গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে যেভাবে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কবিরাজ

গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ। তারা হলো- মো. নজরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ বাহাদুর। এ সময় তাদের কাছ থেকে পিতলের থালা, ঘটি, আগরদানি, তাবিজ লেখার বই উদ্ধার করা হয়। ডিবি জানায়, জিনের আঁচড় ছাড়াতে কবিরাজ আব্দুল জলিলের কাছে গেলে তিনি গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে জিন ছাড়ানোর কথা বলে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

গতকাল বিকেলে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার এস. এম হাসান সিদ্দিকী এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত সোমবার ভুক্তভোগী নুরুল আমিন পলাশ গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ছায়াতদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নুরুল আমিন পলাশ গত বছর আগস্ট মাসে তার ছোট বোনের ছেলেকে জিনের আঁচড় ছাড়াতে কবিরাজ আ. জলিলের দ্বারস্থ হন। জলিল বলেন তাকে বড় জিনে আঁচড় করেছে। এরপর তাদের (পলাশ) বড় জিনের কবিরাজ নজরুলের মোবাইল ফোন নম্বর দেন। জলিল বলেন এ কবিরাজ মাটির নিচের গুপ্তধনের সন্ধানও দিতে পারে। এরপর একদিন নজরুল ও তার সহযোগী বাহাদুর পলাশের বোনের বাসা দিয়াবাড়িতে যান। সেখানে পলাশের ভাগিনাকে ঝাড়ফুঁকের একপর্যায়ে বাহাদুর নাক-মুখ দিয়ে কৌশলে রক্ত বের করে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যা ভুক্তভোগীর মনে বিশ্বাস আনে।

গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা আরও জানান, কবিরাজ নজরুল ভিকটিম পলাশকে বলে তার সঙ্গে একজন জিন-পরী আছে। যার মাধ্যমে সে পলাশের বাড়িতে থাকা মাটির নিচের পুরনো গুপ্তধন উঠিয়ে দিতে পারবে। তাদের কথামতো পলাশ বরিশালের কাঁঠালিয়া থানায় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা দেন। কিছুক্ষণ পর নজরুল জানায়, পলাশের বাড়ির উত্তর পাশে মাটির নিচে একটি গুপ্তধনের ঘটি আছে। ঘটিটি জিনেরা পাহারা দিয়ে রেখেছে। গুপ্তধন ওঠাতে হলে পাহারারত ৩০/৪০ জন জিন মারা যাবে। মারা যাওয়া প্রতি জিনের সদকা হিসেবে গরু দিতে হবে। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় নজরুল ও বাহাদুর ভিকটিম পলাশের ঘরের পাশ থেকে মাটি খুঁড়ে কথিত গুপ্তধনের ঘটি এনে আলমারিতে রাখে। এরপর জিনদের গরু সদকা বাবদ ও গুপ্তধন ভর্তি ঘটির লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পলাশের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা সহজসরল মানুষকে জিন-পরীর বাদশা পরিচয় দিয়ে কৌশলে অলৌকিক ক্ষমতার কারিশমা দেখিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডিএমপির ওয়ারী থানায় মামলা হয়েছে। পলাতক আ. জলিল ও মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০৬ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে যেভাবে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কবিরাজ

গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ। তারা হলো- মো. নজরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ বাহাদুর। এ সময় তাদের কাছ থেকে পিতলের থালা, ঘটি, আগরদানি, তাবিজ লেখার বই উদ্ধার করা হয়। ডিবি জানায়, জিনের আঁচড় ছাড়াতে কবিরাজ আব্দুল জলিলের কাছে গেলে তিনি গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে জিন ছাড়ানোর কথা বলে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

গতকাল বিকেলে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার এস. এম হাসান সিদ্দিকী এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত সোমবার ভুক্তভোগী নুরুল আমিন পলাশ গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ছায়াতদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নুরুল আমিন পলাশ গত বছর আগস্ট মাসে তার ছোট বোনের ছেলেকে জিনের আঁচড় ছাড়াতে কবিরাজ আ. জলিলের দ্বারস্থ হন। জলিল বলেন তাকে বড় জিনে আঁচড় করেছে। এরপর তাদের (পলাশ) বড় জিনের কবিরাজ নজরুলের মোবাইল ফোন নম্বর দেন। জলিল বলেন এ কবিরাজ মাটির নিচের গুপ্তধনের সন্ধানও দিতে পারে। এরপর একদিন নজরুল ও তার সহযোগী বাহাদুর পলাশের বোনের বাসা দিয়াবাড়িতে যান। সেখানে পলাশের ভাগিনাকে ঝাড়ফুঁকের একপর্যায়ে বাহাদুর নাক-মুখ দিয়ে কৌশলে রক্ত বের করে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যা ভুক্তভোগীর মনে বিশ্বাস আনে।

গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা আরও জানান, কবিরাজ নজরুল ভিকটিম পলাশকে বলে তার সঙ্গে একজন জিন-পরী আছে। যার মাধ্যমে সে পলাশের বাড়িতে থাকা মাটির নিচের পুরনো গুপ্তধন উঠিয়ে দিতে পারবে। তাদের কথামতো পলাশ বরিশালের কাঁঠালিয়া থানায় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা দেন। কিছুক্ষণ পর নজরুল জানায়, পলাশের বাড়ির উত্তর পাশে মাটির নিচে একটি গুপ্তধনের ঘটি আছে। ঘটিটি জিনেরা পাহারা দিয়ে রেখেছে। গুপ্তধন ওঠাতে হলে পাহারারত ৩০/৪০ জন জিন মারা যাবে। মারা যাওয়া প্রতি জিনের সদকা হিসেবে গরু দিতে হবে। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় নজরুল ও বাহাদুর ভিকটিম পলাশের ঘরের পাশ থেকে মাটি খুঁড়ে কথিত গুপ্তধনের ঘটি এনে আলমারিতে রাখে। এরপর জিনদের গরু সদকা বাবদ ও গুপ্তধন ভর্তি ঘটির লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পলাশের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা সহজসরল মানুষকে জিন-পরীর বাদশা পরিচয় দিয়ে কৌশলে অলৌকিক ক্ষমতার কারিশমা দেখিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডিএমপির ওয়ারী থানায় মামলা হয়েছে। পলাতক আ. জলিল ও মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।