সুবিন্যস্ত বেণিজুড়ে গাছে দুলছে দৃষ্টিকাড়া হিজল ফুল। প্রতি বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের হাওড়বেষ্টিত ভাটির অঞ্চলে মনোমুগ্ধকর এ ফুলের দেখা মিলে। এখন সেই সময়। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরে ফিরেই এসেছে হিজলের কথা। কবির ভাষায়- ‘চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম চিতা জ্বলে’। একইভাবে হিজল বনে ঘুঘু দেখে উচ্ছ্বসিত কবি লিখেছেন- ‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে’। অবশ্য কবিতার বাইরে বাস্তবে হিজল গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গণসংগীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস সুরে সুরে বলেছেন- ‘হাওড়ের পানি নাই রে হেথায়, নাই রে তাজা মাছ/বিলের বুকে ডালা মেলা, নাই রে হিজল গাছ’। অর্থাৎ দিন দিন হিজল গাছের সংখ্যা কমছে। বর্তমানে এ গাছ প্রায় দুর্লভ। এ গাছের সংস্কৃত নাম নিচুল, এছাড়া জলন্ত ও নন্দীক্রান্ত নামেও পরিচিত। হিজল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Barringtonia acutangula। এটি Lecythidaceae পরিবারের সদস্য। এটি বাংলাদেশের ভাটির অঞ্চলে বহুকাল ধরে টিকে থাকলেও এর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারত। গাছ মাঝারি আকারের, উচ্চতা ৫-১০ মিটার পর্যন্ত, এর ডালপালা থাকে ছড়ানো, বাকল যথেষ্ট পুরো, ঘনছাই রঙের হয়ে থাকে, বীজ থেকে গাছ হয়। খাল, বিল, নদী, ডোবা, হাওর ইত্যাদি জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। এটি পানির নিচে কয়েক মাস জীবিত থাকতে পারে। এ গাছের মূল আকর্ষণ লাল ও গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুল। ফুলের আছে মিষ্টি ঘ্রাণ। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে- ‘ফুলের মঞ্জুরি ৬-১৫ ইঞ্চি লম্বা। বহুপুষ্পিক ফুলের বৈশিষ্ট্যে হিজল অনন্য”। হিজল বীজের অনেক ঔষুধি গুনাগুন আছে- মাথা ও কপাল ব্যথা হলে হিজল বীজ শুকিয়ে গুড়া করে দুই চামচ পরিমাণ এক কাপ দুধসহ সকালে এবং বিকেলে খেলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। পেটে গ্যাস হলে, ঢেকুর উঠলে, পেট ফাঁপা হলে হিজল বীজ চূর্ণ করে গরম মসলাসহ খেলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেই সমস্যা চলে যায়। চোখ উঠলে, চোখ লাল হলে, চুলকায়, পানি পড়ে। সেই সময় বীজ নিয়ে পাথরে ঘষে চন্দনের মতো চোখের চারপাশে লাগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ রাখার পর ছোট নেকড়া ভিজিয়ে মুছে দিলে যন্ত্রণা কমে যায়। হিজল ফুল গভীর রাতে ফুটে, সকাল হতে না হতেই ঝরে যায়। হিজল সাধারণত জলমগ্ন বা জলসংলগ্ন অঞ্চলে ভালো হয়।
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ভাটি অঞ্চলে জলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি হিজল গাছ -সংবাদ
আরও খবরশুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৬ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪
প্রতিনিধি, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ভাটি অঞ্চলে জলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি হিজল গাছ -সংবাদ
সুবিন্যস্ত বেণিজুড়ে গাছে দুলছে দৃষ্টিকাড়া হিজল ফুল। প্রতি বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের হাওড়বেষ্টিত ভাটির অঞ্চলে মনোমুগ্ধকর এ ফুলের দেখা মিলে। এখন সেই সময়। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরে ফিরেই এসেছে হিজলের কথা। কবির ভাষায়- ‘চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম চিতা জ্বলে’। একইভাবে হিজল বনে ঘুঘু দেখে উচ্ছ্বসিত কবি লিখেছেন- ‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে’। অবশ্য কবিতার বাইরে বাস্তবে হিজল গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গণসংগীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস সুরে সুরে বলেছেন- ‘হাওড়ের পানি নাই রে হেথায়, নাই রে তাজা মাছ/বিলের বুকে ডালা মেলা, নাই রে হিজল গাছ’। অর্থাৎ দিন দিন হিজল গাছের সংখ্যা কমছে। বর্তমানে এ গাছ প্রায় দুর্লভ। এ গাছের সংস্কৃত নাম নিচুল, এছাড়া জলন্ত ও নন্দীক্রান্ত নামেও পরিচিত। হিজল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Barringtonia acutangula। এটি Lecythidaceae পরিবারের সদস্য। এটি বাংলাদেশের ভাটির অঞ্চলে বহুকাল ধরে টিকে থাকলেও এর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারত। গাছ মাঝারি আকারের, উচ্চতা ৫-১০ মিটার পর্যন্ত, এর ডালপালা থাকে ছড়ানো, বাকল যথেষ্ট পুরো, ঘনছাই রঙের হয়ে থাকে, বীজ থেকে গাছ হয়। খাল, বিল, নদী, ডোবা, হাওর ইত্যাদি জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। এটি পানির নিচে কয়েক মাস জীবিত থাকতে পারে। এ গাছের মূল আকর্ষণ লাল ও গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুল। ফুলের আছে মিষ্টি ঘ্রাণ। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে- ‘ফুলের মঞ্জুরি ৬-১৫ ইঞ্চি লম্বা। বহুপুষ্পিক ফুলের বৈশিষ্ট্যে হিজল অনন্য”। হিজল বীজের অনেক ঔষুধি গুনাগুন আছে- মাথা ও কপাল ব্যথা হলে হিজল বীজ শুকিয়ে গুড়া করে দুই চামচ পরিমাণ এক কাপ দুধসহ সকালে এবং বিকেলে খেলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। পেটে গ্যাস হলে, ঢেকুর উঠলে, পেট ফাঁপা হলে হিজল বীজ চূর্ণ করে গরম মসলাসহ খেলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেই সমস্যা চলে যায়। চোখ উঠলে, চোখ লাল হলে, চুলকায়, পানি পড়ে। সেই সময় বীজ নিয়ে পাথরে ঘষে চন্দনের মতো চোখের চারপাশে লাগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ রাখার পর ছোট নেকড়া ভিজিয়ে মুছে দিলে যন্ত্রণা কমে যায়। হিজল ফুল গভীর রাতে ফুটে, সকাল হতে না হতেই ঝরে যায়। হিজল সাধারণত জলমগ্ন বা জলসংলগ্ন অঞ্চলে ভালো হয়।