আজমত-জায়েদার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস
আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটার এই নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ পাবেন।
মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকায় ভোটে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের সঙ্গে আজমত উল্লার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জায়েদা টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট করছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সিটি নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি গাজীপুরে মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সরকার শাহ নূর ইসলাম ওরফে রনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। রনির দাবি, বিএনপির তার প্রতি সমর্থন রয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র প্রার্থী ছিলেন হাসান উদ্দিন। তাকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। শাহ নূর ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম সরকারও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
স্থানীয়দের অনেকে বলছেন, আজমত উল্লা আর জায়েদা খাতুনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রনির হাতিও বাজিমাত করতে পারে।
এদিকে এই সিটিতে নির্দলীয় কাউন্সিলর পদে বিএনপির স্থানীয় অনেক নেতাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে। কেন্দ্র থেকে তাদের অনেকেকে বহিষ্কার করা হলেও ভোটে রয়ে গেছেন বেশির ভাগ প্রার্থী।
এই সিটিতে ভোট ৪৮০টি কেন্দ্রে তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য ৫ হাজার ২৪৬টি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যন্ত্রে ভোটগ্রহণ চলবে।
ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি) ঝুঁকিপূর্ণ (ইসির ভাষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এইচ এম কামরুল ইসলাম জানান, ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটারের জন্য ৪৮০টি কেন্দ্রের তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য ৫ হাজার ২৪৬টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে ৪৮০ জন ট্রাবল শুটার, প্রতি দুই কেন্দ্রে একজন করে মোট ২৪০ জন ভ্রাম্যমাণ টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ১৪ জন সহকারী প্রোগ্রামার এবং ৪ জন প্রোগ্রামার থাকবেন। কোন ইভিএমে সমস্যা দেখা দিলে তারা দ্রুত সমাধান করবেন। কেন্দ্রে এবং ভোটকক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প এলাকায় কোথাও কোথাও অপরাধ প্রবণতা বেশি থাকে। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি) আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৭৬ জন, সঙ্গে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। র্যাবের টিম থাকবে ৩০টি। বিজিবির থাকবে ১৩ প্লাটুন, ২০ জন বেশি থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশের ১৯টি এবং মোবাইল টিম থাকবে ৫৭টি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর ১৭ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবেন।
আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর এটি তৃতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আয়তনের দিক দিয়ে দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র, ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন অর্থাৎ মোট ৩২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৩০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ১৮ জন।
এবারেই প্রথম ভোটগ্রহণের জন্য ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই ভোট গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম জানান গতকাল প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি এবং ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করা। স্থানীয় জিএমপি ও জেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতায় রয়েছেন।
মেয়র পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন
মেয়র পদে এবারের নির্বাচনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল), গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি (হাতি) ও হারুন অর রশিদ (ঘোড়া)।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান দলীয় অবস্থানের কারণে শক্তিশালী প্রার্র্থী। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় বিজয়ের ব্যাপারে তাকে যেমন নির্ভার মনে হয়েছিল বাস্তবে তা এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। কারণ সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ঋণখেলাপির দায়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। জাহাঙ্গীর আলম তার মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তার মা জায়েদা খাতুনও স্বতন্ত্র প্রার্র্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার প্রার্থী হওয়াটা চমক ও অপ্রত্যাশিত মনে হলেও জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার প্রতি সহানুভূতিশীল সমর্থকদের আবেগ-অনুভূতির কারণে জায়েদা খাতুন ক্রমেই আজমত উল্লা খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।
তাই মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুনের মধ্যে এমন অভিমত ভোটার ও নগরবাসীর।
আজমত উল্লা খান তার নির্বাচনী প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সরব ও এগিয়ে ছিলেন। দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারাসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এমনকি চিত্র শিল্পীরাও তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচনী প্রচারণায় ছেলের ইমেজকে কাজে লাগিয়েছেন। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন কয়েক বারই তার প্রচারণায় বাধা এবং দু’বার তার ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। জায়েদা খাতুন নির্বাচন করতে পারবেন কি-না অথবা তিনি বা তার পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সংশয়-শঙ্কা থাকলেও তা কেটে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগ ঘরানার এ দুজন প্রার্থীর মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাতে প্রায় সবাই নিঃসন্দেহ। তবে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের মালাটি কার গলায় শোভা পাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী এলাকায় আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজমত উল্লা খান ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগ ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তার রাজনৈতিক জীবন প্রায় ৫৮ বছরের। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি সাবেক টঙ্গী পৌরসভার তিনবার চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। গাজীপুর মহানগর গঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় নিজেকে গৃহিণী ও স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তার জন্ম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কানাইয়া এলাকায় ১৯৬২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি। তার স্বামী মো. মিজানুর রহমান ৪-৫ বছর পূর্বে মারা যান। বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলমসহ তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি যথার্থই গৃহিণী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন কারণ মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পূর্বে রাজনীতি বা সামাজিক কোন ক্ষেত্রে তার নাম শোনা যায়নি। তবে এলাকায় জনদরদী হিসেবে তার পরিচিতি ও সুনাম আছে।
আজ গাজীপুর সিটি নির্বাচন। ভোটসামগ্রী নিয়ে গতকাল থেকেই প্রস্তুতি -সংবাদ
আরও খবরবৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩ , ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৫ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪
