কাজ শেষের দু’বছরেও চালু হয়নি সরবরাহ

নওগাঁর মহাদেপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ইউনিট চালু করার জন্য দুবছর আগে তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও আজও চালু হয়নি সে ইউনিট। অথচ তিনটি প্রকল্পই শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ও প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকরা অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন প্রকল্পটি তাদের কাছে এখনও হস্তান্তরই করা হয়নি। প্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। একই নামে তিনটি প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়িত হলো তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রকাশ্যে দূর্নীতি করে একই প্রকল্প তিন বার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এটিকে সরকারি অর্থ অপচয় ও অনিয়ম দূর্নীতির অভিনব কৌশল হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।

করোনাকালীন সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবারাহ ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই প্রকল্পে একটি কক্ষে কয়েকটি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়। সেখান থেকে প্লাম্বিং ওয়ারিংয়ের মাধ্যমে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেডে অক্সিজেন সরবরাহের লাইন স্থাপন করা হয়। করোনা আক্রান্তদের অথবা অন্য কাউকে অক্সিজেন প্রয়োগের প্রয়োজন হলে ওই লাইন থেকে সকেটের মাধ্যমে অক্সিজেন প্রয়োগ করা হয়। জেলার কয়েকটি উপজেলায় করোনাকালীন সময়েই এই ইউনিট চালু হলেও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও সেটি চালু হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল স্টোরের একটি রুমে মোট ১২টি বড় অক্সিজেনের সিলিন্ডার ও দুইটি বক্স রাখা হয়েছে। হাসপাতালের কোন কোন স্থানে চিকন পাইপ দিয়ে ওয়ারিং করা হয়েছে। কিন্তু অক্সিজেন সরবরাহ চালু নেই। ফলে এ থেকে রোগীরা কোন সুবিধা পাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে ডা: খুরশিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়েই দেয়া হয়নি। ফলে তারা এটা চালু করতেও পারেননি। প্রকল্প সংক্রান্ত কোন তথ্যই তাদেরকে সরবরাহ করা হয়নি। ফলে এই প্রকল্পে কি কি সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে, সেগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষনই বা কিভাবে হবে তাও তিনি জানতে পারেননি। এসংক্রান্ত কোন নথিপত্রও তার কাছে নেই বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় যে, করোনাকালীন সময়ে ২০২০-‘২১ অর্থবছরে উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ‘‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন কাজ’’ এই একই নামে পৃথক তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এর একটিতে আট লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, একটিতে সাত লক্ষ তিনশ’ টাকা এবং অপরটিতে তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্প তিনটিই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই তিনটির একটি প্রকল্পও চালু হয়নি। একই নামে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ করা টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাস জানান, হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করবেন। তবে একই নামে তিনটি প্রকল্প কেনো দেখানো হয়েছে তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

তদানিন্তন উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব বর্তমানে জেলার ধামইরহাট উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদের মোবাইলফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

একই নামে তিনটি প্রকল্প দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখার কথা জানান।

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩ , ২৭ জৈষ্ঠ্য ১৪৩০, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৪

মহাদেবপুরে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্রকল্প

কাজ শেষের দু’বছরেও চালু হয়নি সরবরাহ

প্রতিনিধি, মহাদেবপুর (নওগাঁ)

নওগাঁর মহাদেপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ইউনিট চালু করার জন্য দুবছর আগে তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও আজও চালু হয়নি সে ইউনিট। অথচ তিনটি প্রকল্পই শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ও প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকরা অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন প্রকল্পটি তাদের কাছে এখনও হস্তান্তরই করা হয়নি। প্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। একই নামে তিনটি প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়িত হলো তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রকাশ্যে দূর্নীতি করে একই প্রকল্প তিন বার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এটিকে সরকারি অর্থ অপচয় ও অনিয়ম দূর্নীতির অভিনব কৌশল হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।

করোনাকালীন সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবারাহ ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই প্রকল্পে একটি কক্ষে কয়েকটি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়। সেখান থেকে প্লাম্বিং ওয়ারিংয়ের মাধ্যমে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেডে অক্সিজেন সরবরাহের লাইন স্থাপন করা হয়। করোনা আক্রান্তদের অথবা অন্য কাউকে অক্সিজেন প্রয়োগের প্রয়োজন হলে ওই লাইন থেকে সকেটের মাধ্যমে অক্সিজেন প্রয়োগ করা হয়। জেলার কয়েকটি উপজেলায় করোনাকালীন সময়েই এই ইউনিট চালু হলেও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও সেটি চালু হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল স্টোরের একটি রুমে মোট ১২টি বড় অক্সিজেনের সিলিন্ডার ও দুইটি বক্স রাখা হয়েছে। হাসপাতালের কোন কোন স্থানে চিকন পাইপ দিয়ে ওয়ারিং করা হয়েছে। কিন্তু অক্সিজেন সরবরাহ চালু নেই। ফলে এ থেকে রোগীরা কোন সুবিধা পাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে ডা: খুরশিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়েই দেয়া হয়নি। ফলে তারা এটা চালু করতেও পারেননি। প্রকল্প সংক্রান্ত কোন তথ্যই তাদেরকে সরবরাহ করা হয়নি। ফলে এই প্রকল্পে কি কি সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে, সেগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষনই বা কিভাবে হবে তাও তিনি জানতে পারেননি। এসংক্রান্ত কোন নথিপত্রও তার কাছে নেই বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় যে, করোনাকালীন সময়ে ২০২০-‘২১ অর্থবছরে উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ‘‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন কাজ’’ এই একই নামে পৃথক তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এর একটিতে আট লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, একটিতে সাত লক্ষ তিনশ’ টাকা এবং অপরটিতে তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্প তিনটিই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই তিনটির একটি প্রকল্পও চালু হয়নি। একই নামে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ করা টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাস জানান, হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করবেন। তবে একই নামে তিনটি প্রকল্প কেনো দেখানো হয়েছে তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

তদানিন্তন উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব বর্তমানে জেলার ধামইরহাট উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদের মোবাইলফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

একই নামে তিনটি প্রকল্প দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখার কথা জানান।