সৌরবিদ্যুতে পাল্টে দিচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের জীবন চিত্র

বরেন্দ্র অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ করে পদ্মা নিকটবর্তী চরঅঞ্চলে যেখোনে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার দিনের পরদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন। গোদাগাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। গোদাগাড়ীর বিদিরপুর থেকে আধা ঘণ্টায় উত্তাল পদ্মা নদী পার হয়ে সেখানে পৌঁছাতে হয়। সেই গ্রামে খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার সংকট থাকলেও সৌর বিদ্যৎ থেকে উৎপন্ন আলোয় আলোকিত হচ্ছে তাদের গ্রাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনেও। তবে বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় হতাশ তারা।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে মোট ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। মানুষের দোরগোড়ায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিসিওএল)। এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠান আভা-মিনি গ্রিড প্রজেক্ট চর আষাড়িয়াদহে গ্রামে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমান্তনগর ও নওশেরা গ্রামের মানুষরা বিদ্যুতের সেবা পেয়ে থাকেন।

আভা-মিনি প্রজক্টের প্ল্যান্টএর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর সৌর প্যানেলের কার্যক্রম শুরু হয়। দিনে সৌর প্যানেলগুলো সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুত সংগ্রহ করে। সেই জমাকৃত বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলে সেগুলো জমা থাকে। সেই জমাকৃত বিদ্যুৎ রাতে সরবরাহ করা হয়। একটি মিটার থেকে কয়েকটি বাল্ব, ফ্যান ও টেলিভিশন চালানো যায়।

গত দুই বছর আগেও ওই ইউনিয়নে বিদ্যুৎ ছিল না। তখন বিদ্যুতের চার্জ করার জন্য আধাঘণ্টার পদ্মা পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হতো বিদিরপুরে। বিদিরপুর থেকে মোবাইল, ব্যাটারি চার্জার চার্জ দিয়ে নিয়ে যেত গ্রামের বাসিন্দারা। আর এখন বিদ্যুৎ পেয়ে তারা বাড়িতে বসেই মোবাইলে চার্জ দিতে পারে। টিভি সেটের সামনে বসে পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে পারে। আর গরমকালে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় পায় ফ্যানের বাতাস। রাতে ঘর আলোকিত করে বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো।

ভুবনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, আগে মোবাইলে চার্জ দিতে পদ্মা নদী নৌকায় পার হয়ে ওই পারে গিয়ে চার্জ দিতে হতো। আর এখন সেই সমস্যা নেই। সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেয়ে আলো জ্বালানো যায়, টিভি দেখতে পারি আর ফ্যানের বাতাস তো পাওয়া যায়। রাতে ছেলেমেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় পড়ালেখা করতে পারে।

কানপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলেয়া বানু বলেন, বিদ্যুৎ আসার পরে গ্রামের অনেক পরিবর্তনই হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের কারণে রাতে আলো জ্বালানো যায়। আগে অন্ধকারে কষ্ট হতো। এখন টিভিও দেখতে পারি। তবে বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি মিটার প্রি-পেইড। আগে টাকা দিয়ে ইউনিট কিনে নিয়ে যেতে হয়।

এদিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিসিক এলাকায় পাশাপাশি থাকা দুটি পুকুরের ওপরে সারি সারি সাজানো সোলার প্যানেল। পুকুরের পানি থেকে একটু ওপরে বিশেষ পদ্ধতিতে বাতাস ও ঢেউ সামলাতে সক্ষম ফ্লোটারের ওপরে ভাসছে প্রায় ১৫০০ সোলার প্যানেল।

