পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাসবিহীন শিশু কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ার ঘটনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১০ জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এ তথ্য জানান। এ ঘটনায় কুয়েত এয়ারওয়েজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে (কেইউ-২৮৪) যাত্রীরা উঠেছেন, চলছে উড্ডয়নের প্রস্তুতি। ১০ বছর বয়সী একটি শিশু এই ফ্লাইটে দাঁড়িয়ে থাকলে কেবিন ক্রুরা তাকে বসতে বলেন। পরে ওই শিশুটি ফ্লাইটের একটি সিটে বসে পড়ে। তবে সেই সিটের যাত্রী এলে কেবিন ক্রুরা তার সঙ্গে কেউ আছে কিনা জানতে চায়, তার বোর্ডিং কার্ড, পাসপোর্ট দেখতে চায়। তবে শিশুটি ছিল নীরব। পরে প্যাসেঞ্জার লিস্ট চেক করে দেখা যায়, নির্ধারিত যাত্রীর চেয়ে শিশুটি অতিরিক্ত।
পরে শিশুটিকে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে কেবিন ক্রুরা তাকে বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তাকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করে এভসেক। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনাকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। এখানে যে দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে পাসপোর্ট ও বোর্ডিংপাস ছাড়া কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশুটির পরিচয় পাওয়া গেছে। জুনায়েদ (১২) নামের শিশুটির বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ে। গত মঙ্গলবার শিশুটি একাই মুকসুদপুর থেকে রাজধানীর বসুন্ধরায় তার ফুফুর বাসায় আসে। বাসে প্রথমে সে গাজীপুর আসে। সেখান থেকে একটি ডাবল ডেকার বিআরটিসি বাসে করে বিমানবন্দর চলে আসে। উদ্দেশ্য বিমানবন্দর ঘুরে দেখা।
গতকাল বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলামের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, জুনায়েদ নামে ১২ বছরের ওই ছেলেটির বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এলাকায়। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ে। ওইদিন মুকসুদপুর থেকে সে একাই ঢাকা চলে আসে। প্রথমে গাজীপুর যায়। পরে সেখানে থেকে বিআরটিসি বাসে করে ঢাকা বিমানবন্দর দেখতে আসে। সেখানে এসে একা ঘুরতে থাকে। এক সময় কোন বাধা ছাড়াই বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে যায়।
তিনি আরও বলেন, সে মূলত রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় তার ফুফুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল। ঢাকা এসে ফুফুর বাসায় না গিয়ে সরাসরি বিমানবন্দর দেখতে চলে যায়। তিনি বলেন, যেভাবে বিমানবন্দরের ভেতরে চলে গেছে, তাকে কেউ আটকায়নি, কারও চোখে পড়েনি। তাকে না আটকানো বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীন কাজ। থানার নিয়ে আসার পর শিশুটির কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
শিশুটির পাশের সিটের যাত্রী বিষয়টি কেবিন ক্রুর নজরে আনলে তারা তাকে বাবা-মার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। তবে শিশুটি জবাব দিতে পারেনি। একপর্যায়ে কেবিন ক্রুরা হেড কাউন্ট (যাত্রী সংখ্যা গণনা করা) করলে একজন যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। প্লেনের দরজা খুলে শিশুটিকে বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে শিশুটি সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এভসেক। বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনার পর বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়েছে। শিশুটি বিমানবন্দরে বিভিন্ন যাত্রীর গা ঘেঁষে অবস্থান করছিল, যাতে মনে হচ্ছিলো সে তাদের একজন। এভাবে সে বিমানবন্দরের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে হজযাত্রীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে থেকে সে ফ্লাইটে উঠে পড়ে।
বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩০ ভাদ্র ১৪৩০, ২৮ সফর ১৪৪৫
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাসবিহীন শিশু কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ার ঘটনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১০ জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এ তথ্য জানান। এ ঘটনায় কুয়েত এয়ারওয়েজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে (কেইউ-২৮৪) যাত্রীরা উঠেছেন, চলছে উড্ডয়নের প্রস্তুতি। ১০ বছর বয়সী একটি শিশু এই ফ্লাইটে দাঁড়িয়ে থাকলে কেবিন ক্রুরা তাকে বসতে বলেন। পরে ওই শিশুটি ফ্লাইটের একটি সিটে বসে পড়ে। তবে সেই সিটের যাত্রী এলে কেবিন ক্রুরা তার সঙ্গে কেউ আছে কিনা জানতে চায়, তার বোর্ডিং কার্ড, পাসপোর্ট দেখতে চায়। তবে শিশুটি ছিল নীরব। পরে প্যাসেঞ্জার লিস্ট চেক করে দেখা যায়, নির্ধারিত যাত্রীর চেয়ে শিশুটি অতিরিক্ত।
পরে শিশুটিকে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে কেবিন ক্রুরা তাকে বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তাকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করে এভসেক। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনাকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। এখানে যে দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে পাসপোর্ট ও বোর্ডিংপাস ছাড়া কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশুটির পরিচয় পাওয়া গেছে। জুনায়েদ (১২) নামের শিশুটির বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ে। গত মঙ্গলবার শিশুটি একাই মুকসুদপুর থেকে রাজধানীর বসুন্ধরায় তার ফুফুর বাসায় আসে। বাসে প্রথমে সে গাজীপুর আসে। সেখান থেকে একটি ডাবল ডেকার বিআরটিসি বাসে করে বিমানবন্দর চলে আসে। উদ্দেশ্য বিমানবন্দর ঘুরে দেখা।
গতকাল বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলামের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, জুনায়েদ নামে ১২ বছরের ওই ছেলেটির বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এলাকায়। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ে। ওইদিন মুকসুদপুর থেকে সে একাই ঢাকা চলে আসে। প্রথমে গাজীপুর যায়। পরে সেখানে থেকে বিআরটিসি বাসে করে ঢাকা বিমানবন্দর দেখতে আসে। সেখানে এসে একা ঘুরতে থাকে। এক সময় কোন বাধা ছাড়াই বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে যায়।
তিনি আরও বলেন, সে মূলত রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় তার ফুফুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল। ঢাকা এসে ফুফুর বাসায় না গিয়ে সরাসরি বিমানবন্দর দেখতে চলে যায়। তিনি বলেন, যেভাবে বিমানবন্দরের ভেতরে চলে গেছে, তাকে কেউ আটকায়নি, কারও চোখে পড়েনি। তাকে না আটকানো বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীন কাজ। থানার নিয়ে আসার পর শিশুটির কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
শিশুটির পাশের সিটের যাত্রী বিষয়টি কেবিন ক্রুর নজরে আনলে তারা তাকে বাবা-মার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। তবে শিশুটি জবাব দিতে পারেনি। একপর্যায়ে কেবিন ক্রুরা হেড কাউন্ট (যাত্রী সংখ্যা গণনা করা) করলে একজন যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। প্লেনের দরজা খুলে শিশুটিকে বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে শিশুটি সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এভসেক। বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনার পর বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়েছে। শিশুটি বিমানবন্দরে বিভিন্ন যাত্রীর গা ঘেঁষে অবস্থান করছিল, যাতে মনে হচ্ছিলো সে তাদের একজন। এভাবে সে বিমানবন্দরের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে হজযাত্রীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে থেকে সে ফ্লাইটে উঠে পড়ে।