আইন শক্তিশালী হলেই তামাকমুক্ত হবে বাংলাদেশ

আজ ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’। একইসঙ্গে তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। বাংলাদেশে দিবসটি উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে।

তামাক ব্যবহার বন্ধ করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কাজ করা বেসরকরি সংগঠন প্রকৃতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) মনে করছে, প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করাসহ তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে শক্তিশালী আইনের প্রয়োজন। তামাক কোম্পানিগুলোর নানারকম কূটকৌশলে তামাক বিরোধী আইনকে শক্তিশালী করতে বাধা দিচ্ছে। নানারকম উপহার, উপঢৌকন দিয়ে তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহার করার মাধ্যমে আইনটি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে।

তামাক বিরোধী জোটগুলো বলছে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশে প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সর্বশেষ কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ- ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ ৯৯,৬০০.২৪ একর। তামাকের পরিবর্তে এই পরিমাণ জমিতে বোরো ধান আবাদ করলে ১,৬৭,৪২৮ মেট্রিকটন বোরো এবং গম বা আলু করলে ১,৩২,৯৬৬ মেট্রিকটন গম বা ৮,৫০,৩৮৭ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন করা সম্ভব হতো। ২০২১ রবি মৌসুমে বোরো, গম এবং আলুর একরপ্রতি গড় উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১,৬৮১ কেজি, ১,৩৩৫ কেজি এবং ৮,৫৩৮ কেজি।

তামাকবিরোধী জোটগুলোর ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ এবং নানাবিধ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি ক্রমশ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ রকম পরিস্থিতিতে তামাকের মতো একটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী ফসল উৎপাদনের বিপরীতে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য হারানোর ক্ষতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তামাক বিরোধী জোটগুলো আরও বলছে, তামাক চাষের ক্ষতি আড়াল করতে কোম্পানিগুলো তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচিকে (সিএসআর) প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধসহ একটি খসড়া সংশোধনী কেবিনেটের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খসড়াটি যত দ্রুত চূড়ান্ত হবে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ ততই ত্বরান্বিত হবে।’

এন্টি টোব্যাকে এলায়েন্ট বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ। দেশের ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১১ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ

আইন শক্তিশালী হলেই তামাকমুক্ত হবে বাংলাদেশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আজ ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’। একইসঙ্গে তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। বাংলাদেশে দিবসটি উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে।

তামাক ব্যবহার বন্ধ করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কাজ করা বেসরকরি সংগঠন প্রকৃতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) মনে করছে, প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করাসহ তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে শক্তিশালী আইনের প্রয়োজন। তামাক কোম্পানিগুলোর নানারকম কূটকৌশলে তামাক বিরোধী আইনকে শক্তিশালী করতে বাধা দিচ্ছে। নানারকম উপহার, উপঢৌকন দিয়ে তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহার করার মাধ্যমে আইনটি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে।

তামাক বিরোধী জোটগুলো বলছে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশে প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সর্বশেষ কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ- ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ ৯৯,৬০০.২৪ একর। তামাকের পরিবর্তে এই পরিমাণ জমিতে বোরো ধান আবাদ করলে ১,৬৭,৪২৮ মেট্রিকটন বোরো এবং গম বা আলু করলে ১,৩২,৯৬৬ মেট্রিকটন গম বা ৮,৫০,৩৮৭ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন করা সম্ভব হতো। ২০২১ রবি মৌসুমে বোরো, গম এবং আলুর একরপ্রতি গড় উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১,৬৮১ কেজি, ১,৩৩৫ কেজি এবং ৮,৫৩৮ কেজি।

তামাকবিরোধী জোটগুলোর ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ এবং নানাবিধ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি ক্রমশ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ রকম পরিস্থিতিতে তামাকের মতো একটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী ফসল উৎপাদনের বিপরীতে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য হারানোর ক্ষতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তামাক বিরোধী জোটগুলো আরও বলছে, তামাক চাষের ক্ষতি আড়াল করতে কোম্পানিগুলো তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচিকে (সিএসআর) প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধসহ একটি খসড়া সংশোধনী কেবিনেটের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খসড়াটি যত দ্রুত চূড়ান্ত হবে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ ততই ত্বরান্বিত হবে।’

এন্টি টোব্যাকে এলায়েন্ট বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ। দেশের ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।