দর্শনীয় হয় উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘শেখ হাসিনা সড়ক’। জেলা সদর থেকে বিজয়নগর উপজেলার সীমনা পর্যন্ত সোয়া ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক বিজয়নগর উপজেলার মানুষের যাতায়ত দুর্ভোগ ঘুচিয়েছে। এখন আর ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে না তাদের। যানবাহন চলাচলের জন্যে এরইমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে সড়কটি। এ সড়ক শুধু যে শহরের সাথে দূরত্বই কমাবে তা নয়, ভূমিকা রাখবে স্থানীয় কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে।
এদিকে নদী আর বিলের বুকে নির্মিত এই সড়ক আর সেতু ভ্রমন পিপাসু মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছে। খাল-বিল,নদী-হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে ভিড় করছেন শতশত মানুষ। আগে হাইওয়ে সড়ক ধরে সরাইল বা আখাউড়া ঘুরে যেতে হতো ওই উপজেলায়। সময়ও লাগতো দেড়-দু’ঘন্টা। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। বর্ষাকালে হাওর পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে তাদের একমাত্র ভরসা ছিলো নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগরের পত্তন ইউনিয়নের সীমনা পর্যন্ত প্রায় ৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হলেও এখন কাজ প্রায় শেষ। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ১৩৬ কোটি টাকা। মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টাতেই হয়েছে হাওরের বুকে পিচঢালা এই পথ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুত্র জানিয়েছে,শহর সংলগ্ন তিতাস নদীতে ৩১৫ মিটার এবং লইসকা খালে ৩০৮ মিটার দীর্ঘ দু’টি সেতু এবং এর সাথে প্রায় ১২শ মিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সড়ক রক্ষায় পাশে দেয়া হয়েছে ব্লক। এই কাজটি করেছে মেসার্স মোস্তফা কামাল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল বলেন- এই এলাকার মানুষের জন্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টায় নির্মিত এই সড়ক সর্বক্ষেত্রে এই উপজেলার মানুষের আমুল পরিবর্তন ঘটাবে। ব্যবসায়িক চিন্তা না করে কাজটির স্থায়ীত্ব এবং গুনগতমান কিভাবে ভালো হয় সেদিকেই লক্ষ্য ছিলো আমাদের। কারণ ভালো কাজের জন্যে এলাকার মানুষের কাছে আমরাও যাতে স্মরনীয় হয়ে থাকি। সড়ক চালু হওয়ায় উচ্ছসিত বিজয়নগরের মানুষ। পত্তন ইউনিয়নের লক্ষ্মীমোড়া গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান বলেন-আগে উৎপাদিত শাকসবজি শহরের হাটে তুলতে কষ্ট হতো। হাওর এলাকা হওয়ায় নৌকায় করে শহরে আসতে আসতে বেলা হয়ে যেত। ফলে সবজির ভালো দাম পাওয়া যেতনা। না। এখন মাত্র আধা ঘণ্টাতেই পৌঁছতে পারছেন শহরের হাটে। মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম জানান, আগে গ্রামের আশাপাশে কলেজ না থাকায় মেয়েদের শিক্ষা স্কুল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। ছেলেরা শহরে গিয়ে পড়তে পারলেও দূরের পথ হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে শহরে পড়তে দেওয়া হতো না মেয়েদের। এখন সড়ক চালু হলে মেয়েরাও শহরে গিয়ে ভালো কলেজে পড়তে পারবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান জানান-সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত। দুটি ব্রীজের এপ্রোচের কার্পেটিং শেষ। সড়কের প্রথম অংশের ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটারের কার্পেটিংয়ের কাজ এখন চলছে। বাকি ৪ কিলোমিটারের উন্নয়নের জন্যে প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া সড়কটিতে কিছু পুরনো ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। সেগুলো মেরামত ও পুনর্নির্মাণের জন্যেও প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : শেখ হাসিনা সড়ক খুলে দেয়ায় উৎফুল্ল বিনোদন পিপাসুরা -সংবাদ
আরও খবরবুধবার, ২৪ মে ২০২৩ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৪ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪
জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : শেখ হাসিনা সড়ক খুলে দেয়ায় উৎফুল্ল বিনোদন পিপাসুরা -সংবাদ
দর্শনীয় হয় উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘শেখ হাসিনা সড়ক’। জেলা সদর থেকে বিজয়নগর উপজেলার সীমনা পর্যন্ত সোয়া ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক বিজয়নগর উপজেলার মানুষের যাতায়ত দুর্ভোগ ঘুচিয়েছে। এখন আর ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে না তাদের। যানবাহন চলাচলের জন্যে এরইমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে সড়কটি। এ সড়ক শুধু যে শহরের সাথে দূরত্বই কমাবে তা নয়, ভূমিকা রাখবে স্থানীয় কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে।
এদিকে নদী আর বিলের বুকে নির্মিত এই সড়ক আর সেতু ভ্রমন পিপাসু মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছে। খাল-বিল,নদী-হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে ভিড় করছেন শতশত মানুষ। আগে হাইওয়ে সড়ক ধরে সরাইল বা আখাউড়া ঘুরে যেতে হতো ওই উপজেলায়। সময়ও লাগতো দেড়-দু’ঘন্টা। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। বর্ষাকালে হাওর পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে তাদের একমাত্র ভরসা ছিলো নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগরের পত্তন ইউনিয়নের সীমনা পর্যন্ত প্রায় ৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হলেও এখন কাজ প্রায় শেষ। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ১৩৬ কোটি টাকা। মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টাতেই হয়েছে হাওরের বুকে পিচঢালা এই পথ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুত্র জানিয়েছে,শহর সংলগ্ন তিতাস নদীতে ৩১৫ মিটার এবং লইসকা খালে ৩০৮ মিটার দীর্ঘ দু’টি সেতু এবং এর সাথে প্রায় ১২শ মিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সড়ক রক্ষায় পাশে দেয়া হয়েছে ব্লক। এই কাজটি করেছে মেসার্স মোস্তফা কামাল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল বলেন- এই এলাকার মানুষের জন্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টায় নির্মিত এই সড়ক সর্বক্ষেত্রে এই উপজেলার মানুষের আমুল পরিবর্তন ঘটাবে। ব্যবসায়িক চিন্তা না করে কাজটির স্থায়ীত্ব এবং গুনগতমান কিভাবে ভালো হয় সেদিকেই লক্ষ্য ছিলো আমাদের। কারণ ভালো কাজের জন্যে এলাকার মানুষের কাছে আমরাও যাতে স্মরনীয় হয়ে থাকি। সড়ক চালু হওয়ায় উচ্ছসিত বিজয়নগরের মানুষ। পত্তন ইউনিয়নের লক্ষ্মীমোড়া গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান বলেন-আগে উৎপাদিত শাকসবজি শহরের হাটে তুলতে কষ্ট হতো। হাওর এলাকা হওয়ায় নৌকায় করে শহরে আসতে আসতে বেলা হয়ে যেত। ফলে সবজির ভালো দাম পাওয়া যেতনা। না। এখন মাত্র আধা ঘণ্টাতেই পৌঁছতে পারছেন শহরের হাটে। মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম জানান, আগে গ্রামের আশাপাশে কলেজ না থাকায় মেয়েদের শিক্ষা স্কুল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। ছেলেরা শহরে গিয়ে পড়তে পারলেও দূরের পথ হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে শহরে পড়তে দেওয়া হতো না মেয়েদের। এখন সড়ক চালু হলে মেয়েরাও শহরে গিয়ে ভালো কলেজে পড়তে পারবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান জানান-সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত। দুটি ব্রীজের এপ্রোচের কার্পেটিং শেষ। সড়কের প্রথম অংশের ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটারের কার্পেটিংয়ের কাজ এখন চলছে। বাকি ৪ কিলোমিটারের উন্নয়নের জন্যে প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া সড়কটিতে কিছু পুরনো ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। সেগুলো মেরামত ও পুনর্নির্মাণের জন্যেও প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে।