নিঃস্ব হয়ে যাওয়া কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আহুতি
একটি কাপড়ের দোকান থেকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করা হচ্ছে পোড়া কাপড়ের স্তূপ। বেশ কয়েকজন স্তূপ ঘেঁটে দেখছে কোন কাপড় ভালো রয়েছে কি না। দোকানের সামনে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া একটি মোটরসাইকেলের সামনে দাঁড়িয়ে এগুলো তদারকি করছেন এক ব্যক্তি। আশপাশের পুড়ে যাওয়া দোকানের কয়েকজন ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়ালে, বলতে থাকেন, তিনটি দোকানের এক পিস কাপড়ও রক্ষা করতে পারলাম না। শখের মোটরসাইকেলটা দোকানের সামনে রেখে গেছিলাম, এটাও পুড়ে শেষ। কিছুই রইলো না আমার। বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা টিভিতে দেখছিলাম। একইরকম ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটবে, এটি স্বপ্নেও ভাবিনি। এত টাকার লোন কেমনে পরিশোধ করবো এখন? নতুন করে দোকানই বা শুরু করবো কেমনে? এক কর্মচারীর কাঁধে হাত দিয়ে কান্না করে দেন মামুন নামে ওই ব্যবসায়ী। এ সময় অশ্রুসিক্ত চোখে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দোকানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখা যায় দোকানের কর্মচারীদের।
শুধু মামুন ও তার দোকানগুলোর কর্মচারীই নয়, রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অবস্থা প্রায় একইরকম। তিলতিল করে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেকে। চোখের সামনে আগুনের লেলিহান শিখায় নিজের স্বপ্ন পুড়তে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কেউ কেউ। কর্মচারী ও স্বজনদের জড়িয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে। মার্কেটটির ব্যবসায়ীরা বলছেন, জামা-কাপড় থেকে শুরু করে, ক্রোকারিজ, জুয়েলারি, প্লাস্টিক পণ্য, জুতা, চাল-ডাল এমনকি মুরগিরও দোকান ছিল মার্কেটটিতে। গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে মার্কেটের উত্তর দিক থেকে লাগা আগুন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ৪ শতাধিক দোকান পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ অগ্নিকান্ডে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে তাদের।
গতকাল সরজমিন মোহাম্মাদপুরের কৃষি মার্কেটে গেলে কথা হয় ব্যবসায়ী মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তানিমনি ফ্যাশন নামে আমার ৩টি কাপড়ের দোকান। এই দোকানগুলোতে প্রায় দেড় কোটি টাকার কাপড় ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বুধবার রাতে মোটরসাইকেল রেখে গেছিলাম, দোকানের সামনে। সেটিও শেষ। তিনি বলেন, ২২ লাখ টাকা ধারদেনা আছে, পাইকারি দোকানে লাখ লাখ টাকা বাকি, একমাত্র অবলম্বন দোকানতো শেষ। এখন ঘুরে দাঁড়াবো কীভাবে? এই দোকানগুলোতে ৯ জন কর্মচারী কাজ করে। ওদের বেতনই বা দিবো কীভাবে? দোকানতো পুড়ছেই, সেই সঙ্গে পুড়ছে আমাদের কপালও।
তার বিপরীত পাশের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মাথা ও হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা এক ব্যক্তিকে। তিনি জানান, তার নাম সাইফুল ইসলাম খন্দকার। দোকানের নাম শিফা থ্রি-পিস সেন্টার। ভোর রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে দোকানে ছুটে যান। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তার দোকানেও। জীবনের ঝুঁকি দিয়ে একবস্তা কাপড় রক্ষা করেন। পরে আরেক বস্তা কাপড় আনতে গেলে হাত ও মাথায় দগ্ধ হন। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারও দোকানে ছুটে এসেছেন। খ ব্লকের বিসমিল্লাহ চাল ভান্ডারের মালিক তৌহিদুল ইসলাম সৈকত বলেন, একই নামে তার ৪টি দোকান ও একটি গুদাম রয়েছে। এগুলোতে ১২ লাখ টাকার ৩০০ বস্তারও বেশি চাল ছিল। এক কেজি চালও রক্ষা করতে পারিনি। সব পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। পাশের আরেকটি চালের দোকানের কর্মচারী আপন বলেন, এখানে প্রায় ৩০টি চালের দোকান রয়েছে। সবগুলোই পুড়ে গেছে।