আর এর নিচেই রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ। পুরো পুকুরের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে প্যানেলগুলো। আর প্যানেলগুলো পরিষ্কার করার জন্য প্রতিটি সারির প্যানেলুগলোর পাশ দিয়ে রাখা হয়েছে পানি সরবরাহ লাইন। কোনো কারণে প্যানেলে ময়লা জমলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এভাবেই পুকুরে পানির ওপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানির নিচে মাছ চাষ করা হচ্ছে একই সঙ্গে। দেশের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালু হয়েছে পুকুরের পানিতে প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি জুলস পাওয়ার লিমিটেড। বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আতাহার-বুলনপুরের বিসিক শিল্প এলাকায় নবাব অটোরাইস মিলের আওতায় নবাব মৎস্য খামার প্রকল্পের দুটি পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাচ্ছে জাতীয় গিগ্রড।

তারা আরও জানায়, গত ২৯ মে সমবার বিকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২.৩ মেগাওয়াট হলেও প্রাথমিকভাবে পিক আওয়ারে (সূর্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকাকালে চার ঘণ্টা) গত তিনদিনে ঘণ্টা প্রতি সর্বোচ্চ ১.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে। এ পপ্রল্পের মাধ্যমে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ও কোনো জমি ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। অন্যদিকে সোলার প্যানেল পানির ওপরে ভাসতে থাকায় টেকসই হয়।

প্রকল্প এলাকার কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে এক বছর এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে মাছচাষের কোনো ক্ষতি না হলে ব্যাপকহারে বাড়ানো হবে এমন প্রকল্প। পুকুরের অর্ধেক জায়গায় সোলার প্যানেল থাকায় ও সোলার প্যানেল সরানোর সুযোগ থাকায় মাছের পরিচর্যায় কোনো সমস্যা হয় না।

কর্মকতারা আরো জানান ,এখানে যেহেতু মাছচাষ হচ্ছে, তাই ফুডগ্রেডেড প্লাস্টিকের ফ্লোটার ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে মাছের ক্ষতি না হয়। এর লাইফ টাইম প্রায় ২৫ বছর। ঝড় কিংবা টর্নেডোর কথা বিবেচনায় রেখে অ্যাংকরিং সিস্টেমও রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন , আমরা দীর্ঘদিন ধরে সোলার বিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে কাজ করছি। সাধারণত ছাদে বা খোলা জায়গায় আমরা এতদিন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করলেও এবারই প্রথম ঢাকার বাইরে এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করলাম। এ প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাপেক্ষ হলেও জায়গা বাঁচাতে এবং ভাসমান এ প্রকল্পটি কার্যকর হলে আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে এর বিস্তার ঘটাতে চাই। প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন নদী বা পুকুরে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেচের ব্যয় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে খরাপ্রবণ বরেন্দ্রঅঞ্চলে উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উন্নীত করা হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে নবায়ন যোগ্য জ¦ালানী হিসেবে সৌরবিদ্যৃত ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের সৌর বিদ্যুতের বাবহারকারিরা জানিয়েছেন, যখন গ্রিড লাইনের বিদ্যুত থাকে না তখন তারা সৌরবিদুতের ওপর নির্ভর করেন। লোডশেডিংয়ের সময়ে বাড়তি এই ব্যবস্থা হিসেবে সৌরবিদ্যুত বেশ কাজে দিচ্ছে। তারা জানান, দুই ধরনের বিদ্যুত ব্যবহারের কারণে সৌরবিদ্যুতের অনেকটা অব্যবহৃত থেকে যায়। ফলে বিদ্যুত নষ্ট না করে ডিভাইসের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারছেন।

এদিকে জীবাশ্ম জ্বালানীতে বিনিয়োগ বন্ধ করে মুজিবি জলবায়ু সমৃদ্ধি পরকিল্পনা বাস্তবায়নে গ্যাস বা হাইড্রোজেন নয়: নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের দাবিতে রাজশাহীতে আলোচনা ও গম্ভীরা গানের আয়োজন করা হয়েছে। নগরীর লালন চত্বরে উন্নয়ন সংগঠন পরিবর্তন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরবিশে র্কমজোট (ক্লনি), গ্রোথ ওয়াচ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলোজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট ’র উদ্যোগে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অন্যতম নিয়ামক হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানীখাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যেখানে ২০১৩ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিলো ১৩৯ কোটি ডলার, ২০২২ সালে সেটা ২০২২ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিযয়োগ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। আমরা সকলেই জানি, আমাদেও দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৮২ শতাংশই গ্যাস,কয়লা ও ডিজেল ভিত্তিক এবং এর অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। এই গ্যাস যাদের কাছ থেকে আমদানী করতে হয় তার অধিকাংশই এই জি-২০ ভুক্ত দেশ সমূহ। তাই তাদের কাছে দাবি তোমরা গ্যাস কয়লা তেল ভিত্তিক জ্বালানিতে বিনিয়োগ না-করে, আমাদের জন্য সুবিধাজনক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নিয়োগ করো ।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারের কাছে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাবে। বিপিসি জানিয়েছে, তাদের কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা ১০ দশমিক ৬ কোটি ডলার। আজ যেহেতু বাংলাদেশ এক সংকটাপন্ন অবস্থানের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। স্বল্প আয়ের দেশ সমূহের ভাগ্য নির্ধারনে ভারতে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও সেখানে আমন্ত্রিত। তাদের কাছে আমাদের দাবি আর নয় জীবাশ্ব জ্বালানিতে বন্ধ হোক বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি হোক সবার জন্য। গ্যাস-কয়লা-তেল ভিত্তিক জ্বালানীতে বিনিয়োগ না-করে, বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নিয়োগ করো; দারিদ্রকরণের নীতি বর্জন করো, সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলো। তোমাদের বিনিয়োগ আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছে, পরোনির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তুলছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তোমাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করো। কার্বন নিরসনে অর্থায়র করো।

অলোচনায় অংশ নেয় পরিবর্তন পরিচালক রাশেদ রিপন, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান, উন্নয়ন কর্মী মাহামুদ উন নবী, তাহেরা খাতুনসহ বিভিন্ন সংগঠনের উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গম্ভীরা পরিবেশন করেন রঙ্গরস থিয়েটার।

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২৯ ভাদ্র ১৪৩০, ২৭ সফর ১৪৪৫

সৌরবিদ্যুতে পাল্টে দিচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের জীবন চিত্র

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

রাজশাহী : সৌরবিদ্যৎ থেকে উৎপন্ন আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রাম -সংবাদ

বরেন্দ্র অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ করে পদ্মা নিকটবর্তী চরঅঞ্চলে যেখোনে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার দিনের পরদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন। গোদাগাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। গোদাগাড়ীর বিদিরপুর থেকে আধা ঘণ্টায় উত্তাল পদ্মা নদী পার হয়ে সেখানে পৌঁছাতে হয়। সেই গ্রামে খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার সংকট থাকলেও সৌর বিদ্যৎ থেকে উৎপন্ন আলোয় আলোকিত হচ্ছে তাদের গ্রাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনেও। তবে বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় হতাশ তারা।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে মোট ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। মানুষের দোরগোড়ায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিসিওএল)। এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠান আভা-মিনি গ্রিড প্রজেক্ট চর আষাড়িয়াদহে গ্রামে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমান্তনগর ও নওশেরা গ্রামের মানুষরা বিদ্যুতের সেবা পেয়ে থাকেন।

আভা-মিনি প্রজক্টের প্ল্যান্টএর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর সৌর প্যানেলের কার্যক্রম শুরু হয়। দিনে সৌর প্যানেলগুলো সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুত সংগ্রহ করে। সেই জমাকৃত বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলে সেগুলো জমা থাকে। সেই জমাকৃত বিদ্যুৎ রাতে সরবরাহ করা হয়। একটি মিটার থেকে কয়েকটি বাল্ব, ফ্যান ও টেলিভিশন চালানো যায়।

