এল নিনো শুরু, আগামীতে আবহাওয়া আরও চরমভাবাপন্ন হওয়ার আভাস

এল নিনো শুরু হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তারা আশঙ্কা করছেন, চলমান এল নিনো বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরমভাবাপন্ন এই আবহাওয়ার জন্য ২০২৪ সাল হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ বছর।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এল নিনোর প্রভাব বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে অস্ট্রেলিয়ায় দেখা দেবে খরা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে এবং ভারত তথা এই অঞ্চলের বর্ষা দুর্বল হয়ে বৃষ্টিপাত অনেক কমে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী এল নিনো জলবায়ু পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে। এতে আবহাওয়া ও তাপমাত্রা চরম রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার দেয়া সতর্কবার্তায় বিজ্ঞানীরা বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর বেশি উষ্ণ হয়ে আছে। সবশেষ ২০১৮-১৯ সালে এ ধরনের এল নিনো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। গড়ে ২ থেকে ৭ বছর পর পর এল নিনো পরিস্থিতি হয়।

স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’র অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনা বলা হয়।

এনওএএর জলবায়ুবিজ্ঞানী মিশেল এল হুরু বলেন, ‘এল নিনো কতটা শক্তিশালী, তার ভিত্তিতে পরিবেশের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। যেমন বিশ্বজুড়ে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি কিংবা খরার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া সতর্ক করে বলেছে, দাবানলের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো এল নিনোর প্রভাবে আরও বেশি উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে। জাপান বলছে, দেশটিতে বসন্ত ঋতু রেকর্ড মাত্রার উষ্ণ ছিল। আর এর জন্য এল নিনো আংশিকভাবে দায়ী।

বিশ্বে সবচেয়ে উষ্ণতম বছরগুলো রেকর্ড হয়েছে এল নিনো চলাকালে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, চলতি গ্রীষ্মে এবং পরবর্তীকালে স্থলভাগে ও সমুদ্রে রেকর্ড মাত্রার তাপমাত্রা দেখা দিতে পারে।

ত্রাণ সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইডের সদস্য মারিয়ানা পাওলি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে দরিদ্র জনগণ এমনিতেই খরা, বন্যা ও ঝড়ের ঝুঁকিতে আছে। এল নিনোর প্রভাবে এখন তাদের তীব্র মাত্রার তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে হবে।

পাওলি মনে করেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরিস্থিতির হাত থেকে তাদের বাঁচাতে সামান্যই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

এনওএএর এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীষ্মকালে এল নিনোর প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম হলেও শরতের শেষ থেকে বসন্ত পর্যন্ত বেশি প্রবল হয়ে ওঠে। শীতকাল নাগাদ এল নিনো মাঝারি বা সহনীয় পর্যায়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা ৮৪ শতাংশ। এ ছাড়া এটি শক্তিশালী এল নিনোতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা আছে ৫৬ শতাংশ। এর কারণে দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্যালিফোর্নিয়া থেকে শুরু করে উপসাগরীয় উপকূল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি আর্দ্রতা দেখা দিতে পারে। তবে প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ও ওহাইও ভ্যালির মতো জায়গাগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি শুষ্ক থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতেও গড় তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি উষ্ণ হতে পারে।

এল নিনো তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি দেখা দেয়ার পর গত মাসে এনওএএর ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত পূর্বাভাস পাল্টাতে হয়েছে। এল নিনো আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের দমিয়ে রাখতে পারলেও মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়কে এটি আরও শক্তিশালী করে তোলে।

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩ , ২৭ জৈষ্ঠ্য ১৪৩০, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৪

মার্কিন বিজ্ঞানীদের সতর্কতা

এল নিনো শুরু, আগামীতে আবহাওয়া আরও চরমভাবাপন্ন হওয়ার আভাস

সংবাদ ডেস্ক

এল নিনো শুরু হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তারা আশঙ্কা করছেন, চলমান এল নিনো বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরমভাবাপন্ন এই আবহাওয়ার জন্য ২০২৪ সাল হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ বছর।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এল নিনোর প্রভাব বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে অস্ট্রেলিয়ায় দেখা দেবে খরা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে এবং ভারত তথা এই অঞ্চলের বর্ষা দুর্বল হয়ে বৃষ্টিপাত অনেক কমে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী এল নিনো জলবায়ু পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে। এতে আবহাওয়া ও তাপমাত্রা চরম রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার দেয়া সতর্কবার্তায় বিজ্ঞানীরা বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর বেশি উষ্ণ হয়ে আছে। সবশেষ ২০১৮-১৯ সালে এ ধরনের এল নিনো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। গড়ে ২ থেকে ৭ বছর পর পর এল নিনো পরিস্থিতি হয়।

স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’র অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনা বলা হয়।

এনওএএর জলবায়ুবিজ্ঞানী মিশেল এল হুরু বলেন, ‘এল নিনো কতটা শক্তিশালী, তার ভিত্তিতে পরিবেশের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। যেমন বিশ্বজুড়ে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি কিংবা খরার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া সতর্ক করে বলেছে, দাবানলের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো এল নিনোর প্রভাবে আরও বেশি উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে। জাপান বলছে, দেশটিতে বসন্ত ঋতু রেকর্ড মাত্রার উষ্ণ ছিল। আর এর জন্য এল নিনো আংশিকভাবে দায়ী।

বিশ্বে সবচেয়ে উষ্ণতম বছরগুলো রেকর্ড হয়েছে এল নিনো চলাকালে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, চলতি গ্রীষ্মে এবং পরবর্তীকালে স্থলভাগে ও সমুদ্রে রেকর্ড মাত্রার তাপমাত্রা দেখা দিতে পারে।

ত্রাণ সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইডের সদস্য মারিয়ানা পাওলি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে দরিদ্র জনগণ এমনিতেই খরা, বন্যা ও ঝড়ের ঝুঁকিতে আছে। এল নিনোর প্রভাবে এখন তাদের তীব্র মাত্রার তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে হবে।

পাওলি মনে করেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরিস্থিতির হাত থেকে তাদের বাঁচাতে সামান্যই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

এনওএএর এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীষ্মকালে এল নিনোর প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম হলেও শরতের শেষ থেকে বসন্ত পর্যন্ত বেশি প্রবল হয়ে ওঠে। শীতকাল নাগাদ এল নিনো মাঝারি বা সহনীয় পর্যায়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা ৮৪ শতাংশ। এ ছাড়া এটি শক্তিশালী এল নিনোতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা আছে ৫৬ শতাংশ। এর কারণে দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্যালিফোর্নিয়া থেকে শুরু করে উপসাগরীয় উপকূল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি আর্দ্রতা দেখা দিতে পারে। তবে প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ও ওহাইও ভ্যালির মতো জায়গাগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি শুষ্ক থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতেও গড় তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি উষ্ণ হতে পারে।

এল নিনো তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি দেখা দেয়ার পর গত মাসে এনওএএর ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত পূর্বাভাস পাল্টাতে হয়েছে। এল নিনো আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের দমিয়ে রাখতে পারলেও মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়কে এটি আরও শক্তিশালী করে তোলে।