গণহত্যার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির জন্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন

‘বাংলাদেশের জেনোসাইড (গণহত্যা) স্বীকৃতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনের আবদুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে আমরা একাত্তর, ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম ও প্রজন্ম একাত্তর সংগঠন। এতে ইউরোপের একদল প্রতিনিধি অংশ নেন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ৫১ বছরেও গণহত্যার স্বীকৃতি মেলেনি। এর অন্যতম কারণ আমাদের রাজনৈতিক বিভেদ, যা বিদেশেও বিদ্যমান। সবপক্ষ মিলে চাইলে এই কাজ আরও দ্রুত হবে। এই ধরনের ঘটনার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেতে হলে অনেক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখন স্নায়ুযুদ্ধের জন্য বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। গণহত্যার স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় চলমান স্নায়ুযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের ওপর তখনকার বৈশ্বিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। পশ্চিমারা পাকিস্তানকে বন্ধু ভাবায় এতদিন ধরে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করা যায়নি।

নেদারল্যান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘গণহত্যা বিশ্ব ইতিহাসের একটি অংশ। প্রকৃত ইতিহাস মানুষের কাছে জানাতে হলে ঘটনাটিকে বিশ্বব্যাপী সংরক্ষণ করতে হবে। এটি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে। এই ধরনের ঘটনার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেতে হলে অনেক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। এই কারণে রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে এবং এই ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশি ৫০০ শিশুকে দত্তক নিয়েছিল। তাদের নিজস্ব কোন স্বীকৃতি ও পরিচয় ছিল না। এটিকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো কাজ করছে। তবে রাজনীতির সঙ্গে এটির অনেক সম্পর্ক রয়েছে। এটি সময় লাগতে পারে তবে এটি স্বীকৃতি পাবে। কারণ আর্মেনিয়ন গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অনেক পরে স্বীকৃতি পেয়ছিল। ১৯৭১ সালে প্রথম গণহত্যার শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি আহ্বান করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল গণহত্যার মূলকেন্দ্র। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নৃশংস গণহত্যার নজির নেই। দেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা এই গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল। এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন রয়েছে। যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির যোগ্যতা রাখে।

ঢাবির সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে এবং পূর্বপরিকল্পনা একাত্তরে হত্যাযজ্ঞ চালায়। যার ফলে যুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাঙালি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনাকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি। ফলে যুদ্ধের এত বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমাদের কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন নেদারল্যান্ডস ইবিএফের সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, সহসভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, লে. কর্নেল (অব) সাজ্জাদ জহির, নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ্যানথনি হলসল্যাগ, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবিব। স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়ক প্রকৌশলী হিলাল ফয়েজী, সভাপ্রধান ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান।

মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩ , ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৩ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

গণহত্যার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির জন্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন

প্রতিনিধি, ঢাবি

image

‘বাংলাদেশের জেনোসাইড (গণহত্যা) স্বীকৃতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনের আবদুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে আমরা একাত্তর, ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম ও প্রজন্ম একাত্তর সংগঠন। এতে ইউরোপের একদল প্রতিনিধি অংশ নেন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ৫১ বছরেও গণহত্যার স্বীকৃতি মেলেনি। এর অন্যতম কারণ আমাদের রাজনৈতিক বিভেদ, যা বিদেশেও বিদ্যমান। সবপক্ষ মিলে চাইলে এই কাজ আরও দ্রুত হবে। এই ধরনের ঘটনার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেতে হলে অনেক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখন স্নায়ুযুদ্ধের জন্য বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। গণহত্যার স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় চলমান স্নায়ুযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের ওপর তখনকার বৈশ্বিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। পশ্চিমারা পাকিস্তানকে বন্ধু ভাবায় এতদিন ধরে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করা যায়নি।

নেদারল্যান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘গণহত্যা বিশ্ব ইতিহাসের একটি অংশ। প্রকৃত ইতিহাস মানুষের কাছে জানাতে হলে ঘটনাটিকে বিশ্বব্যাপী সংরক্ষণ করতে হবে। এটি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে। এই ধরনের ঘটনার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেতে হলে অনেক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। এই কারণে রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে এবং এই ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশি ৫০০ শিশুকে দত্তক নিয়েছিল। তাদের নিজস্ব কোন স্বীকৃতি ও পরিচয় ছিল না। এটিকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো কাজ করছে। তবে রাজনীতির সঙ্গে এটির অনেক সম্পর্ক রয়েছে। এটি সময় লাগতে পারে তবে এটি স্বীকৃতি পাবে। কারণ আর্মেনিয়ন গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অনেক পরে স্বীকৃতি পেয়ছিল। ১৯৭১ সালে প্রথম গণহত্যার শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি আহ্বান করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল গণহত্যার মূলকেন্দ্র। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নৃশংস গণহত্যার নজির নেই। দেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা এই গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল। এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন রয়েছে। যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির যোগ্যতা রাখে।

ঢাবির সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে এবং পূর্বপরিকল্পনা একাত্তরে হত্যাযজ্ঞ চালায়। যার ফলে যুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাঙালি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনাকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি। ফলে যুদ্ধের এত বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমাদের কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন নেদারল্যান্ডস ইবিএফের সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, সহসভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, লে. কর্নেল (অব) সাজ্জাদ জহির, নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ্যানথনি হলসল্যাগ, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবিব। স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়ক প্রকৌশলী হিলাল ফয়েজী, সভাপ্রধান ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান।