রাইসা মেহজাবীন
অরিগ্যানো। নাম শুনে এটা আবার কী ভাবলেও পিৎজা খাওয়ার সময় এটা কিন্তু আমরা সবাই খাই! ‘পিৎজার প্রাণ’ নামেও এর পরিচিতি ব্যাপক। এটি মেক্সিকান মিন্ট, ওয়াইল্ড মারজোরাম নামেও পরিচিত। পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরেশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের এ গাছটি প্রায় ৩ ফুট পর্যন্ত বাড়ে।
অরিগ্যানো খুব সহজেই বাড়ের চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা বাড়ির আঙিনায় চাষ করতে পারেন। অরিগ্যানো গাছের জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট উষ্ণতা ও আলো। সবচেয়ে ভালো হয় যদি গাছটি সূর্যতাপের সান্নিধ্যে বাড়তে পারে। অরিগ্যানোতে কখনো বেশি পানি দেয়া যাবে না। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিলেই যথেষ্ট।
অরিগ্যানোতে মানব দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি মূলত সালাদ আইটেমে ব্যবহার করা হয়। টমেটো, সস, রসুন, লেবু, পিৎজা, স্যান্ডউইচ এবং জলপাই তেলের সঙ্গেও এটি ব্যবহার করা হয়।
অরিগ্যানো এন্টি ইনফ্লামেটরি। ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন কে, ফাইবার এবং অন্যান্য জৈব যৌগগুলোর উচ্চ উপাদান সমৃদ্ধ। পুষ্টিসমৃদ্ধ অরিগ্যানো শরীরকে ডিটক্সিফাই জন্য একটি আদর্শ হার্ব। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অরিগ্যানো পাতা হতে প্রস্তুতকৃত চা নিয়মিত পান করলে ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে।
অরিগ্যানো ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। দেহ থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে অরেগানো। ২০১৩ সালে চখড়ঝ এক জার্নাল গবেষণা প্রকাশিত স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রতিরোধে অরিগ্যানো বেশ উপকারী। এ গাছের ফাইটোকেমিক্যাল বয়সের কারণে সংঘটিত দেহের ক্ষয় নিরাময় করে। এমনকি দেহে ইনসুলিন উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। আর সেই জন্য নিয়মিত পান করতে হবে অরিগ্যানো চা।
লিভার ও কিডনির ক্ষতি রোধ করে অরিগ্যানো। এর পাতায় তৈরি চা পাকস্থলীর প্রদাহ নিরাময় করে। যদি কিডনিতে পাথর হয় তবে অরিগ্যানো চা টানা ৬ মাস পান করলে পাথর মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায় বলে জানা যায়।
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অরিগ্যানো ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এই উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে। বমি কিংবা মাথা ঘুরলে অরিগ্যানো চা পান করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।
কাশি, ঠা-া, ম্যালেরিয়া জ্বর, হাঁপানি, অরিগ্যানো পাতা দারুণ কাজ করে। প্রতিদিন এক গ্লাসে যে কোন ফলের রসের মধ্যে তিনটি ড্রপস অরিগ্যানো তেল মিশিয়ে পান করুন, বিশেষ করে শীতকালে একবার করে প্রতিদিন। আপনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল অনুভব করতে পারেন। এছাড়া হালকা গরম পানিতে ২-৩ ফোটা অরিগ্যানো তেল ঢেলে গরম পানির বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে সর্দি-কাশি হতে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
অরিগ্যানো পাতার অ্যালকোহলিক নির্যাস মানবদেহের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনন্য। অরিগ্যানো এন্টিসেপটিক, এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে অরিগ্যানো তেল এক ফোটা এবং ১ চা চামচ জলপাই তেল একত্রে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখলে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ উঠে যাবে।
অরিগ্যানো পাতা হলো প্রোফাইল্যাক্টিভ যা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ/পোকামাকড় কামড় দিলে উপশম করতে সক্ষম। পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে অরিগ্যানো তেল এক ফোটা এবং ১ চা চামচ জলপাই তেল একত্রে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখলে কামড়ের ব্যথা ও জ্বালা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।
অরিগ্যানো পাতাগুলো ডায়রিয়া, রিউম্যাটিজম এবং হেলিমথিয়াসিসের জন্য তাজা খাওয়ানো হয়। খুব সহজেই ঘরে বা দোকান থেকে অরিগ্যানোর পাউডার কিনে এনে তা থেকে অরিগ্যানো চা তৈরি করতে পারেন। পানি ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে উষ্ণ পানির ১ কাপের মধ্যে ১ চা চামচ অরিগ্যানোর শুকনো গুঁড়ো ঢেলে তৈরি করে ফেলুন অরিগ্যানো চা। প্রস্তুতকৃত চা কিছুটা তিক্ত হতে পারে, সঙ্গে সামান্য পরিমাণ চিনি বা সুগার ফ্রি ট্যাবলেট যোগ করে তিক্ততা প্রতিহত করতে পারেন। সাধারণভাবে ওষুধটি নিরাপদ এবং কোন নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
[লেখক : শিক্ষার্থী, খাদ্য ও পুষ্টি]
বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২৯ ভাদ্র ১৪৩০, ২৭ সফর ১৪৪৫
রাইসা মেহজাবীন
অরিগ্যানো। নাম শুনে এটা আবার কী ভাবলেও পিৎজা খাওয়ার সময় এটা কিন্তু আমরা সবাই খাই! ‘পিৎজার প্রাণ’ নামেও এর পরিচিতি ব্যাপক। এটি মেক্সিকান মিন্ট, ওয়াইল্ড মারজোরাম নামেও পরিচিত। পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরেশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের এ গাছটি প্রায় ৩ ফুট পর্যন্ত বাড়ে।
অরিগ্যানো খুব সহজেই বাড়ের চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা বাড়ির আঙিনায় চাষ করতে পারেন। অরিগ্যানো গাছের জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট উষ্ণতা ও আলো। সবচেয়ে ভালো হয় যদি গাছটি সূর্যতাপের সান্নিধ্যে বাড়তে পারে। অরিগ্যানোতে কখনো বেশি পানি দেয়া যাবে না। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিলেই যথেষ্ট।
অরিগ্যানোতে মানব দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি মূলত সালাদ আইটেমে ব্যবহার করা হয়। টমেটো, সস, রসুন, লেবু, পিৎজা, স্যান্ডউইচ এবং জলপাই তেলের সঙ্গেও এটি ব্যবহার করা হয়।
অরিগ্যানো এন্টি ইনফ্লামেটরি। ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন কে, ফাইবার এবং অন্যান্য জৈব যৌগগুলোর উচ্চ উপাদান সমৃদ্ধ। পুষ্টিসমৃদ্ধ অরিগ্যানো শরীরকে ডিটক্সিফাই জন্য একটি আদর্শ হার্ব। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অরিগ্যানো পাতা হতে প্রস্তুতকৃত চা নিয়মিত পান করলে ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে।
অরিগ্যানো ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। দেহ থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে অরেগানো। ২০১৩ সালে চখড়ঝ এক জার্নাল গবেষণা প্রকাশিত স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রতিরোধে অরিগ্যানো বেশ উপকারী। এ গাছের ফাইটোকেমিক্যাল বয়সের কারণে সংঘটিত দেহের ক্ষয় নিরাময় করে। এমনকি দেহে ইনসুলিন উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। আর সেই জন্য নিয়মিত পান করতে হবে অরিগ্যানো চা।
লিভার ও কিডনির ক্ষতি রোধ করে অরিগ্যানো। এর পাতায় তৈরি চা পাকস্থলীর প্রদাহ নিরাময় করে। যদি কিডনিতে পাথর হয় তবে অরিগ্যানো চা টানা ৬ মাস পান করলে পাথর মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায় বলে জানা যায়।
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অরিগ্যানো ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এই উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে। বমি কিংবা মাথা ঘুরলে অরিগ্যানো চা পান করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।
কাশি, ঠা-া, ম্যালেরিয়া জ্বর, হাঁপানি, অরিগ্যানো পাতা দারুণ কাজ করে। প্রতিদিন এক গ্লাসে যে কোন ফলের রসের মধ্যে তিনটি ড্রপস অরিগ্যানো তেল মিশিয়ে পান করুন, বিশেষ করে শীতকালে একবার করে প্রতিদিন। আপনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল অনুভব করতে পারেন। এছাড়া হালকা গরম পানিতে ২-৩ ফোটা অরিগ্যানো তেল ঢেলে গরম পানির বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে সর্দি-কাশি হতে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
অরিগ্যানো পাতার অ্যালকোহলিক নির্যাস মানবদেহের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনন্য। অরিগ্যানো এন্টিসেপটিক, এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে অরিগ্যানো তেল এক ফোটা এবং ১ চা চামচ জলপাই তেল একত্রে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখলে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ উঠে যাবে।
অরিগ্যানো পাতা হলো প্রোফাইল্যাক্টিভ যা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ/পোকামাকড় কামড় দিলে উপশম করতে সক্ষম। পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে অরিগ্যানো তেল এক ফোটা এবং ১ চা চামচ জলপাই তেল একত্রে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখলে কামড়ের ব্যথা ও জ্বালা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।
অরিগ্যানো পাতাগুলো ডায়রিয়া, রিউম্যাটিজম এবং হেলিমথিয়াসিসের জন্য তাজা খাওয়ানো হয়। খুব সহজেই ঘরে বা দোকান থেকে অরিগ্যানোর পাউডার কিনে এনে তা থেকে অরিগ্যানো চা তৈরি করতে পারেন। পানি ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে উষ্ণ পানির ১ কাপের মধ্যে ১ চা চামচ অরিগ্যানোর শুকনো গুঁড়ো ঢেলে তৈরি করে ফেলুন অরিগ্যানো চা। প্রস্তুতকৃত চা কিছুটা তিক্ত হতে পারে, সঙ্গে সামান্য পরিমাণ চিনি বা সুগার ফ্রি ট্যাবলেট যোগ করে তিক্ততা প্রতিহত করতে পারেন। সাধারণভাবে ওষুধটি নিরাপদ এবং কোন নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
[লেখক : শিক্ষার্থী, খাদ্য ও পুষ্টি]