জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান অবসরে যাওয়ার (১৩ জুন) এক সপ্তাহ আগে চুক্তিভিত্তিকভাবে তাকে ফের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইন অনুসারে নেয়া হয়নি সিন্ডিকেট অনুমোদন। মানা হয়নি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেয়ার ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়োগ অনিয়মভাবে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অবসরের আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চাইলে তাকে দেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে সে সময় ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা আছে বলা হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ায় শিক্ষক কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছেন, ব্যক্তি দেখে নিয়োগে ভিন্ন নীতি কেন?
এদিকে রেজিস্ট্রারকে নিয়োগের বিষয়ে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেছেন, ‘নিয়ম হলো যদি পদ খালি হয় তবে বিজ্ঞাপন দিতে হবে দুইবার। একবার না পাওয়া গেলে দ্বিতীয়বার দিতে হবে। দ্বিতীয় বারেও না পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে লিখতে হবে যে আমরা যোগ্য কাউকে পাচ্ছি না। আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চাচ্ছি। তখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দিবে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়াই হয়নি। তাই অবসরের পরে রেজিস্ট্রারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্তে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।’
এছাড়া ২০২২ সালের ২০ মার্চ ইউজিসির এক আদেশে বলা হয়, ১০ বছরের অধিক বয়সের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারসহ নানা পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক বা খ-কালীন নিয়োগ দেয়া যাবে না। অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধির বাছাই বোর্ড ৫ ধারার ৯ উপ-বিধিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা শাখা প্রধানের পদ ব্যতীত অন্যান্য পদের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিকভাবে ৬ মাসের জন্য অস্থায়ী নিয়োগ দেয়া যাবে। তবে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু জবি রেজিস্ট্রার নিয়োগে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেয়া হয়নি। মানা হয়নি ইউজিসির নিষেধাজ্ঞাও।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই রেজিস্ট্রারকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়ম মেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নয়, কিছু সংখ্যক ব্যক্তির স্বার্থেই অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা।
নাম গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রার স্যার জগন্নাথে দীর্ঘদিন যাবত আছে। সব পথ তার চেনা। সে থাকলে কিছু মানুষ ফাইদা লুটতে পারবে ভালোমতো। সামনে অনেক নিয়োগ। এজন্যই সব নিয়ম ভেঙে তাকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেছেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। আমরা উপাচার্যকে মানা করেছিলাম। কিছু মানুষের সুবিধার জন্য তাদের প্ররোচনায় নিয়ম না মেনে এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়োগে ৭০০ শিক্ষকের কোন পরামর্শ নেয়া হয়নি। ইউজিসির নির্দেশও মানা হলো না।
ব্যক্তি দেখে নিয়োগনীতি ভিন্ন : এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আখতারুজ্জামান একই ভাবে অবসরোত্তর ছুটি স্থগিত সাপেক্ষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চুক্তিভিত্তিতে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা আছে জানায়।
এ বিষয়ে একে এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাকে এভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যায় কি-না বলেছিলাম। কিন্তু ট্রেজারার ও এই রেজিস্ট্রারই সবার সামনে বলেন, ইউজিসি থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। চুক্তিভিত্তিক দেয়া যাবে না। কিন্তু রেজিস্ট্রারকে ঠিকই একই ভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলো। তারা বলছে চুক্তিভিত্তিক দেয়া যাবে। ব্যক্তি দেখে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই নীতি কেন। রেজিস্ট্রার নিয়োগে কি ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা ছিল না? উপাচার্য চাইলেই যদি রেজিস্ট্রারকে চুক্তিভিত্তিক দিতে পারে। আমাকে দিলো না কেন?
শনিবার, ১০ জুন ২০২৩ , ২৭ জৈষ্ঠ্য ১৪৩০, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৪
মাহমুদ তানজীদ, জবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান অবসরে যাওয়ার (১৩ জুন) এক সপ্তাহ আগে চুক্তিভিত্তিকভাবে তাকে ফের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইন অনুসারে নেয়া হয়নি সিন্ডিকেট অনুমোদন। মানা হয়নি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেয়ার ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়োগ অনিয়মভাবে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অবসরের আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চাইলে তাকে দেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে সে সময় ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা আছে বলা হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ায় শিক্ষক কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছেন, ব্যক্তি দেখে নিয়োগে ভিন্ন নীতি কেন?
এদিকে রেজিস্ট্রারকে নিয়োগের বিষয়ে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেছেন, ‘নিয়ম হলো যদি পদ খালি হয় তবে বিজ্ঞাপন দিতে হবে দুইবার। একবার না পাওয়া গেলে দ্বিতীয়বার দিতে হবে। দ্বিতীয় বারেও না পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে লিখতে হবে যে আমরা যোগ্য কাউকে পাচ্ছি না। আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চাচ্ছি। তখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দিবে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়াই হয়নি। তাই অবসরের পরে রেজিস্ট্রারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্তে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।’
এছাড়া ২০২২ সালের ২০ মার্চ ইউজিসির এক আদেশে বলা হয়, ১০ বছরের অধিক বয়সের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারসহ নানা পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক বা খ-কালীন নিয়োগ দেয়া যাবে না। অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধির বাছাই বোর্ড ৫ ধারার ৯ উপ-বিধিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা শাখা প্রধানের পদ ব্যতীত অন্যান্য পদের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিকভাবে ৬ মাসের জন্য অস্থায়ী নিয়োগ দেয়া যাবে। তবে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু জবি রেজিস্ট্রার নিয়োগে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেয়া হয়নি। মানা হয়নি ইউজিসির নিষেধাজ্ঞাও।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই রেজিস্ট্রারকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়ম মেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নয়, কিছু সংখ্যক ব্যক্তির স্বার্থেই অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা।
নাম গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রার স্যার জগন্নাথে দীর্ঘদিন যাবত আছে। সব পথ তার চেনা। সে থাকলে কিছু মানুষ ফাইদা লুটতে পারবে ভালোমতো। সামনে অনেক নিয়োগ। এজন্যই সব নিয়ম ভেঙে তাকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেছেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। আমরা উপাচার্যকে মানা করেছিলাম। কিছু মানুষের সুবিধার জন্য তাদের প্ররোচনায় নিয়ম না মেনে এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়োগে ৭০০ শিক্ষকের কোন পরামর্শ নেয়া হয়নি। ইউজিসির নির্দেশও মানা হলো না।
ব্যক্তি দেখে নিয়োগনীতি ভিন্ন : এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আখতারুজ্জামান একই ভাবে অবসরোত্তর ছুটি স্থগিত সাপেক্ষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চুক্তিভিত্তিতে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা আছে জানায়।
এ বিষয়ে একে এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাকে এভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যায় কি-না বলেছিলাম। কিন্তু ট্রেজারার ও এই রেজিস্ট্রারই সবার সামনে বলেন, ইউজিসি থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। চুক্তিভিত্তিক দেয়া যাবে না। কিন্তু রেজিস্ট্রারকে ঠিকই একই ভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলো। তারা বলছে চুক্তিভিত্তিক দেয়া যাবে। ব্যক্তি দেখে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই নীতি কেন। রেজিস্ট্রার নিয়োগে কি ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা ছিল না? উপাচার্য চাইলেই যদি রেজিস্ট্রারকে চুক্তিভিত্তিক দিতে পারে। আমাকে দিলো না কেন?