দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোতে অতিদারিদ্র্য দূরীকরণে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে জোর দেয়া উচিত। গতকাল কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকার আগারগাঁওস্থ পিকেএসএফ ভবনে পাথওয়েজ টু প্রোসপারিটি ফর এক্সট্রিমলি পুওর পিপল–ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (পিপিইপিপি-ইইউ) প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
ইইউকে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে ড. রাজ্জাক আরও বলেন, ‘উপকূল, হাওর, চরাঞ্চলসহ প্রতিকূল এলাকায় এখনও জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি দারিদ্র্য রয়েছে। এসব প্রতিকূল এলাকায় ফসল ফলানো খুবই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্য, এসব প্রতিকূল এলাকায় ফসল উৎপাদনে আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। ইইউ-পিকেএসএফের প্রকল্প এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবনে আয়োজিত পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২০৫ কোটি টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চল, হাওর ও উপকূলের ১২ জেলার ৩৪টি উপজেলার ২ লাখ ১৫ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র্যবিমোচনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি সহিষ্ণু জীবিকায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন, পুষ্টি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রতিবন্ধিতা একীভূতকরণ, জলবায়ু সহনশীলতা সৃষ্টি ও কমিউনিটি মোবিলাইজেশনে কাজ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দারিদ্র বিমোচনে প্রশংসনীয় অগ্রগতি সত্ত্বেও দেশের উত্তর, দক্ষিণ, হাওর ও পার্বত্য অঞ্চলের কিছু এলাকায় দারিদ্র্যের হার এখনও অনেক বেশি। এসব অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার হ্রাস ও বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট পূরণে পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্প অবদান রাখবে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখনও বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করছে এবং এই জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করে চলছে। তাই আমাদের কৃষি নির্ভর আরও কাজ করতে হবে।’ এ সময় তিনি কৃষকদের জন্য এবং কৃষিকাজে নানা প্রজেক্ট নেয়ার আহ্বান জানান।
ইইউকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোরও আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের এনজিওর সঙ্গে কাজ করার প্রবণতা বেশি। দেশের সব এনজিওতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আছে, বিষয়টি এমন নয়। কাজেই, এনজিওর কাজ কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।
পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. নমিতা হালদার এনডিসি বলেন, ‘লক্ষিত পরিবারগুলোতে টেকসইভাবে উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কার্যকরী ও ব্যয় সাশ্রয়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে পিকেএসএফ বিশেষ জোর দেয়।’
প্রকল্প পরিচালক(পিডি) ড. শরীফ আহমদ চৌধরী বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ১৫ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনব। সেটা শুধু দারিদ্র্যতা না তাদের পরিবারগুলোতে যাতে পুষ্টির মানও নিশ্চিত করা যায়, সেইটা করছি আমরা। এজন্য ওই পরিবারগুলো যাতে পুষ্টি পায় সেজন্য তাদের জ্ঞান ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।’
প্রকল্পটি দেশের যেসব এলাকায় সেটা দেশের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলেও জানান শরীফ আহমদ । তিনি বলেন, ‘সেটা উপকূলীয় এলাকা, হাওর আর উত্তারঞ্চলের চরাঞ্চল। আমরা চাচ্ছি তাদেরকে সেখান থেকে না সরিয়ে তারা কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। ওইসব মানুষদের অভিযোজন সহনশীল করে তোলা যায়, যাতে করে তারা ওই পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এসব তো একদিনে সম্ভব নয় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে সেটা অর্জন করতে হবে।’
অন্যদিকে যেসব পরিবারের প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি রয়েছেন তারা যাতে সহজেই সরকারের সুবিধাগুলো পেতে পারে আমরা সে ব্যাপারেও সহায়তা করার কথাও জানান তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি তার বক্তব্য বলেন, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণে ইইউ অঙ্গীকারাবদ্ধ। পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্প তারই একটি নিদর্শন। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়া ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ইইউ পাশে থাকাবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘পিকেএসএফ বর্তমানে দেশের ১ কোটি ৮ লাখ পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উপযুক্ত অর্থায়নসহ বহুমাত্রিক কারিগরি ও সামাজিক সেবা প্রদান করছে।’
বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩ , ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৫ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোতে অতিদারিদ্র্য দূরীকরণে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে জোর দেয়া উচিত। গতকাল কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকার আগারগাঁওস্থ পিকেএসএফ ভবনে পাথওয়েজ টু প্রোসপারিটি ফর এক্সট্রিমলি পুওর পিপল–ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (পিপিইপিপি-ইইউ) প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
ইইউকে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে ড. রাজ্জাক আরও বলেন, ‘উপকূল, হাওর, চরাঞ্চলসহ প্রতিকূল এলাকায় এখনও জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি দারিদ্র্য রয়েছে। এসব প্রতিকূল এলাকায় ফসল ফলানো খুবই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্য, এসব প্রতিকূল এলাকায় ফসল উৎপাদনে আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। ইইউ-পিকেএসএফের প্রকল্প এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবনে আয়োজিত পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২০৫ কোটি টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চল, হাওর ও উপকূলের ১২ জেলার ৩৪টি উপজেলার ২ লাখ ১৫ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র্যবিমোচনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি সহিষ্ণু জীবিকায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন, পুষ্টি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রতিবন্ধিতা একীভূতকরণ, জলবায়ু সহনশীলতা সৃষ্টি ও কমিউনিটি মোবিলাইজেশনে কাজ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দারিদ্র বিমোচনে প্রশংসনীয় অগ্রগতি সত্ত্বেও দেশের উত্তর, দক্ষিণ, হাওর ও পার্বত্য অঞ্চলের কিছু এলাকায় দারিদ্র্যের হার এখনও অনেক বেশি। এসব অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার হ্রাস ও বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট পূরণে পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্প অবদান রাখবে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখনও বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করছে এবং এই জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করে চলছে। তাই আমাদের কৃষি নির্ভর আরও কাজ করতে হবে।’ এ সময় তিনি কৃষকদের জন্য এবং কৃষিকাজে নানা প্রজেক্ট নেয়ার আহ্বান জানান।
ইইউকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোরও আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের এনজিওর সঙ্গে কাজ করার প্রবণতা বেশি। দেশের সব এনজিওতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আছে, বিষয়টি এমন নয়। কাজেই, এনজিওর কাজ কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।
পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. নমিতা হালদার এনডিসি বলেন, ‘লক্ষিত পরিবারগুলোতে টেকসইভাবে উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কার্যকরী ও ব্যয় সাশ্রয়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে পিকেএসএফ বিশেষ জোর দেয়।’
প্রকল্প পরিচালক(পিডি) ড. শরীফ আহমদ চৌধরী বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ১৫ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনব। সেটা শুধু দারিদ্র্যতা না তাদের পরিবারগুলোতে যাতে পুষ্টির মানও নিশ্চিত করা যায়, সেইটা করছি আমরা। এজন্য ওই পরিবারগুলো যাতে পুষ্টি পায় সেজন্য তাদের জ্ঞান ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।’
প্রকল্পটি দেশের যেসব এলাকায় সেটা দেশের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলেও জানান শরীফ আহমদ । তিনি বলেন, ‘সেটা উপকূলীয় এলাকা, হাওর আর উত্তারঞ্চলের চরাঞ্চল। আমরা চাচ্ছি তাদেরকে সেখান থেকে না সরিয়ে তারা কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। ওইসব মানুষদের অভিযোজন সহনশীল করে তোলা যায়, যাতে করে তারা ওই পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এসব তো একদিনে সম্ভব নয় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে সেটা অর্জন করতে হবে।’
অন্যদিকে যেসব পরিবারের প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি রয়েছেন তারা যাতে সহজেই সরকারের সুবিধাগুলো পেতে পারে আমরা সে ব্যাপারেও সহায়তা করার কথাও জানান তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি তার বক্তব্য বলেন, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণে ইইউ অঙ্গীকারাবদ্ধ। পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্প তারই একটি নিদর্শন। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়া ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ইইউ পাশে থাকাবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘পিকেএসএফ বর্তমানে দেশের ১ কোটি ৮ লাখ পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উপযুক্ত অর্থায়নসহ বহুমাত্রিক কারিগরি ও সামাজিক সেবা প্রদান করছে।’