি হারিয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে।

তখন মুদ্রানীতিতে নেয়া পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়াজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

মুদ্রানীতি

জানুয়ারি-জুন ২০২৩ সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতির সময় পার হয়েছে সাড়ে চার মাস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক বিভিন্ন সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। হাতে গোনা কয়েকটি সূচকের ক্ষেত্রে মার্চ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে।

চলমান মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম-২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। গত মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৭.৭ শতাংশ, গত মার্চ পর্যন্ত হয়েছে ৩৭.৮২ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে গত মার্চ শেষে অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, মার্চ পর্যন্ত যা হয়েছে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ফের রেপো হার বাড়িয়ে সতর্ক মুদ্রানীতি মাঝে বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও আইএমএফ এর পরামর্শে এখন আবার ছয় মাস অন্তর মুদ্রানীতি ঘোষণার পথে ফিরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ধরে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। আর সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।