পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা : ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ১

পুলিশের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অভিনব কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া অভিযোগে কামাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন জানান, প্রতিদিন ভোর ৬টায় ভিকটিমদের ফোন দেন কামাল। তিনি নিজেকে ডিবির সদস্য দাবি করেন। তারপর ভুক্তভোগীদের বলেন- আপনার ছেলে কী করে খোঁজখবর রাখেন? এরপর ছেলের কী হয়েছে জানতে চাইলে উত্তরে বলেন, ছেলেকে একটি মেয়েসহ হোটেল থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে চাইলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না। অন্যথায় ছেলের অনেক বড় ক্ষতি হবে।

তিনি আরও জানান, কামাল প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এভাবে ১০০-১৫০টি নম্বরে ফোন দিতেন। এর মধ্যে ২/৩ জনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ১ থেকে ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেন। তাকে আরও ২ জন সহায়তা করতেন। প্রতিদিন ভোর ৫টায় কামাল তার সহযোগীকে ফোন দিয়ে কাজে বের হতে বলতেন। তার সহযোগী সকাল ৬টার মধ্যে গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার, মতিঝিল ও কমলাপুর এলাকায় এসে বিভিন্ন বিকাশের এজেন্টের দোকান থেকে প্রতারণা করে আনা অর্থ উত্তোলন করতেন। কামাল প্রতিদিন নতুন সিম ব্যবহার করতেন। অন্য এক সহযোগী তাকে এসব সিম সরবরাহ করতেন।

তিনি জানান, ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে বাংলালিংক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিম কিনে নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেকে বড় লোকের ছেলে পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে প্রেম করত। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক হলে তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা করে পথে তার এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। দুই বছর এভাবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ইনকাম করে সেটা বাদ দিয়ে প্রতারণার নতুন পন্থা অবলম্বন করে। ২০১৬ সাল থেকে সে বিভিন্ন যুবক বয়সী ছেলেদের অভিভাবকদের টার্গেট করে তাদের ছেলে-মেয়ে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে বলে পুলিশ পরিচয়ে তাদের কাছে টাকা দাবি করা শুরু করে। টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পর প্রতারণা করে টাকা নেয়া শেষ হলে সিমটি ভেঙে ফেলত।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার কামাল অভিনব পন্থায় প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত ৪ কোটি টাকার অধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, কামাল প্রতারণা করে অর্জিত টাকা দিয়ে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ২ কোটি টাকা সুদের কারবারে বিনিয়োগ করেছে ও বাকি টাকা দিয়ে ৪৩ শতক জমি ক্রয় করেছে। এছাড়া একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছে। তিনি আরও বলেন, এভাবে প্রতারণার স্বীকার হওয়া এক ব্যক্তি সিটিটিসি সাইবার ক্রাইমের হেল্প ডেস্কের হটলাইনে কল করে এ বিষয়ে সহায়তার আবেদন করেন। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে ছায়াতদন্তে নামে সিটিটিসি সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম। পরবর্তী সময়ে ওয়ারী থানায় ভিকটিমের করা মামলার ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কামালের অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে।

শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৬ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা : ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ১

পুলিশের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অভিনব কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া অভিযোগে কামাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন জানান, প্রতিদিন ভোর ৬টায় ভিকটিমদের ফোন দেন কামাল। তিনি নিজেকে ডিবির সদস্য দাবি করেন। তারপর ভুক্তভোগীদের বলেন- আপনার ছেলে কী করে খোঁজখবর রাখেন? এরপর ছেলের কী হয়েছে জানতে চাইলে উত্তরে বলেন, ছেলেকে একটি মেয়েসহ হোটেল থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে চাইলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না। অন্যথায় ছেলের অনেক বড় ক্ষতি হবে।

তিনি আরও জানান, কামাল প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এভাবে ১০০-১৫০টি নম্বরে ফোন দিতেন। এর মধ্যে ২/৩ জনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ১ থেকে ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেন। তাকে আরও ২ জন সহায়তা করতেন। প্রতিদিন ভোর ৫টায় কামাল তার সহযোগীকে ফোন দিয়ে কাজে বের হতে বলতেন। তার সহযোগী সকাল ৬টার মধ্যে গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার, মতিঝিল ও কমলাপুর এলাকায় এসে বিভিন্ন বিকাশের এজেন্টের দোকান থেকে প্রতারণা করে আনা অর্থ উত্তোলন করতেন। কামাল প্রতিদিন নতুন সিম ব্যবহার করতেন। অন্য এক সহযোগী তাকে এসব সিম সরবরাহ করতেন।

তিনি জানান, ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে বাংলালিংক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিম কিনে নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেকে বড় লোকের ছেলে পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে প্রেম করত। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক হলে তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা করে পথে তার এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। দুই বছর এভাবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ইনকাম করে সেটা বাদ দিয়ে প্রতারণার নতুন পন্থা অবলম্বন করে। ২০১৬ সাল থেকে সে বিভিন্ন যুবক বয়সী ছেলেদের অভিভাবকদের টার্গেট করে তাদের ছেলে-মেয়ে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে বলে পুলিশ পরিচয়ে তাদের কাছে টাকা দাবি করা শুরু করে। টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পর প্রতারণা করে টাকা নেয়া শেষ হলে সিমটি ভেঙে ফেলত।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার কামাল অভিনব পন্থায় প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত ৪ কোটি টাকার অধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, কামাল প্রতারণা করে অর্জিত টাকা দিয়ে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ২ কোটি টাকা সুদের কারবারে বিনিয়োগ করেছে ও বাকি টাকা দিয়ে ৪৩ শতক জমি ক্রয় করেছে। এছাড়া একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছে। তিনি আরও বলেন, এভাবে প্রতারণার স্বীকার হওয়া এক ব্যক্তি সিটিটিসি সাইবার ক্রাইমের হেল্প ডেস্কের হটলাইনে কল করে এ বিষয়ে সহায়তার আবেদন করেন। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে ছায়াতদন্তে নামে সিটিটিসি সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম। পরবর্তী সময়ে ওয়ারী থানায় ভিকটিমের করা মামলার ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কামালের অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে।