নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দুটি পৃথক প্রশ্নের জবাবে দুই ধরনের তথ্য দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে মন্ত্রী দাবি করেছেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের মুলতবি বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
দ্রবমূল্য নিয়ে বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী লিখিত উত্তরে বলেন, বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত মনিটরিং (তদারকি) করছে। বাজারে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমদানি বাধাগুলো দূর করা, শুল্কহার হ্রাস, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, বন্দরে দ্রুত খালাস নিশ্চিত করা, এলসি (ঋণপত্র) অনুযায়ী পণ্য আমদানি তদারকি করাসহ সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চিনি ও ভোজ্যতেলের ওপর আরোপ করা শুল্কহার অধিকতর যৌক্তিক করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে। নিত্যপণ্য পরিবহনে রাস্তাঘাটে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি যাতে না হয় সে জন্য জননিরাপত্তা বিভাগকে জানানো হয়েছে।
সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব গরম মসলাসহ কিছু নিত্যপণ্যের মূল্যের ওপর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পোলট্রি বাজারে অনিয়ম বা মনোপলি (একচেটিয়া ব্যবসা) রয়েছে কি না, সে বিষয়ে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময়ে সময়ে ভোজ্যতেল ও চিনির স্থানীয় বাজারমূল্য সমন্বয় করা হয়। তিনি বলেন, সারাদেশে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল ও চাল সাশ্রয়ীমূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৭১৬ কোটি ডলার
সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত, চীন, পাকিস্তানসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩০৮ কোটি ডলার।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৭১৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘাটতি প্রায় ৪৭ কোটি ডলার, ভুটানের সঙ্গে ১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার ও আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রায় ১৫ লাখ ডলার ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ডলার।
এক অর্থবছরে ১১ লাখ ২৬ হাজার কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান
সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১১ লাখ ২৫ হাজার ৮৩৩ জন কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে।
সংসদ সদস্য মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী জানান, জনশক্তি রপ্তানির জন্য ১৮টি দেশ ও হংকংয়ের সঙ্গে চুক্তি/সমঝোতা স্মারক রয়েছে। দেশগুলো হলো কুয়েত, কাতার, ওমান, লিবিয়া, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জর্ডান, বাহরাইন, ইরাক, ইউএই, সৌদি আরব, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, কম্বোডিয়া, গ্রিস ও জাপান।
ভবিষ্যতে মাল্টা, আলবেনিয়া, রুমানিয়াসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি/সমঝোতা স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা আছে।
সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে ইমরান আহমদ জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন এক কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৬০ জন।
বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২৯ ভাদ্র ১৪৩০, ২৭ সফর ১৪৪৫
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দুটি পৃথক প্রশ্নের জবাবে দুই ধরনের তথ্য দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে মন্ত্রী দাবি করেছেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের মুলতবি বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
দ্রবমূল্য নিয়ে বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী লিখিত উত্তরে বলেন, বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত মনিটরিং (তদারকি) করছে। বাজারে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমদানি বাধাগুলো দূর করা, শুল্কহার হ্রাস, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, বন্দরে দ্রুত খালাস নিশ্চিত করা, এলসি (ঋণপত্র) অনুযায়ী পণ্য আমদানি তদারকি করাসহ সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চিনি ও ভোজ্যতেলের ওপর আরোপ করা শুল্কহার অধিকতর যৌক্তিক করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে। নিত্যপণ্য পরিবহনে রাস্তাঘাটে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি যাতে না হয় সে জন্য জননিরাপত্তা বিভাগকে জানানো হয়েছে।
সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব গরম মসলাসহ কিছু নিত্যপণ্যের মূল্যের ওপর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পোলট্রি বাজারে অনিয়ম বা মনোপলি (একচেটিয়া ব্যবসা) রয়েছে কি না, সে বিষয়ে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময়ে সময়ে ভোজ্যতেল ও চিনির স্থানীয় বাজারমূল্য সমন্বয় করা হয়। তিনি বলেন, সারাদেশে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল ও চাল সাশ্রয়ীমূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৭১৬ কোটি ডলার
সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত, চীন, পাকিস্তানসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩০৮ কোটি ডলার।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৭১৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘাটতি প্রায় ৪৭ কোটি ডলার, ভুটানের সঙ্গে ১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার ও আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রায় ১৫ লাখ ডলার ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ডলার।
এক অর্থবছরে ১১ লাখ ২৬ হাজার কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান
সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১১ লাখ ২৫ হাজার ৮৩৩ জন কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে।
সংসদ সদস্য মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী জানান, জনশক্তি রপ্তানির জন্য ১৮টি দেশ ও হংকংয়ের সঙ্গে চুক্তি/সমঝোতা স্মারক রয়েছে। দেশগুলো হলো কুয়েত, কাতার, ওমান, লিবিয়া, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জর্ডান, বাহরাইন, ইরাক, ইউএই, সৌদি আরব, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, কম্বোডিয়া, গ্রিস ও জাপান।
ভবিষ্যতে মাল্টা, আলবেনিয়া, রুমানিয়াসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি/সমঝোতা স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা আছে।
সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে ইমরান আহমদ জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন এক কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৬০ জন।