গত দুই বছর আগেও ওই ইউনিয়নে বিদ্যুৎ ছিল না। তখন বিদ্যুতের চার্জ করার জন্য আধাঘণ্টার পদ্মা পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হতো বিদিরপুরে। বিদিরপুর থেকে মোবাইল, ব্যাটারি চার্জার চার্জ দিয়ে নিয়ে যেত গ্রামের বাসিন্দারা। আর এখন বিদ্যুৎ পেয়ে তারা বাড়িতে বসেই মোবাইলে চার্জ দিতে পারে। টিভি সেটের সামনে বসে পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে পারে। আর গরমকালে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় পায় ফ্যানের বাতাস। রাতে ঘর আলোকিত করে বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো।

ভুবনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, আগে মোবাইলে চার্জ দিতে পদ্মা নদী নৌকায় পার হয়ে ওই পারে গিয়ে চার্জ দিতে হতো। আর এখন সেই সমস্যা নেই। সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেয়ে আলো জ্বালানো যায়, টিভি দেখতে পারি আর ফ্যানের বাতাস তো পাওয়া যায়। রাতে ছেলেমেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় পড়ালেখা করতে পারে।

কানপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলেয়া বানু বলেন, বিদ্যুৎ আসার পরে গ্রামের অনেক পরিবর্তনই হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের কারণে রাতে আলো জ্বালানো যায়। আগে অন্ধকারে কষ্ট হতো। এখন টিভিও দেখতে পারি। তবে বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি মিটার প্রি-পেইড। আগে টাকা দিয়ে ইউনিট কিনে নিয়ে যেতে হয়।

এদিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিসিক এলাকায় পাশাপাশি থাকা দুটি পুকুরের ওপরে সারি সারি সাজানো সোলার প্যানেল। পুকুরের পানি থেকে একটু ওপরে বিশেষ পদ্ধতিতে বাতাস ও ঢেউ সামলাতে সক্ষম ফ্লোটারের ওপরে ভাসছে প্রায় ১৫০০ সোলার প্যানেল।

আর এর নিচেই রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ। পুরো পুকুরের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে প্যানেলগুলো। আর প্যানেলগুলো পরিষ্কার করার জন্য প্রতিটি সারির প্যানেলুগলোর পাশ দিয়ে রাখা হয়েছে পানি সরবরাহ লাইন। কোনো কারণে প্যানেলে ময়লা জমলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এভাবেই পুকুরে পানির ওপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানির নিচে মাছ চাষ করা হচ্ছে একই সঙ্গে। দেশের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালু হয়েছে পুকুরের পানিতে প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি জুলস পাওয়ার লিমিটেড। বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আতাহার-বুলনপুরের বিসিক শিল্প এলাকায় নবাব অটোরাইস মিলের আওতায় নবাব মৎস্য খামার প্রকল্পের দুটি পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাচ্ছে জাতীয় গিগ্রড।

তারা আরও জানায়, গত ২৯ মে সমবার বিকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২.৩ মেগাওয়াট হলেও প্রাথমিকভাবে পিক আওয়ারে (সূর্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকাকালে চার ঘণ্টা) গত তিনদিনে ঘণ্টা প্রতি সর্বোচ্চ ১.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে। এ পপ্রল্পের মাধ্যমে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ও কোনো জমি ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। অন্যদিকে সোলার প্যানেল পানির ওপরে ভাসতে থাকায় টেকসই হয়।

প্রকল্প এলাকার কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে এক বছর এ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে মাছচাষের কোনো ক্ষতি না হলে ব্যাপকহারে বাড়ানো হবে এমন প্রকল্প। পুকুরের অর্ধেক জায়গায় সোলার প্যানেল থাকায় ও সোলার প্যানেল সরানোর সুযোগ থাকায় মাছের পরিচর্যায় কোনো সমস্যা হয় না।