আজমত-জায়েদার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও মুকুল কুমার মল্লিক, গাজীপুর
আজ গাজীপুর সিটি নির্বাচন। ভোটসামগ্রী নিয়ে গতকাল থেকেই প্রস্তুতি -সংবাদ
আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটার এই নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ পাবেন।
মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকায় ভোটে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের সঙ্গে আজমত উল্লার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জায়েদা টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট করছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সিটি নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি গাজীপুরে মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সরকার শাহ নূর ইসলাম ওরফে রনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। রনির দাবি, বিএনপির তার প্রতি সমর্থন রয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র প্রার্থী ছিলেন হাসান উদ্দিন। তাকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। শাহ নূর ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম সরকারও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
স্থানীয়দের অনেকে বলছেন, আজমত উল্লা আর জায়েদা খাতুনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রনির হাতিও বাজিমাত করতে পারে।
এদিকে এই সিটিতে নির্দলীয় কাউন্সিলর পদে বিএনপির স্থানীয় অনেক নেতাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে। কেন্দ্র থেকে তাদের অনেকেকে বহিষ্কার করা হলেও ভোটে রয়ে গেছেন বেশির ভাগ প্রার্থী।
এই সিটিতে ভোট ৪৮০টি কেন্দ্রে তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য ৫ হাজার ২৪৬টি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যন্ত্রে ভোটগ্রহণ চলবে।
ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি) ঝুঁকিপূর্ণ (ইসির ভাষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এইচ এম কামরুল ইসলাম জানান, ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটারের জন্য ৪৮০টি কেন্দ্রের তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য ৫ হাজার ২৪৬টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে ৪৮০ জন ট্রাবল শুটার, প্রতি দুই কেন্দ্রে একজন করে মোট ২৪০ জন ভ্রাম্যমাণ টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ১৪ জন সহকারী প্রোগ্রামার এবং ৪ জন প্রোগ্রামার থাকবেন। কোন ইভিএমে সমস্যা দেখা দিলে তারা দ্রুত সমাধান করবেন। কেন্দ্রে এবং ভোটকক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প এলাকায় কোথাও কোথাও অপরাধ প্রবণতা বেশি থাকে। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি) আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৭৬ জন, সঙ্গে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। র্যাবের টিম থাকবে ৩০টি। বিজিবির থাকবে ১৩ প্লাটুন, ২০ জন বেশি থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশের ১৯টি এবং মোবাইল টিম থাকবে ৫৭টি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর ১৭ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবেন।
আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর এটি তৃতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আয়তনের দিক দিয়ে দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র, ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন অর্থাৎ মোট ৩২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৩০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ১৮ জন।
এবারেই প্রথম ভোটগ্রহণের জন্য ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই ভোট গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম জানান গতকাল প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি এবং ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করা। স্থানীয় জিএমপি ও জেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতায় রয়েছেন।
মেয়র পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন
মেয়র পদে এবারের নির্বাচনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল), গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি (হাতি) ও হারুন অর রশিদ (ঘোড়া)।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান দলীয় অবস্থানের কারণে শক্তিশালী প্রার্র্থী। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় বিজয়ের ব্যাপারে তাকে যেমন নির্ভার মনে হয়েছিল বাস্তবে তা এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। কারণ সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ঋণখেলাপির দায়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। জাহাঙ্গীর আলম তার মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তার মা জায়েদা খাতুনও স্বতন্ত্র প্রার্র্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার প্রার্থী হওয়াটা চমক ও অপ্রত্যাশিত মনে হলেও জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার প্রতি সহানুভূতিশীল সমর্থকদের আবেগ-অনুভূতির কারণে জায়েদা খাতুন ক্রমেই আজমত উল্লা খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।
তাই মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুনের মধ্যে এমন অভিমত ভোটার ও নগরবাসীর।
আজমত উল্লা খান তার নির্বাচনী প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সরব ও এগিয়ে ছিলেন। দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারাসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এমনকি চিত্র শিল্পীরাও তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচনী প্রচারণায় ছেলের ইমেজকে কাজে লাগিয়েছেন। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন কয়েক বারই তার প্রচারণায় বাধা এবং দু’বার তার ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। জায়েদা খাতুন নির্বাচন করতে পারবেন কি-না অথবা তিনি বা তার পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সংশয়-শঙ্কা থাকলেও তা কেটে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগ ঘরানার এ দুজন প্রার্থীর মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাতে প্রায় সবাই নিঃসন্দেহ। তবে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের মালাটি কার গলায় শোভা পাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী এলাকায় আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজমত উল্লা খান ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগ ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তার রাজনৈতিক জীবন প্রায় ৫৮ বছরের। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি সাবেক টঙ্গী পৌরসভার তিনবার চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। গাজীপুর মহানগর গঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় নিজেকে গৃহিণী ও স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তার জন্ম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কানাইয়া এলাকায় ১৯৬২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি। তার স্বামী মো. মিজানুর রহমান ৪-৫ বছর পূর্বে মারা যান। বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলমসহ তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি যথার্থই গৃহিণী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন কারণ মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পূর্বে রাজনীতি বা সামাজিক কোন ক্ষেত্রে তার নাম শোনা যায়নি। তবে এলাকায় জনদরদী হিসেবে তার পরিচিতি ও সুনাম আছে।