আম বাগানে বছরে আয় ১৫ লাখ টাকা

কুয়াকাটার লতাচাপলীর জাহাঙ্গীর মুসল্লি। পেশায় লাইব্রেরিয়ান। ২০০৫ সালে তাবলীগ জামাতের সঙ্গে দাওয়াতের কাজে গিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে গিয়ে এক আমের বাগানের মালিকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় আমের বাগান করার শখ জাগে । সেখান থেকেই চারা নিয়ে বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন জায়গায় রোপন করেন। পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে তার গাছে আম ধরে। ভালো দামে মোটা অংক টাকায় বিক্রয় করে তার শখ বাণিজ্যে রূপ নেয়। এরপর তিনি ৬ ছয় একর ফসলি জমিতে আমের বাগান করার স্বপ্ন দেখেন। ২০১০ সালের ওই বাগানে ২০১৫ সালে আম আসে। ওই বছরে তিনি পাঁচ লাখ টাকার আম বিক্রি করেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা এনে এলাকার অনেককে দিয়েছেন। এখন এলাকার লোকজন তার আমের বাগান দেখতে আসেন। এখানে ভালো ফল হওয়ায় তিনি মিশ্র বাগানের পরিকল্পনা করেন। তার বাগানে আমের পাশাপাশি পেয়ারা, লিচু, লেবু কাঁঠাল, কলাগাছ রোপণ করেছেন।

তিনি দেশী-বিদেশী ২০ থেকে ২২ প্রজাতির আমের চারা রোপন করলেও কিছু জাতের আমের চারা মরে গেছে। এখন তার বাগানে ১৫ থেকে ১৬ প্রজাতির আম হয়। আম গাছের নিচের সবুজ ঘাস খাওয়ার জন্য তিনি ভেড়া পালন করেন। তার খামারে ৭৫টি ভেড়া আছে। প্রতিবছর তিনি ভেড়ার খামার থেকে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা আয় করেন। শুধু ভেড়া নয় আমের বাগানে পাশে একটি ঘর তৈরি করে ১২টি গরুর লালন-পালন করছেন তিনি। প্রতিবছর গরুর থেকে তার আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হয়।

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, রোপণকৃত গাছের চারাগুলো এখন বড় বড় ফলবান বৃক্ষ। গাছের ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় বিভিন্ন রংয়ের আম। আর সেসব পাকা আমের গন্ধে ম ম করছে সমগ্র আম বাগান। আমের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছে ডাল। এই বাগানে এখন ফজলি, আশ্বিনা, হিমসাগর, আম্রপালি, বাড়িফোর, লোকনা, ব্যানানা, কাটিমন, হাড়িভাঙ্গা, কিউজাই, সূর্যডিম, আমেরিকান পারমাল, ফোর কেজি, বোম্বাই, রানীবুক, মিশ্রিকান্ড, গোপাল ভোগ, মল্লিকা, গরুমতিসহ দেশী প্রজাতির আম আছে। পেয়ারা গাছগুলোতে পেয়ারা ঝুলছে আছে। লেবু গাছে ধরেছে অসংখ্য লেবু। কাঁঠাল গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলছে কাঁঠাল। পুকুর চারটি মাছে ভরা। ভেড়াগুলো গাছের নিচের সবুজ ঘাস খাচ্ছে। বাগানের মধ্যে ছোটাছুটি করছে।

জাহাঙ্গীর মুসুল্লি আমের বাগানের মধ্যে নির্মাণ করেছেন বায়তুল কারিম জামে মসজিদ। এলাকার মুসলিম শিশুরা ওই মসজিদের আওতায় মাদ্রাসায় মক্তবের লেখাপড়া শিখছেন। মসজিদে নামাজ আদায় করতে কিংবা মাদ্রাসায় পড়তে কারো বেতন দিতে হয় না। ইমাম সাহেবের বেতন তিনি নিজেই দেন। জাহাঙ্গীর মুসল্লি নিজেও ইমামতি করেন। বাগানের মধ্যে মসজিদে এলাকার মুসল্লি কিংবা শিশু শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করলেও তার বাগানের কেউ কোনো ক্ষতি করে না। কোনদিন তার বাগান থেকে ফল কিংবা পুকুর থেকে মাছ চুরি হয়নি। জাহাঙ্গীর মুসল্লির ছেলে মো. জায়েদ মুসল্লি বলেন, আমি লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে বাবার সাথে বাগানের সময় দেই। বাগানে কখন কি সার কিংবা কীটনাশক ছিটাতে হয় একটি ধারণা হয়ে গেছে। বাগানের মধ্যে ঢুকলেই এক ধরনের প্রশান্তি পাই। গাছের ফলের দিকে তাকালে মনটা ভরে যায়। বাগানে আসলে বাসায় যেতে মন চায় না। লেখাপড়ার ফাঁকে অবসর সময় বাগানে কাটে।

