আটলান্টিকের ওপর ও নিউইয়র্কের আকাশে ধোঁয়ার মেঘ
দাবানলে পুড়ছে কানাডা। ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে কানাডার দাবানল পরিস্থিতি। শুধু এ বছরই সংখ্যার দিক থেকে ১৮০০-এর বেশি দাবানলে পুড়েছে কানাডার অনেকগুলো বনাঞ্চল। দেশটির ন্যাশনাল ওয়াইল্ডল্যান্ড ফায়ার সিচুয়েশন-এর রিপোর্ট বলছে, বছরের প্রথম ৫ মাসেই পুড়ে ছাই হয়েছে ৯৪ লাখ একর বন। বর্তমানে দেশটিতে শত শত দাবানল চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ৪৩২টিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে চিহ্নিত করেছে কানাডা।
এক্সিওসের রিপোর্টে বলা হয়, এরমধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা কুইবেক প্রদেশের। সেখানে মোট ১৩৭টি দাবানল রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বৃটিশ কলাম্বিয়ায় ৮৩টি, আলবার্টায় ৬৪টি, ওন্টারিওতে ৩১টি এবং নর্দার্ন টেরিটোরিজে ২১টি দাবানল চলমান রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এ কারণেই এত ঘনঘন এবং ভয়াবহ আকারে দাবানল দেখা যাচ্ছে। একবার আগুন লেগে গেলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বন পুড়তে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে যে কানাডার অভ্যন্তরীণ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এটা মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়। গত মাসে পশ্চিম কানাডায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর সম্প্রতিকালে এটি আটলান্টিক মহাসাগর উপকূলের নোভা স্কশিয়া প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ সপ্তাহে দাবানল কুইবেকে আঘাত হানে। বর্তমানে এ এই প্রদেশটিই দাবানলের কেন্দ্রস্থল।
দাবানলের কারণে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে বিশাল ধোঁয়ার মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও বায়ু দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কানাডার দাবানল থামাতে ৬০০ দমকলকর্মী পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রভাব পড়ছে উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও। এর জেরে দুই দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই আগুনকে ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ দাবানল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কানাডার দক্ষিণ অংশে রয়েছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। সেই বনাঞ্চলের প্রায় ৩৮ লাখ হেক্টর জঙ্গল এলাকায় লেগেছে আগুন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তার কারণ হাজারো মানুষকে কুইবেক ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবেশি আরও কয়েকটি দেশ। এর আগে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসময় দাবানল নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
কানাডার দাবানলে উত্তর আমেরিকার এই অবস্থা নিয়ে চিন্তিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে। কত দ্রুত জঙ্গলের এই আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সে ব্যাপারেও কথা হয়েছে দুদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। দাবানলের জেরে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অংশে লাফিয়ে বেড়েছে দূষণ। নিউ ইয়র্ক শহরে দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ওই শহরের বহু মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। কানাডায় প্রায় ২০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়ার পরিমাণ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিমান চলাচলেও। বহু এলাকায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় বাতিল করা হয়েছে বিমান। বিভিন্ন জায়গায় বাতিল হয়েছে বেশ কিছু ম্যাচও। কুইবেকের আগুনের ধোঁয়া অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। কানাডার অন্যান্য শহর, এমন কী, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেও পৌঁছেছে সেই ধোঁয়া। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে ধোঁয়া ও কুয়াশার কারণে আকাশ দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে।
কেন এই ভয়াবহ দাবানল
কানাডা সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, প্রবল গরমের জেরেই এই দাবানল। এসব অগ্নিকা- আমাদের দৈনন্দিন জীবন, জীবিকা ও বাতাসের গুণগত মানকে প্রভাবিত করছে, যোগ করেন ট্রুডো। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
নিউইয়র্কসহ দেশটির পূর্ব উপকূল রেকর্ড পরিমাণ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গত বুধবার বায়ুদূষণ নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিউইয়র্কে রেকর্ড পরিমাণ ঘন হলুদাভ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মেয়র এরিক অ্যাডামস নগরবাসীকে ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধোঁয়ার কারণে বিমান ওঠা–নামায় দেরি হয়। আগে থেকে নির্ধারণ করা বিভিন্ন খেলার ম্যাচ স্থগিত করা হয়। গত শতকের ৬০ এর দশকের পর নগরবাসী সবচেয়ে দূষিত বায়ুর মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার আসউইন ভাসান। আর নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বিদ্যমান পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থা অভিহিত করেছেন।
নিউইয়র্কের আকাশে কালো ধোঁয়া মাস্ক পড়ে বের হওয়ার নির্দেশ
আরও খবরশনিবার, ১০ জুন ২০২৩ , ২৭ জৈষ্ঠ্য ১৪৩০, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৪