কর্মকতারা আরো জানান ,এখানে যেহেতু মাছচাষ হচ্ছে, তাই ফুডগ্রেডেড প্লাস্টিকের ফ্লোটার ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে মাছের ক্ষতি না হয়। এর লাইফ টাইম প্রায় ২৫ বছর। ঝড় কিংবা টর্নেডোর কথা বিবেচনায় রেখে অ্যাংকরিং সিস্টেমও রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন , আমরা দীর্ঘদিন ধরে সোলার বিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে কাজ করছি। সাধারণত ছাদে বা খোলা জায়গায় আমরা এতদিন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করলেও এবারই প্রথম ঢাকার বাইরে এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করলাম। এ প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাপেক্ষ হলেও জায়গা বাঁচাতে এবং ভাসমান এ প্রকল্পটি কার্যকর হলে আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে এর বিস্তার ঘটাতে চাই। প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন নদী বা পুকুরে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেচের ব্যয় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে খরাপ্রবণ বরেন্দ্রঅঞ্চলে উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উন্নীত করা হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে নবায়ন যোগ্য জ¦ালানী হিসেবে সৌরবিদ্যৃত ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের সৌর বিদ্যুতের বাবহারকারিরা জানিয়েছেন, যখন গ্রিড লাইনের বিদ্যুত থাকে না তখন তারা সৌরবিদুতের ওপর নির্ভর করেন। লোডশেডিংয়ের সময়ে বাড়তি এই ব্যবস্থা হিসেবে সৌরবিদ্যুত বেশ কাজে দিচ্ছে। তারা জানান, দুই ধরনের বিদ্যুত ব্যবহারের কারণে সৌরবিদ্যুতের অনেকটা অব্যবহৃত থেকে যায়। ফলে বিদ্যুত নষ্ট না করে ডিভাইসের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারছেন।

এদিকে জীবাশ্ম জ্বালানীতে বিনিয়োগ বন্ধ করে মুজিবি জলবায়ু সমৃদ্ধি পরকিল্পনা বাস্তবায়নে গ্যাস বা হাইড্রোজেন নয়: নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের দাবিতে রাজশাহীতে আলোচনা ও গম্ভীরা গানের আয়োজন করা হয়েছে। নগরীর লালন চত্বরে উন্নয়ন সংগঠন পরিবর্তন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরবিশে র্কমজোট (ক্লনি), গ্রোথ ওয়াচ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলোজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট ’র উদ্যোগে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অন্যতম নিয়ামক হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানীখাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যেখানে ২০১৩ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিলো ১৩৯ কোটি ডলার, ২০২২ সালে সেটা ২০২২ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিযয়োগ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। আমরা সকলেই জানি, আমাদেও দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৮২ শতাংশই গ্যাস,কয়লা ও ডিজেল ভিত্তিক এবং এর অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। এই গ্যাস যাদের কাছ থেকে আমদানী করতে হয় তার অধিকাংশই এই জি-২০ ভুক্ত দেশ সমূহ। তাই তাদের কাছে দাবি তোমরা গ্যাস কয়লা তেল ভিত্তিক জ্বালানিতে বিনিয়োগ না-করে, আমাদের জন্য সুবিধাজনক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নিয়োগ করো ।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারের কাছে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাবে। বিপিসি জানিয়েছে, তাদের কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা ১০ দশমিক ৬ কোটি ডলার। আজ যেহেতু বাংলাদেশ এক সংকটাপন্ন অবস্থানের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। স্বল্প আয়ের দেশ সমূহের ভাগ্য নির্ধারনে ভারতে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও সেখানে আমন্ত্রিত। তাদের কাছে আমাদের দাবি আর নয় জীবাশ্ব জ্বালানিতে বন্ধ হোক বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি হোক সবার জন্য। গ্যাস-কয়লা-তেল ভিত্তিক জ্বালানীতে বিনিয়োগ না-করে, বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নিয়োগ করো; দারিদ্রকরণের নীতি বর্জন করো, সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলো। তোমাদের বিনিয়োগ আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছে, পরোনির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তুলছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তোমাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করো। কার্বন নিরসনে অর্থায়র করো।

অলোচনায় অংশ নেয় পরিবর্তন পরিচালক রাশেদ রিপন, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান, উন্নয়ন কর্মী মাহামুদ উন নবী, তাহেরা খাতুনসহ বিভিন্ন সংগঠনের উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গম্ভীরা পরিবেশন করেন রঙ্গরস থিয়েটার।