রাজশাহী নগরীতে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির ঘটনায় বিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে আরেকটি মামলা। এছাড়া গতকাল তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কুশপুতুল দাহ করা করা হয়েছে।
এদিন বিএনপির পদযাত্রাকে ঘিরে জনমনে কিছুটা হলেও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নগরীর অন্যান্য প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে এসেছে। এছাড়া নগরীর ভুবন মোহন পার্কের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়সহ মধ্য নগরীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সড়কে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ।
সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচির কারণে সকাল থেকে মহানগরীর মালোপাড়া এলাকায় বিএনপি কার্যালয়, ভূবনমোহন পার্ক, গণকপাড়া, সোনাদীঘি মোড় ও বাটার মোড় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে পুলিশ। মাঠে নেমেছে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সিআরটি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের এপিসি গাড়ি এবং জলকামান। পুলিশ জানিয়েছে, সিটি নির্বাচনের আগে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করলে মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য পুলিশ কমিশনার সব ধরনের পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে বিএনপির দাবি, সিটি নির্বাচন নয়; জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের ঘটনায় কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির ঘটনায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদের নামে আরেকটি মামলা হয়েছে। গত সোমবার নগরীর কাশিয়াডাঙা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান সোমবার রাত ৯টার দিকে নতুন এ মামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তার থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতার পরিকল্পনা ও আগামীর নির্বাচন বানচালের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া চাঁদের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একরামুল হক নামে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। থানার ওসি সেলিম বাদশা অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিধি-নিষেধের কারণে সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ আছে। তাই বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিও নগরীতে করতে দেয়া হবে না।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম জানান, বিএনপির কর্মসূচির আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সে কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২৩-এর তফসিল ঘোষিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে। অনুমোদিত যেকোন ধরনের পদযাত্রায় রাজশাহী মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির সম্ভাবনা থাকে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও জননিরাপত্তার জন্য গতকাল থেকে রাজশাহী মহানগরী আইন, ১৯৯২-এর ধারা-৩০ মোতাবেক আরএমপির পুলিশ কমিশনার নগরীতে সব ধরনের পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে কর্মসূচির বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ডিকেন জানান, ইতোমধ্যে তাদের দলীয় কার্যালয় পুলিশ ঘিরে রেখেছে। লোকজনকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এখানকার দোকানপাটও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই এ অবস্থায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিক্ষোভ মিছিলটি বানেশ্বর সরকারি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়। পরে পিয়াজহাটি এলাকা থেকে ঘুরে বানেশ্বর ট্রাফিক মোড়ে এসে শেষ হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিবাদ সভা থেকে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুতুল দাহ করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতা আবু সাঈদ চাঁদকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই জনগণ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ প্রমুখ।
বুধবার, ২৪ মে ২০২৩ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৪ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪
জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী
রাজশাহী নগরীতে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির ঘটনায় বিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে আরেকটি মামলা। এছাড়া গতকাল তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কুশপুতুল দাহ করা করা হয়েছে।
এদিন বিএনপির পদযাত্রাকে ঘিরে জনমনে কিছুটা হলেও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নগরীর অন্যান্য প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে এসেছে। এছাড়া নগরীর ভুবন মোহন পার্কের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়সহ মধ্য নগরীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সড়কে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ।
সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচির কারণে সকাল থেকে মহানগরীর মালোপাড়া এলাকায় বিএনপি কার্যালয়, ভূবনমোহন পার্ক, গণকপাড়া, সোনাদীঘি মোড় ও বাটার মোড় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে পুলিশ। মাঠে নেমেছে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সিআরটি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের এপিসি গাড়ি এবং জলকামান। পুলিশ জানিয়েছে, সিটি নির্বাচনের আগে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করলে মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য পুলিশ কমিশনার সব ধরনের পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে বিএনপির দাবি, সিটি নির্বাচন নয়; জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের ঘটনায় কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির ঘটনায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদের নামে আরেকটি মামলা হয়েছে। গত সোমবার নগরীর কাশিয়াডাঙা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান সোমবার রাত ৯টার দিকে নতুন এ মামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তার থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতার পরিকল্পনা ও আগামীর নির্বাচন বানচালের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া চাঁদের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একরামুল হক নামে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। থানার ওসি সেলিম বাদশা অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিধি-নিষেধের কারণে সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ আছে। তাই বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিও নগরীতে করতে দেয়া হবে না।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম জানান, বিএনপির কর্মসূচির আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সে কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২৩-এর তফসিল ঘোষিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে। অনুমোদিত যেকোন ধরনের পদযাত্রায় রাজশাহী মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির সম্ভাবনা থাকে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও জননিরাপত্তার জন্য গতকাল থেকে রাজশাহী মহানগরী আইন, ১৯৯২-এর ধারা-৩০ মোতাবেক আরএমপির পুলিশ কমিশনার নগরীতে সব ধরনের পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে কর্মসূচির বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ডিকেন জানান, ইতোমধ্যে তাদের দলীয় কার্যালয় পুলিশ ঘিরে রেখেছে। লোকজনকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এখানকার দোকানপাটও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই এ অবস্থায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিক্ষোভ মিছিলটি বানেশ্বর সরকারি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়। পরে পিয়াজহাটি এলাকা থেকে ঘুরে বানেশ্বর ট্রাফিক মোড়ে এসে শেষ হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিবাদ সভা থেকে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুতুল দাহ করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতা আবু সাঈদ চাঁদকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই জনগণ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ প্রমুখ।