সংসদে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, চলমান আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত আছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপকরণ ও নীতি সহায়তার ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে।
গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোভিড অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ সব ক্ষেত্রে জোগানব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে
প্রচেষ্টা চলছে
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো দেশ নিজ নিজ দেশের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানায়। পরে আলোচনার মাধ্যমে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যেহেতু ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে, সেহেতু একই বিষয়ে আরও একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের প্রস্তাবটি সমীচীন হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় পৃথিবীতে সংঘটিত অন্য যেকোন গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় প্রক্রিয়ার মতোই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে বন্ধুরাষ্ট্রসহ, গণহত্যাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের স্বীকৃতি আদায় এবং বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সহজ হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তিন মেয়াদে ৮৫৪ কিলোমিটার সড়ক চার লেন
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ১২ হাজার ৪৩৪ কিমি মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ১ হাজার ১৩১টি সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ৪ হাজার ৬৩৪ কিমি মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ৬৪ হাজার ৮৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৭৫০টি সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলার
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প থেকে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি রয়েছে। এই শিল্পসমূহে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু
সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য) সক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট। ১১ হাজার ৬০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৩ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে এগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি চালু হবে বলে আশা করা যায়।
১৪ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৪ গুণ
নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৪ বছরে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেরে কারণে মাথাপিছু আয় ৬৮৬ মার্কিন ডলার থেকে চার গুণ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডকালীন বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ পরবর্তী বছরেই উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে যথাক্রমে ৬ দশমকি ৯৪ ও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।’
তিনি জানান, জিডিপির আকার অনুযায়ী ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ৬০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ১৪ বছরের ব্যবধানে ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্সের ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩৭ সালে ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
দেড় দশকে নতুন ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭ সালের জরিপে দেশে মোট কর্মসংস্থান ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। গত দেড় দশকে আমাদের সরকার নতুন ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখন মোট কর্মসংস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ। বেকারত্বের হার ২০১০ সালের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে ২০২২ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ২০১৬ সালে ৩৬ দশমিক শূন্য শতাংশ হতে ২০২২ সালে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পণ্য ও সেবা রপ্তানি আয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরের ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে প্রায় চার গুণের বেশি বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ১৪ বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, করোনা মহামারী ইত্যাদির পরও সরকার ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরেও গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকার এটির নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ হতে অর্ধেকেরও বেশি কমে ২০২২ শালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে তিন-চতুর্থাংশ কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩০ ভাদ্র ১৪৩০, ২৮ সফর ১৪৪৫
সংসদে প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, চলমান আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত আছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপকরণ ও নীতি সহায়তার ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে।
গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোভিড অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ সব ক্ষেত্রে জোগানব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে
প্রচেষ্টা চলছে
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো দেশ নিজ নিজ দেশের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানায়। পরে আলোচনার মাধ্যমে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যেহেতু ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে, সেহেতু একই বিষয়ে আরও একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের প্রস্তাবটি সমীচীন হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় পৃথিবীতে সংঘটিত অন্য যেকোন গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় প্রক্রিয়ার মতোই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে বন্ধুরাষ্ট্রসহ, গণহত্যাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের স্বীকৃতি আদায় এবং বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সহজ হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তিন মেয়াদে ৮৫৪ কিলোমিটার সড়ক চার লেন
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ১২ হাজার ৪৩৪ কিমি মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ১ হাজার ১৩১টি সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ৪ হাজার ৬৩৪ কিমি মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ৬৪ হাজার ৮৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৭৫০টি সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলার
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প থেকে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি রয়েছে। এই শিল্পসমূহে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু
সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য) সক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট। ১১ হাজার ৬০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৩ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে এগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি চালু হবে বলে আশা করা যায়।
১৪ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৪ গুণ
নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৪ বছরে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেরে কারণে মাথাপিছু আয় ৬৮৬ মার্কিন ডলার থেকে চার গুণ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডকালীন বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ পরবর্তী বছরেই উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে যথাক্রমে ৬ দশমকি ৯৪ ও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।’
তিনি জানান, জিডিপির আকার অনুযায়ী ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ৬০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ১৪ বছরের ব্যবধানে ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্সের ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩৭ সালে ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
দেড় দশকে নতুন ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭ সালের জরিপে দেশে মোট কর্মসংস্থান ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। গত দেড় দশকে আমাদের সরকার নতুন ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখন মোট কর্মসংস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ। বেকারত্বের হার ২০১০ সালের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে ২০২২ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ২০১৬ সালে ৩৬ দশমিক শূন্য শতাংশ হতে ২০২২ সালে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পণ্য ও সেবা রপ্তানি আয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরের ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে প্রায় চার গুণের বেশি বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ১৪ বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, করোনা মহামারী ইত্যাদির পরও সরকার ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরেও গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকার এটির নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ হতে অর্ধেকেরও বেশি কমে ২০২২ শালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে তিন-চতুর্থাংশ কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।’