স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তালিকা করে প্রত্যাবাসন শুরু হবে

যারা স্বেচ্ছায় নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে আগ্রহী এমন রোহিঙ্গাদের তালিকা করে প্রত্যাবাসন করা হবে। কাউকে জোর করে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রত্যাবাসন ইস্যুর সব বিষয়ে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা হচ্ছে। এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জানান রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং ভলান্টারি প্রত্যাবাসন। গতকাল বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মায়ানমার উইং মাইনুল কবির এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মায়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তারা। তবে মায়ানমারের প্রতিনিধি দল গণমাধ্যমে কোন কথা বলেনি।

ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, মায়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাকালে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব ভিটে মাটি ফেরতসহ তাদের বেশ কিছু চিরাচরিত দাবি জানিয়েছে। আলোচনাকালে রোহিঙ্গারা রাখাইনে কোন ক্যাম্পে নয় নিজেদের ভিটে মাটিতেই ফেরত যেতে চান বলে মায়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় বাংলাদেশ-মায়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে ১৪ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আসেন। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। মায়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মায়ানমারের রাখাইন স্টেটের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিনিস্টার অং মাইউ। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মায়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকায় মায়ানমার দূতাবাসের দুজন সদস্যও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন। তারা টেকনাফে ২৬ নাম্বার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মায়ানমারের প্রতিনিধি দল এবার ২৮০ রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।

মায়ানমারের প্রতিনিধি দলটি মূলত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মূল আবাস মায়ানমারের রাখাইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং স্বদেশে ফেরত গেলে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিষয়ের দীর্ঘ বর্ণনা দেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনাকালে নাগরিকত্ব শিক্ষা চিকিৎসা এবং অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।

এ সময় মায়ানমারের প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের দাবি পূরণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন শরণার্থী কমিশনার। এর আগে গত ৫ মে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মায়ানমারের রাখাইনে মংডু শহরের আশপাশে পরিদর্শন করে এসেছেন। পরিদর্শন করে আসা রোহিঙ্গা নেতারা তখন জানিয়েছিলেন রাখাইনে এখনও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে মায়ানমারের প্রতিনিধিরা এসেছেন। অনেক রোহিঙ্গা দাবি তুলছেন, নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের। রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন চায়।

এর আগেও, ১৫ মার্চ মায়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। সে সময় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মায়ানমার ফিরে যায় দলটি।

শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৬ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তালিকা করে প্রত্যাবাসন শুরু হবে

জেলা বার্তা পরিবেশেক, কক্সবাজার

image

যারা স্বেচ্ছায় নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে আগ্রহী এমন রোহিঙ্গাদের তালিকা করে প্রত্যাবাসন করা হবে। কাউকে জোর করে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রত্যাবাসন ইস্যুর সব বিষয়ে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা হচ্ছে। এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জানান রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং ভলান্টারি প্রত্যাবাসন। গতকাল বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মায়ানমার উইং মাইনুল কবির এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মায়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তারা। তবে মায়ানমারের প্রতিনিধি দল গণমাধ্যমে কোন কথা বলেনি।

ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, মায়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাকালে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব ভিটে মাটি ফেরতসহ তাদের বেশ কিছু চিরাচরিত দাবি জানিয়েছে। আলোচনাকালে রোহিঙ্গারা রাখাইনে কোন ক্যাম্পে নয় নিজেদের ভিটে মাটিতেই ফেরত যেতে চান বলে মায়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় বাংলাদেশ-মায়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে ১৪ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আসেন। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। মায়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মায়ানমারের রাখাইন স্টেটের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিনিস্টার অং মাইউ। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মায়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকায় মায়ানমার দূতাবাসের দুজন সদস্যও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন। তারা টেকনাফে ২৬ নাম্বার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মায়ানমারের প্রতিনিধি দল এবার ২৮০ রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।

মায়ানমারের প্রতিনিধি দলটি মূলত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মূল আবাস মায়ানমারের রাখাইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং স্বদেশে ফেরত গেলে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিষয়ের দীর্ঘ বর্ণনা দেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনাকালে নাগরিকত্ব শিক্ষা চিকিৎসা এবং অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।

এ সময় মায়ানমারের প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের দাবি পূরণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন শরণার্থী কমিশনার। এর আগে গত ৫ মে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মায়ানমারের রাখাইনে মংডু শহরের আশপাশে পরিদর্শন করে এসেছেন। পরিদর্শন করে আসা রোহিঙ্গা নেতারা তখন জানিয়েছিলেন রাখাইনে এখনও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে মায়ানমারের প্রতিনিধিরা এসেছেন। অনেক রোহিঙ্গা দাবি তুলছেন, নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের। রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন চায়।

এর আগেও, ১৫ মার্চ মায়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। সে সময় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মায়ানমার ফিরে যায় দলটি।