আটলান্টিকের ওপর ও নিউইয়র্কের আকাশে ধোঁয়ার মেঘ
সংবাদ ডেস্ক
নিউইয়র্কের আকাশে কালো ধোঁয়া মাস্ক পড়ে বের হওয়ার নির্দেশ
দাবানলে পুড়ছে কানাডা। ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে কানাডার দাবানল পরিস্থিতি। শুধু এ বছরই সংখ্যার দিক থেকে ১৮০০-এর বেশি দাবানলে পুড়েছে কানাডার অনেকগুলো বনাঞ্চল। দেশটির ন্যাশনাল ওয়াইল্ডল্যান্ড ফায়ার সিচুয়েশন-এর রিপোর্ট বলছে, বছরের প্রথম ৫ মাসেই পুড়ে ছাই হয়েছে ৯৪ লাখ একর বন। বর্তমানে দেশটিতে শত শত দাবানল চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ৪৩২টিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে চিহ্নিত করেছে কানাডা।
এক্সিওসের রিপোর্টে বলা হয়, এরমধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা কুইবেক প্রদেশের। সেখানে মোট ১৩৭টি দাবানল রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বৃটিশ কলাম্বিয়ায় ৮৩টি, আলবার্টায় ৬৪টি, ওন্টারিওতে ৩১টি এবং নর্দার্ন টেরিটোরিজে ২১টি দাবানল চলমান রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এ কারণেই এত ঘনঘন এবং ভয়াবহ আকারে দাবানল দেখা যাচ্ছে। একবার আগুন লেগে গেলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বন পুড়তে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে যে কানাডার অভ্যন্তরীণ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এটা মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়। গত মাসে পশ্চিম কানাডায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর সম্প্রতিকালে এটি আটলান্টিক মহাসাগর উপকূলের নোভা স্কশিয়া প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ সপ্তাহে দাবানল কুইবেকে আঘাত হানে। বর্তমানে এ এই প্রদেশটিই দাবানলের কেন্দ্রস্থল।
দাবানলের কারণে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে বিশাল ধোঁয়ার মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও বায়ু দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কানাডার দাবানল থামাতে ৬০০ দমকলকর্মী পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রভাব পড়ছে উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও। এর জেরে দুই দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই আগুনকে ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ দাবানল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কানাডার দক্ষিণ অংশে রয়েছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। সেই বনাঞ্চলের প্রায় ৩৮ লাখ হেক্টর জঙ্গল এলাকায় লেগেছে আগুন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তার কারণ হাজারো মানুষকে কুইবেক ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবেশি আরও কয়েকটি দেশ। এর আগে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসময় দাবানল নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
কানাডার দাবানলে উত্তর আমেরিকার এই অবস্থা নিয়ে চিন্তিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে। কত দ্রুত জঙ্গলের এই আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সে ব্যাপারেও কথা হয়েছে দুদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। দাবানলের জেরে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অংশে লাফিয়ে বেড়েছে দূষণ। নিউ ইয়র্ক শহরে দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ওই শহরের বহু মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। কানাডায় প্রায় ২০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়ার পরিমাণ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিমান চলাচলেও। বহু এলাকায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় বাতিল করা হয়েছে বিমান। বিভিন্ন জায়গায় বাতিল হয়েছে বেশ কিছু ম্যাচও। কুইবেকের আগুনের ধোঁয়া অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। কানাডার অন্যান্য শহর, এমন কী, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেও পৌঁছেছে সেই ধোঁয়া। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে ধোঁয়া ও কুয়াশার কারণে আকাশ দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে।
কেন এই ভয়াবহ দাবানল
কানাডা সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, প্রবল গরমের জেরেই এই দাবানল। এসব অগ্নিকা- আমাদের দৈনন্দিন জীবন, জীবিকা ও বাতাসের গুণগত মানকে প্রভাবিত করছে, যোগ করেন ট্রুডো। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
নিউইয়র্কসহ দেশটির পূর্ব উপকূল রেকর্ড পরিমাণ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গত বুধবার বায়ুদূষণ নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিউইয়র্কে রেকর্ড পরিমাণ ঘন হলুদাভ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মেয়র এরিক অ্যাডামস নগরবাসীকে ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধোঁয়ার কারণে বিমান ওঠা–নামায় দেরি হয়। আগে থেকে নির্ধারণ করা বিভিন্ন খেলার ম্যাচ স্থগিত করা হয়। গত শতকের ৬০ এর দশকের পর নগরবাসী সবচেয়ে দূষিত বায়ুর মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার আসউইন ভাসান। আর নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বিদ্যমান পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থা অভিহিত করেছেন।