মেয়র পদে নেই বিএনপি, রয়েছে বহিষ্কৃত ২৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী

দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা শেষে বাকি শুধু রাত পোহাবার। বুধবার রাত পোহালেই আগামীকাল ২৫ মে বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা, মাঝখানে ঘটনাবহুল নির্বাচনী পরিস্থিতি-পরিবেশ ও এগুলো নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, সংশয়ের ধূম্রজাল, শঙ্কার তাড়না এত সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয়বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে নগর ও নগরের বাইরে দেশব্যাপী তুমুল আলোড়নের ঝাঁকি দিয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ পর্ব চলবে। সিটি করপোরেশনের ৪৮০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর পূর্বে গতকাল দিবাগত রাত ১২টায় সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যায়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয়বারের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই, মনোনয়নপত্র বাতিল ও প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ শেষে ৯ মে শুরু হয় মেয়র এবং ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচনী প্রচারণা। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় মেয়র পদে তাদের কোন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেননি। তবে সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বিএনপির অংশ নেয়া এমন ২৯ জন প্রার্থীকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় পুরো নির্বাচনী আমেজ ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় কিছুটা ভাটার টান দেখা গেলেও দিন যত গড়িয়েছে নির্বাচনী আবহ ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ৪/৫টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং একজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কর্মী-সমর্থকদের হুমকি এবং তার ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু গত রাত ১২টা থেকে আজ বুধবার নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ তাই সহিংসতার আশঙ্কা কারো মনে তেমন উঁকি দিচ্ছে না। তবু নির্বাচন বলে কথা। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অন্য কয়েকজন কর্মকর্তা নির্বাচন উপলক্ষে পৃথক পৃথকভাবে গাজীপুরে এসে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন। স্থানীয় জিএমপি, জেলা প্রশাসন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার আশ্বাস বারে বারে দিচ্ছেন। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথাও তারা বলেছেন। এ ছাড়া সরকারি দল মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহযোগিতার আশ্বাস বার বার দিয়েছেন। সব মিলিয়ে গাজীপুর সিটির প্রায় বারো লাখ ভোটারসহ ত্রিশ লাখেরও বেশি নগরবাসী প্রত্যাশা করছেন একটি সুুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসীর রায়ে সিটির কর্ণধার মেয়রসহ ৫৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯ জন মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন যাদের মাধ্যমে সিটির প্রত্যাশিত উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে।

অন্য কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব অথবা নির্বাচন কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হলে অর্থাৎ বলা যায় জনরায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত হলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী ফলাফল কী দাঁড়ায় এ নিয়েই এখন বড় ভাবনা সিটির ভোটার, সাধারণ নাগরিক, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক এমনকি পুরো দেশবাসীর। নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থীর অনুপস্থিতি অর্থাৎ অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিজয় অনিবার্য এমন ভাবনা স্বাভাবিক হলেও নির্বাচনে মেয়র পদে চমক সৃষ্টি করে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা রাজনীতি ও নির্বাচনে একেবারেই নবাগত জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন । তার প্রার্থী হবার ব্যাপারটি শুরুতে সবার মনে অচিন্তনীয় ও চমক সৃষ্টিকারী মনে হলেও নির্বাচনী দৃষ্টিপট বদলে যেতে শুরু করে। কৌশলগত কারণে তিনি প্রার্থী হয়েছেন অথবা প্রার্থী করা হয়েছে এমন ভাবনাও অনেককে ভাবিত করেছে। তবে মেয়র থাকাকালীন জাহাঙ্গীর আলমের সিটির বিভিন্ন উন্নয়নমুখী অবকাঠামোগত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়ায় পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নাগরিক সেবাখাত বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে তার কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা ও তার ইমেজ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে মেয়র থাকাকালীন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার ও মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দীর্ঘ ১৮ মাস পরে আবার দলে ফিরিয়ে আনা এমন ব্যাপারগুলো ছিল ঘটনাবহুল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের

নয় দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার নয় দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকালদুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ছয়দানার বাসভবন প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার মায়ের পক্ষে ইশতেহারটি পাঠ করেন।

নির্বাচনী ইশতেহারে জায়েদা খাতুন বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরের আগামী ৫ বছর হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণিত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী তার সব অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করব। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করব।

প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রয়োজন এবং প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি চলাচল উপযোগী রাস্তা নির্মাণ করব। সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় রাজেন্দ্রপুর থেকে শুরু করে টঙ্গী হয়ে আশুলিয়া, কোনাবাড়ি কাশিমপুর কাউলতিয়াকে সংযুক্ত করে আউটার রিং রোড নির্মাণ করে যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করব যাতায়াতের জন্য একাধিক বিকল্প রাস্তা এবং ব্রিজ নির্মাণ করব।

তিনি বলেন, আমার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম মাদক, সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজীর বিরূদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় গাজীপুরের কতিপয় গড়যন্ত্রকারী জনসমর্থনহীন কিছু ব্যক্তি নানামুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং বিপুল পরিমাণ কালো টাকা খরচ করে অপপ্রচার চালিয়ে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রথমে দল এবং পরবর্তিতে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সাময়িক বরখাস্তের পর প্রায় ১৮ মাস পার হলেও তারা আপনাদের নির্বাচিত মেয়রের নামে অদ্যাবধি কোন দুর্নীতি অনিয়ম প্রমাণ করতে পারে নাই। মিথ্যা ও বানোয়াট ও ভিত্তিহীন চিঠি দিয়ে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা ভোটারদের অবমাননার শামিল।

নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি বলেন, গাজীপুরকে একটি আধুনিক স্মার্ট ক্লিন এবং গ্রিন সিটি হিসাবে গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ। হোল্ডিং অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে ডিজিটাল হোল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন করব এং স্মার্ট হোল্ডিং কার্ড প্রদান করব। এতে করে নাগরিকগণ অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করতে পারবে।

সিটিতে ই-ট্রেড লাইসেন্স চালু করব। এতে করে নাগরিকগণ অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন এবং নবায়ন করতে পারবে। যেই দিন আবেদন করা হবে সেই দিনই লাইসেন্স ইস্যু/নবায়ন হবে। সিটি করপোরেশনের সেবা সহজতর করার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হবে।

জায়েদা খাতুন বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত শ্রমিকদের তথ্য নিয়ে একটি ডিজিটাল ডাটাবেইজ প্রনোয়ন করব এতে শ্রমিকদের বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ থাকবে। শ্রমিকদের সুচিকিৎসার জন্য সিটি করপোরেশন এর নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হবে সেখানে নামমাত্র মূল্যে শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে । শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী রনি গাজীপুর সিটির উন্নয়নে কাজ করতে চান

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতী প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনির ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সকালে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় নিজ বাসভবনে তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটিকে পরিচ্ছন্ন সবুজ নাগরিক সেবা সহজ, জনবান্ধব, শিল্প বান্ধব, বিকল্প রাস্তা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের যানজটমুক্ত যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সিটি গড়তে চান।

ইশতেহারে তিনি বলেন, তার বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভার দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান, পরবর্তীতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হিসেবে গাজীপুরের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। অন্য চাচা মরহুম সাহাজ উদ্দিন সরকারও টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন।

রনি বলেন গাজীপুরের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখে এলাকায় উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন টঙ্গীর সরকার পরিবার। পারিবারিক ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতেই চান তিনি।

বুধবার, ২৪ মে ২০২৩ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৪ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

গাজীপুর : আগামীকাল ভোট

মেয়র পদে নেই বিএনপি, রয়েছে বহিষ্কৃত ২৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী

প্রতিনিধি, গাজীপুর

দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা শেষে বাকি শুধু রাত পোহাবার। বুধবার রাত পোহালেই আগামীকাল ২৫ মে বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা, মাঝখানে ঘটনাবহুল নির্বাচনী পরিস্থিতি-পরিবেশ ও এগুলো নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, সংশয়ের ধূম্রজাল, শঙ্কার তাড়না এত সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয়বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে নগর ও নগরের বাইরে দেশব্যাপী তুমুল আলোড়নের ঝাঁকি দিয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ পর্ব চলবে। সিটি করপোরেশনের ৪৮০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর পূর্বে গতকাল দিবাগত রাত ১২টায় সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যায়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয়বারের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই, মনোনয়নপত্র বাতিল ও প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ শেষে ৯ মে শুরু হয় মেয়র এবং ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচনী প্রচারণা। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় মেয়র পদে তাদের কোন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেননি। তবে সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বিএনপির অংশ নেয়া এমন ২৯ জন প্রার্থীকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় পুরো নির্বাচনী আমেজ ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় কিছুটা ভাটার টান দেখা গেলেও দিন যত গড়িয়েছে নির্বাচনী আবহ ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ৪/৫টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং একজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কর্মী-সমর্থকদের হুমকি এবং তার ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু গত রাত ১২টা থেকে আজ বুধবার নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ তাই সহিংসতার আশঙ্কা কারো মনে তেমন উঁকি দিচ্ছে না। তবু নির্বাচন বলে কথা। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অন্য কয়েকজন কর্মকর্তা নির্বাচন উপলক্ষে পৃথক পৃথকভাবে গাজীপুরে এসে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন। স্থানীয় জিএমপি, জেলা প্রশাসন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার আশ্বাস বারে বারে দিচ্ছেন। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথাও তারা বলেছেন। এ ছাড়া সরকারি দল মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহযোগিতার আশ্বাস বার বার দিয়েছেন। সব মিলিয়ে গাজীপুর সিটির প্রায় বারো লাখ ভোটারসহ ত্রিশ লাখেরও বেশি নগরবাসী প্রত্যাশা করছেন একটি সুুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসীর রায়ে সিটির কর্ণধার মেয়রসহ ৫৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯ জন মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন যাদের মাধ্যমে সিটির প্রত্যাশিত উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে।