এ বাগানে নিয়মিত কাজ করেন সেন্টু মিয়া ও রেদোয়ান নামের দুইজন শ্রমিক। রেদোয়ান সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন। সেন্টু মিয়া বলেন, আমি এই বাগানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এখানে কাজ করতে খুব ভালো লাগে। বাগানের মালিক অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ যখন কাজ বেশি থাকে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী দৈনিক মজুরিতে অতিরিক্ত শ্রমিক কাজ করেন।

জাহাঙ্গীর মুসল্লি বলেন, কখন কোন সার, কি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে প্রথম তিনি চাপাইনবাবগঞ্জের বাগানিদের সাথে যোগাযোগ করে আয়ত্ত করেছেন। এখন তিনি সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারছেন। মাঝেমধ্যে কোন রোগ বালাই দেখা দিলে পটুয়াখালী কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী গাছের পরিচর্যা করছেন। ? এই অঞ্চলে বাগান করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়।বন্যা কবলিত এলাকা ঘূর্ণিঝড় হলে বাগানের ক্ষতি হয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মুখার আতঙ্কে ছিলেন তিনি। তবে এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব না পরায় তার বাগানের আমের কোন ক্ষতি হয়নি। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, কলাপাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে আমের বাগান বাড়ছে। এর মধ্যে লতাচাপলী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর মুসুল্লীর বাগানটি অন্যতম। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে এ অঞ্চলে আমের বাগানের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।

image
আরও খবর
মতলবে নির্মাণের ১১ দিনেই ধসে পড়ল কালভার্ট
গ্রাম পুলিশদের সাইকেল বিতরণ
চান্দিনায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি
কালকিনিতে অসহায় পরিবারকে চেক বিতরণ
সাতক্ষীরায় পরিত্যক্ত প্লাস্টিকে ভাগ্য বদলেছে মাফিজুরের
চুরি হচ্ছে একের পর এক ট্রান্সফরমার, বিপাকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ
‘শেখ হাসিনা মৃত্যুকে ভয় করে না, সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় করে’
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছরপূর্তি উৎসব পালন
নরসিংদীতে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সেমিনার অনুষ্ঠিত
হরিরামপুরে চালা ইউপির উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা
নিখোঁজের ৩ দিন পর আ’লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার
টিটো রায়কে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩ , ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৫ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

আম বাগানে বছরে আয় ১৫ লাখ টাকা

প্রতিনিধি, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

image

কুয়াকাটার লতাচাপলীর জাহাঙ্গীর মুসল্লি। পেশায় লাইব্রেরিয়ান। ২০০৫ সালে তাবলীগ জামাতের সঙ্গে দাওয়াতের কাজে গিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে গিয়ে এক আমের বাগানের মালিকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় আমের বাগান করার শখ জাগে । সেখান থেকেই চারা নিয়ে বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন জায়গায় রোপন করেন। পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে তার গাছে আম ধরে। ভালো দামে মোটা অংক টাকায় বিক্রয় করে তার শখ বাণিজ্যে রূপ নেয়। এরপর তিনি ৬ ছয় একর ফসলি জমিতে আমের বাগান করার স্বপ্ন দেখেন। ২০১০ সালের ওই বাগানে ২০১৫ সালে আম আসে। ওই বছরে তিনি পাঁচ লাখ টাকার আম বিক্রি করেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা এনে এলাকার অনেককে দিয়েছেন। এখন এলাকার লোকজন তার আমের বাগান দেখতে আসেন। এখানে ভালো ফল হওয়ায় তিনি মিশ্র বাগানের পরিকল্পনা করেন। তার বাগানে আমের পাশাপাশি পেয়ারা, লিচু, লেবু কাঁঠাল, কলাগাছ রোপণ করেছেন।

তিনি দেশী-বিদেশী ২০ থেকে ২২ প্রজাতির আমের চারা রোপন করলেও কিছু জাতের আমের চারা মরে গেছে। এখন তার বাগানে ১৫ থেকে ১৬ প্রজাতির আম হয়। আম গাছের নিচের সবুজ ঘাস খাওয়ার জন্য তিনি ভেড়া পালন করেন। তার খামারে ৭৫টি ভেড়া আছে। প্রতিবছর তিনি ভেড়ার খামার থেকে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা আয় করেন। শুধু ভেড়া নয় আমের বাগানে পাশে একটি ঘর তৈরি করে ১২টি গরুর লালন-পালন করছেন তিনি। প্রতিবছর গরুর থেকে তার আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হয়।

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, রোপণকৃত গাছের চারাগুলো এখন বড় বড় ফলবান বৃক্ষ। গাছের ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় বিভিন্ন রংয়ের আম। আর সেসব পাকা আমের গন্ধে ম ম করছে সমগ্র আম বাগান। আমের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছে ডাল। এই বাগানে এখন ফজলি, আশ্বিনা, হিমসাগর, আম্রপালি, বাড়িফোর, লোকনা, ব্যানানা, কাটিমন, হাড়িভাঙ্গা, কিউজাই, সূর্যডিম, আমেরিকান পারমাল, ফোর কেজি, বোম্বাই, রানীবুক, মিশ্রিকান্ড, গোপাল ভোগ, মল্লিকা, গরুমতিসহ দেশী প্রজাতির আম আছে। পেয়ারা গাছগুলোতে পেয়ারা ঝুলছে আছে। লেবু গাছে ধরেছে অসংখ্য লেবু। কাঁঠাল গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলছে কাঁঠাল। পুকুর চারটি মাছে ভরা। ভেড়াগুলো গাছের নিচের সবুজ ঘাস খাচ্ছে। বাগানের মধ্যে ছোটাছুটি করছে।

জাহাঙ্গীর মুসুল্লি আমের বাগানের মধ্যে নির্মাণ করেছেন বায়তুল কারিম জামে মসজিদ। এলাকার মুসলিম শিশুরা ওই মসজিদের আওতায় মাদ্রাসায় মক্তবের লেখাপড়া শিখছেন। মসজিদে নামাজ আদায় করতে কিংবা মাদ্রাসায় পড়তে কারো বেতন দিতে হয় না। ইমাম সাহেবের বেতন তিনি নিজেই দেন। জাহাঙ্গীর মুসল্লি নিজেও ইমামতি করেন। বাগানের মধ্যে মসজিদে এলাকার মুসল্লি কিংবা শিশু শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করলেও তার বাগানের কেউ কোনো ক্ষতি করে না। কোনদিন তার বাগান থেকে ফল কিংবা পুকুর থেকে মাছ চুরি হয়নি। জাহাঙ্গীর মুসল্লির ছেলে মো. জায়েদ মুসল্লি বলেন, আমি লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে বাবার সাথে বাগানের সময় দেই। বাগানে কখন কি সার কিংবা কীটনাশক ছিটাতে হয় একটি ধারণা হয়ে গেছে। বাগানের মধ্যে ঢুকলেই এক ধরনের প্রশান্তি পাই। গাছের ফলের দিকে তাকালে মনটা ভরে যায়। বাগানে আসলে বাসায় যেতে মন চায় না। লেখাপড়ার ফাঁকে অবসর সময় বাগানে কাটে।

এ বাগানে নিয়মিত কাজ করেন সেন্টু মিয়া ও রেদোয়ান নামের দুইজন শ্রমিক। রেদোয়ান সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন। সেন্টু মিয়া বলেন, আমি এই বাগানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এখানে কাজ করতে খুব ভালো লাগে। বাগানের মালিক অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ যখন কাজ বেশি থাকে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী দৈনিক মজুরিতে অতিরিক্ত শ্রমিক কাজ করেন।

জাহাঙ্গীর মুসল্লি বলেন, কখন কোন সার, কি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে প্রথম তিনি চাপাইনবাবগঞ্জের বাগানিদের সাথে যোগাযোগ করে আয়ত্ত করেছেন। এখন তিনি সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারছেন। মাঝেমধ্যে কোন রোগ বালাই দেখা দিলে পটুয়াখালী কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী গাছের পরিচর্যা করছেন। ? এই অঞ্চলে বাগান করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়।বন্যা কবলিত এলাকা ঘূর্ণিঝড় হলে বাগানের ক্ষতি হয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মুখার আতঙ্কে ছিলেন তিনি। তবে এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব না পরায় তার বাগানের আমের কোন ক্ষতি হয়নি। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, কলাপাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে আমের বাগান বাড়ছে। এর মধ্যে লতাচাপলী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর মুসুল্লীর বাগানটি অন্যতম। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে এ অঞ্চলে আমের বাগানের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।