দেশে ফিরেছে মধ্যপ্রাচ্যে নির্যাতনের শিকার ১২ নারী

দুবাইয়ে ১৫ নারীসহ আরও অনেকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে

বেশি বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে কিংবা টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার করা হচ্ছে। সৌদি আরব ও দুবাইতে পৌঁছার পর তাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর তাদের ওপর চলে যৌন, মানসিক নির্যাতনসহ নানা ধরনের অত্যাচার।

এয়ারপোর্ট (১৩) আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১২ নারীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আরও নির্যাতিত নারীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তার মধ্যে দুবাইতে এখনও আছে ১৫ জন। এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে জানা যায়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সির মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানা যায়।

এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমাডিং অফিসার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) তোফায়েল আহাম্মদ জানান, কিছু কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টুরিস্ট ভিসা ও বেশি বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে সৌদি আরবে নারীদেরকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। এরপর তাদের ওপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমন বহু অভিযোগের ভিত্তিতে আর্মড পুলিশ অনুসন্ধানী তদন্তে নামেন। তারা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করে সৌদি আরবে যাওয়া নির্যাতিত নারীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেন।

প্রথমে গত ৮ মে পল্টন চায়না টাউনস্থ এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রটিং এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ দেয়ার নামে একজন নারীকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে কোনমতে যোগাযোগ করতে পাচ্ছে না। পরে জানতে পারছে তার স্ত্রী সেখানে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এপিবিএনের সহযোগিতা চেয়েছেন। একই সঙ্গে যে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ওই নারী সৌদি আরবে গেছে সেই এজেন্সির বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে গত ৮ মে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ অভিযোগের আর্মড পুলিশ গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করে। ওই নারী সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গেলে অভিযুক্ত রিক্রটিং এজেন্সির অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়। গা ঢাকা দেন সেখানের কর্মচারীরা। এরপর তাদের ধারণা, ভুক্তভোগী নির্যাতিত নারীদের দেশে ফিরিয়ে আনলে হয়তো তারা আইনি জটিলতা থেকে রেহাই পাবে। যার কারণে ট্রাভেল এজেন্সি সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হওয়া ১২ নারীকে গত শনিবার দেশে ফিরিয়ে আনছে। ১২ জন ভুক্তভোগী নারী ইন্ডিয়াগো এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে গত শনিবার বিকেলে বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা তাদেরকে রিসিভ করেন। এ সময় ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রকল্পের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

দেশে ফেরার পর এপিবিএনের গোয়েন্দা টিম তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতিতরা জানিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে বিদেশ ফেরত নারীরা অনুরোধ করছেন তাদের নাম ঠিকানা যাতে প্রচার না করা হয়। তার জন্য তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

আর্মড পুলিশের কমাডিং অফিসার বলেন, মানবচারকারী চক্র তাদেরকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে কিংবা টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়েছে। তারা সেখানে যাওয়ার পর তাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এরপর তাদের ওপর চলত অত্যাচার। এখনও দুবাইতে আছে ১৫ জন নারী। এইভাবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে নারীদেরকে পাচার করা হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে ওই নারীদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আর ট্রাভেল এজেন্সির অনিয়ম জালিয়াতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল রাতে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা ২০ থেকে ২৬ বছর বয়সের মেয়েদেরকে বেশি বিদেশ পাঠাত। গ্রামগঞ্জের সহজসরল মেয়েদেরকে ৫০ হাজার টাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাত। সেখানে যাওয়ার পর তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর চলে নির্যাতন। এই ধরনের বহু ঘটনা ঘটছে।

অন্য এক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মানবপাচারকারী চক্র নানা কৌশলে এই সব নারীদের বিদেশ পাচার করছে। প্রায়ই বিমানবন্দরে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাদের টুরিস্ট ভিসা বা ভ্রমণ ভিসার নামে প্রথমে বিদেশ পাঠায়। এরপর সেখানে যাওয়ার পর তারা হয়রানির শিকার হন। এয়ারপোর্টে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর কাহিনী বেরিয়ে আসে। এই সব ঘটনায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক এখন পলাতক রয়েছে। তাদেরকে ধরতে চলছে গোয়েন্দা তৎপরতা। বুঝে না বুঝে অনেক নারী প্রতারিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১৭ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