অন্য কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব অথবা নির্বাচন কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হলে অর্থাৎ বলা যায় জনরায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত হলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী ফলাফল কী দাঁড়ায় এ নিয়েই এখন বড় ভাবনা সিটির ভোটার, সাধারণ নাগরিক, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক এমনকি পুরো দেশবাসীর। নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থীর অনুপস্থিতি অর্থাৎ অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিজয় অনিবার্য এমন ভাবনা স্বাভাবিক হলেও নির্বাচনে মেয়র পদে চমক সৃষ্টি করে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা রাজনীতি ও নির্বাচনে একেবারেই নবাগত জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন । তার প্রার্থী হবার ব্যাপারটি শুরুতে সবার মনে অচিন্তনীয় ও চমক সৃষ্টিকারী মনে হলেও নির্বাচনী দৃষ্টিপট বদলে যেতে শুরু করে। কৌশলগত কারণে তিনি প্রার্থী হয়েছেন অথবা প্রার্থী করা হয়েছে এমন ভাবনাও অনেককে ভাবিত করেছে। তবে মেয়র থাকাকালীন জাহাঙ্গীর আলমের সিটির বিভিন্ন উন্নয়নমুখী অবকাঠামোগত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়ায় পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নাগরিক সেবাখাত বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে তার কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা ও তার ইমেজ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে মেয়র থাকাকালীন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার ও মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দীর্ঘ ১৮ মাস পরে আবার দলে ফিরিয়ে আনা এমন ব্যাপারগুলো ছিল ঘটনাবহুল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের

নয় দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার নয় দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকালদুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ছয়দানার বাসভবন প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার মায়ের পক্ষে ইশতেহারটি পাঠ করেন।

নির্বাচনী ইশতেহারে জায়েদা খাতুন বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরের আগামী ৫ বছর হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণিত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী তার সব অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করব। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করব।

প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রয়োজন এবং প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি চলাচল উপযোগী রাস্তা নির্মাণ করব। সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় রাজেন্দ্রপুর থেকে শুরু করে টঙ্গী হয়ে আশুলিয়া, কোনাবাড়ি কাশিমপুর কাউলতিয়াকে সংযুক্ত করে আউটার রিং রোড নির্মাণ করে যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করব যাতায়াতের জন্য একাধিক বিকল্প রাস্তা এবং ব্রিজ নির্মাণ করব।

তিনি বলেন, আমার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম মাদক, সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজীর বিরূদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় গাজীপুরের কতিপয় গড়যন্ত্রকারী জনসমর্থনহীন কিছু ব্যক্তি নানামুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং বিপুল পরিমাণ কালো টাকা খরচ করে অপপ্রচার চালিয়ে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রথমে দল এবং পরবর্তিতে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সাময়িক বরখাস্তের পর প্রায় ১৮ মাস পার হলেও তারা আপনাদের নির্বাচিত মেয়রের নামে অদ্যাবধি কোন দুর্নীতি অনিয়ম প্রমাণ করতে পারে নাই। মিথ্যা ও বানোয়াট ও ভিত্তিহীন চিঠি দিয়ে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা ভোটারদের অবমাননার শামিল।

নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি বলেন, গাজীপুরকে একটি আধুনিক স্মার্ট ক্লিন এবং গ্রিন সিটি হিসাবে গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ। হোল্ডিং অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে ডিজিটাল হোল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন করব এং স্মার্ট হোল্ডিং কার্ড প্রদান করব। এতে করে নাগরিকগণ অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করতে পারবে।

সিটিতে ই-ট্রেড লাইসেন্স চালু করব। এতে করে নাগরিকগণ অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন এবং নবায়ন করতে পারবে। যেই দিন আবেদন করা হবে সেই দিনই লাইসেন্স ইস্যু/নবায়ন হবে। সিটি করপোরেশনের সেবা সহজতর করার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হবে।

জায়েদা খাতুন বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত শ্রমিকদের তথ্য নিয়ে একটি ডিজিটাল ডাটাবেইজ প্রনোয়ন করব এতে শ্রমিকদের বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ থাকবে। শ্রমিকদের সুচিকিৎসার জন্য সিটি করপোরেশন এর নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হবে সেখানে নামমাত্র মূল্যে শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে । শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী রনি গাজীপুর সিটির উন্নয়নে কাজ করতে চান

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতী প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনির ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সকালে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় নিজ বাসভবনে তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটিকে পরিচ্ছন্ন সবুজ নাগরিক সেবা সহজ, জনবান্ধব, শিল্প বান্ধব, বিকল্প রাস্তা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের যানজটমুক্ত যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সিটি গড়তে চান।

ইশতেহারে তিনি বলেন, তার বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভার দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান, পরবর্তীতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হিসেবে গাজীপুরের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। অন্য চাচা মরহুম সাহাজ উদ্দিন সরকারও টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন।

রনি বলেন গাজীপুরের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখে এলাকায় উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন টঙ্গীর সরকার পরিবার। পারিবারিক ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতেই চান তিনি।