লিবিয়ায় বন্যায় ছয় বাংলাদেশির মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার দারনা শহরে বসবাসরত ৬ বাংলাদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রাজবাড়ি জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আরও ২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বুধবার লিবিয়াতে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক ফেইসবুক পোস্টে এ কথা জানানো হয়।

পোস্টে জানানো হয়, এ পরিপ্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের তথ্য জানতে এবং ঘূর্ণিঝড়ে নিখোঁজ প্রবাসীদের তথ্য জানানোর জন্য দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. রাসেল মিয়ার (মোবাইল নম্বর : +২১৮৯১৮৫৮০৯৮৯) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

এছাড়া পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিখোঁজ আছেন আরও অন্তত ১০ হাজার মানুষ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে বলেছে, গত মঙ্গলবার জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসের লিবিয়া প্রতিনিধিদলের প্রধান তামের রামাদান সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা লিবিয়ান নিউজ এজেন্সি জানায়, বন্যায় অন্তত পাঁচ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সিএনএন মৃত ও নিখোঁজের সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দূতাবাস। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় তোবরুক শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, বন্যায় মৃতদের মধ্যে অন্তত ১৪৫ জন প্রতিবেশী মিশরের নাগরিক। আফ্রিকার এই দেশটির পূর্বাঞ্চলে গত সোমবার আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টির পানির চাপে দারনা শহরের কাছে নদীর ওপর দেয়া দুটি বাঁধ ধসে পড়ে। মূলত সেই বাঁধের পানির কারণে সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওসমান আবদুল জলিল লিবিয়ার আলমাসার টেলিভিশনকে বলেন, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দারনা শহরে অন্তত ৬ হাজার মানুষ নিখোঁজ আছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির শিরোনাম করা হয়েছে, লিবিয়ায় বন্যা : পুরো লোকালয় টেনে নিয়ে সাগরে ফেলা হয়েছে।

পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের এক কর্মকর্তা হিশাম কিওয়াত বিবিসিকে বলেন, দেখে স্তম্ভিত হয়েছি, একি, এত সুনামির মতো দেখতে। তিনি আরও বলেন, একটি বিশাল লোকালয় ধ্বংস হয়ে গেছে। হতাহতের সংখ্যা অনেক। প্রতি ঘণ্টায় এই সংখ্যা বাড়ছে।

লিবিয়ায় সুনামির মতো বন্যায় সাগরে ভেসে যাওয়া মানুষকে উদ্ধার করতে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলোকে। বন্যায় দেশটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দারনা শহরের অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত ২৩০০ মানুষ মারা গেছে এই বন্যায়।

শহরের দুটি বাঁধ ও চারটি সেতু ধসে গেছে এবং এর ফলে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলে ভেসে গেছে শহরের বড় একটি অংশ। রেড ক্রিসেন্ট বলছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ আছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও আরও বাড়তে পারে।

কিছু উদ্ধার তৎপরতা সেখানে শুরু হয়েছে, যাতে এগিয়ে এসেছে মিশরও। তবে লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ তৎপরতা কিছু বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটি এখন দুটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বিভক্ত হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইরান, ইতালি, কাতার এবং তুরস্কসহ কিছু দেশ জানিয়েছে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে তারাও প্রস্তুত আছে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহরের হাসপাতালের একজন পরিচালক রয়টার্সকে জানান, তার হাসপাতালে ১ হাজার ৭০০ মরদেহ গণনা করা হয়েছে এবং আরও ৫০০ জনকে শহরের অন্য অংশে দাফন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩০ ভাদ্র ১৪৩০, ২৮ সফর ১৪৪৫

লিবিয়ায় বন্যায় ছয় বাংলাদেশির মৃত্যু

সংবাদ ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার দারনা শহরে বসবাসরত ৬ বাংলাদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রাজবাড়ি জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আরও ২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বুধবার লিবিয়াতে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক ফেইসবুক পোস্টে এ কথা জানানো হয়।

পোস্টে জানানো হয়, এ পরিপ্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের তথ্য জানতে এবং ঘূর্ণিঝড়ে নিখোঁজ প্রবাসীদের তথ্য জানানোর জন্য দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. রাসেল মিয়ার (মোবাইল নম্বর : +২১৮৯১৮৫৮০৯৮৯) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

এছাড়া পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিখোঁজ আছেন আরও অন্তত ১০ হাজার মানুষ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে বলেছে, গত মঙ্গলবার জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসের লিবিয়া প্রতিনিধিদলের প্রধান তামের রামাদান সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা লিবিয়ান নিউজ এজেন্সি জানায়, বন্যায় অন্তত পাঁচ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সিএনএন মৃত ও নিখোঁজের সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দূতাবাস। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় তোবরুক শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, বন্যায় মৃতদের মধ্যে অন্তত ১৪৫ জন প্রতিবেশী মিশরের নাগরিক। আফ্রিকার এই দেশটির পূর্বাঞ্চলে গত সোমবার আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টির পানির চাপে দারনা শহরের কাছে নদীর ওপর দেয়া দুটি বাঁধ ধসে পড়ে। মূলত সেই বাঁধের পানির কারণে সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওসমান আবদুল জলিল লিবিয়ার আলমাসার টেলিভিশনকে বলেন, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দারনা শহরে অন্তত ৬ হাজার মানুষ নিখোঁজ আছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির শিরোনাম করা হয়েছে, লিবিয়ায় বন্যা : পুরো লোকালয় টেনে নিয়ে সাগরে ফেলা হয়েছে।

পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের এক কর্মকর্তা হিশাম কিওয়াত বিবিসিকে বলেন, দেখে স্তম্ভিত হয়েছি, একি, এত সুনামির মতো দেখতে। তিনি আরও বলেন, একটি বিশাল লোকালয় ধ্বংস হয়ে গেছে। হতাহতের সংখ্যা অনেক। প্রতি ঘণ্টায় এই সংখ্যা বাড়ছে।

লিবিয়ায় সুনামির মতো বন্যায় সাগরে ভেসে যাওয়া মানুষকে উদ্ধার করতে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলোকে। বন্যায় দেশটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দারনা শহরের অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত ২৩০০ মানুষ মারা গেছে এই বন্যায়।

শহরের দুটি বাঁধ ও চারটি সেতু ধসে গেছে এবং এর ফলে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলে ভেসে গেছে শহরের বড় একটি অংশ। রেড ক্রিসেন্ট বলছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ আছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও আরও বাড়তে পারে।

কিছু উদ্ধার তৎপরতা সেখানে শুরু হয়েছে, যাতে এগিয়ে এসেছে মিশরও। তবে লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ তৎপরতা কিছু বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটি এখন দুটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বিভক্ত হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইরান, ইতালি, কাতার এবং তুরস্কসহ কিছু দেশ জানিয়েছে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে তারাও প্রস্তুত আছে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহরের হাসপাতালের একজন পরিচালক রয়টার্সকে জানান, তার হাসপাতালে ১ হাজার ৭০০ মরদেহ গণনা করা হয়েছে এবং আরও ৫০০ জনকে শহরের অন্য অংশে দাফন করা হয়েছে।