দেশে ফিরেছে মধ্যপ্রাচ্যে নির্যাতনের শিকার ১২ নারী

দুবাইয়ে ১৫ নারীসহ আরও অনেকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বেশি বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে কিংবা টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার করা হচ্ছে। সৌদি আরব ও দুবাইতে পৌঁছার পর তাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর তাদের ওপর চলে যৌন, মানসিক নির্যাতনসহ নানা ধরনের অত্যাচার।

এয়ারপোর্ট (১৩) আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১২ নারীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আরও নির্যাতিত নারীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তার মধ্যে দুবাইতে এখনও আছে ১৫ জন। এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে জানা যায়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সির মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানা যায়।

এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমাডিং অফিসার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) তোফায়েল আহাম্মদ জানান, কিছু কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টুরিস্ট ভিসা ও বেশি বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে সৌদি আরবে নারীদেরকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। এরপর তাদের ওপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমন বহু অভিযোগের ভিত্তিতে আর্মড পুলিশ অনুসন্ধানী তদন্তে নামেন। তারা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করে সৌদি আরবে যাওয়া নির্যাতিত নারীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেন।

প্রথমে গত ৮ মে পল্টন চায়না টাউনস্থ এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রটিং এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ দেয়ার নামে একজন নারীকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে কোনমতে যোগাযোগ করতে পাচ্ছে না। পরে জানতে পারছে তার স্ত্রী সেখানে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এপিবিএনের সহযোগিতা চেয়েছেন। একই সঙ্গে যে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ওই নারী সৌদি আরবে গেছে সেই এজেন্সির বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে গত ৮ মে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ অভিযোগের আর্মড পুলিশ গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করে। ওই নারী সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গেলে অভিযুক্ত রিক্রটিং এজেন্সির অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়। গা ঢাকা দেন সেখানের কর্মচারীরা। এরপর তাদের ধারণা, ভুক্তভোগী নির্যাতিত নারীদের দেশে ফিরিয়ে আনলে হয়তো তারা আইনি জটিলতা থেকে রেহাই পাবে। যার কারণে ট্রাভেল এজেন্সি সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হওয়া ১২ নারীকে গত শনিবার দেশে ফিরিয়ে আনছে। ১২ জন ভুক্তভোগী নারী ইন্ডিয়াগো এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে গত শনিবার বিকেলে বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা তাদেরকে রিসিভ করেন। এ সময় ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রকল্পের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

দেশে ফেরার পর এপিবিএনের গোয়েন্দা টিম তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতিতরা জানিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে বিদেশ ফেরত নারীরা অনুরোধ করছেন তাদের নাম ঠিকানা যাতে প্রচার না করা হয়। তার জন্য তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

আর্মড পুলিশের কমাডিং অফিসার বলেন, মানবচারকারী চক্র তাদেরকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে কিংবা টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়েছে। তারা সেখানে যাওয়ার পর তাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এরপর তাদের ওপর চলত অত্যাচার। এখনও দুবাইতে আছে ১৫ জন নারী। এইভাবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে নারীদেরকে পাচার করা হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে ওই নারীদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আর ট্রাভেল এজেন্সির অনিয়ম জালিয়াতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল রাতে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা ২০ থেকে ২৬ বছর বয়সের মেয়েদেরকে বেশি বিদেশ পাঠাত। গ্রামগঞ্জের সহজসরল মেয়েদেরকে ৫০ হাজার টাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাত। সেখানে যাওয়ার পর তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর চলে নির্যাতন। এই ধরনের বহু ঘটনা ঘটছে।

অন্য এক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মানবপাচারকারী চক্র নানা কৌশলে এই সব নারীদের বিদেশ পাচার করছে। প্রায়ই বিমানবন্দরে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাদের টুরিস্ট ভিসা বা ভ্রমণ ভিসার নামে প্রথমে বিদেশ পাঠায়। এরপর সেখানে যাওয়ার পর তারা হয়রানির শিকার হন। এয়ারপোর্টে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর কাহিনী বেরিয়ে আসে। এই সব ঘটনায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক এখন পলাতক রয়েছে। তাদেরকে ধরতে চলছে গোয়েন্দা তৎপরতা। বুঝে না বুঝে অনেক নারী প্রতারিত হচ্ছে।