পুড়ে যাওয়ায় স্তূপ করে রাখা মাইক্রোওভেন, রাইস কুকার, কিচেন উড, ব্লেন্ডার, গ্যাস ও ইলেকট্রিকের চুলা, ফ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গৃহসজ্জার শোপিসের পাশে কাঠের টুলে বসেছিলেন জুনাইদ শেখ। তিনি বলেন, বিক্রমপুর ক্রোকারিজ নামের দোকানটির মালিক জিয়াউল হকের ফোন পেয়ে দৌড়ে দুই মিনিটের মধ্যে মার্কেটে চলে আসি। কিন্তু কিছুই রক্ষা করা যায়নি। অন্য দোকানিদের মতো তালা ভেঙে মালপত্র বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে কিছুই সরাতে পারিনি। ফজলুল হক নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটে কাপড়ের দুটি দোকান পুড়ে গেছে। প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। আর কয়েক লাখ নগদ টাকা। সব পুড়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত (বুধবার) আমি চার লাখ টাকার মালামাল উঠেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত চার টাকার মালও বিক্রি করতে পারি নাই। তার আগেই সব শেষ। কোন কিছুই বের করতে পারিনি। এভাবে দোকান পুড়ে গেল, কবে ঠিক হবে, কীভাবে চলবে আবার, কবে এখানে বসতে পারবো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
এদিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মার্কেটটির ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পুড়ে যাওয়া দোকানের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে ঘটনাস্থলের দক্ষিণ পাশের চৌরাস্তায় হাজির হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একজন হ্যান্ড মাইকে এমন ঘোষণা দিচ্ছিলেন। সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা পুড়ে যাওয়া নিজের দোকানটি খুঁজতে এবং প্রয়োজনীয় মালামাল পেতে মরিয়া ছিল। কিন্তু কাউকেই মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অবশেষে দুপুরে ১টার পর মার্কেটটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়লে তাদের সরিয়ে দেয় সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় মাইকে বলা হয়, আপনারা নিজ নিজ দোকানের সামনে চলে যান। যাতে কেউ কোনো মালামাল সরিয়ে না ফেলতে পারে। পাশাপাশি দোকানটি যে আপনার এর প্রমাণস্বরূপ জাতীয় পরিচয় পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, দোকান মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র এবং মোবাইল নম্বর সঙ্গে নিয়ে আসবেন। ঘোষণায় আরও বলা হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আজকের মধ্যেই মার্কেটের দক্ষিণ পাশে থাকা সোনালী ব্যাংকের নিচে ব্যবসায়ীদের আসতে হবে। এমন ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে শুরু করেন। অনেকের কাগজপত্র পড়লেও দোকান মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র রয়েছে। কিন্তু যাদের এসবের কোনটাই নেই তারা বেশ বিপাকে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কেটে যারা প্রকৃত দোকান ব্যবসায়ী তারাই যেন ক্ষতিপূরণ পান। সেই সাথে তাদেরকেই যেন দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। অবশ্য ব্যবসায়ীদের ঘোষণার আগে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে লোকজন এসেছিল। তারা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছেন। কতজন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত সেই তালিকাও তারা প্রস্ততির কাজ করছেন। এদিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দোকানের সংখ্যা ২৪৩টি। কিন্তু দোকান ব্যবসায়ীদের দাবি দোকান রয়েছে ৩১৭টি। এর মধ্যে পুড়ে গছে ২১৭টি। মার্কেটটিতে স্থায়ী দোকান ছাড়াও ভাসমান মিলে দোকানের সংখ্যা ৫৫০ এর অধিক ছিল বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।
শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১ আশ্বিন ১৪৩০, ২৯ সফর ১৪৪৫
নিঃস্ব হয়ে যাওয়া কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আহুতি
মাসুদ রানা
একটি কাপড়ের দোকান থেকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করা হচ্ছে পোড়া কাপড়ের স্তূপ। বেশ কয়েকজন স্তূপ ঘেঁটে দেখছে কোন কাপড় ভালো রয়েছে কি না। দোকানের সামনে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া একটি মোটরসাইকেলের সামনে দাঁড়িয়ে এগুলো তদারকি করছেন এক ব্যক্তি। আশপাশের পুড়ে যাওয়া দোকানের কয়েকজন ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়ালে, বলতে থাকেন, তিনটি দোকানের এক পিস কাপড়ও রক্ষা করতে পারলাম না। শখের মোটরসাইকেলটা দোকানের সামনে রেখে গেছিলাম, এটাও পুড়ে শেষ। কিছুই রইলো না আমার। বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা টিভিতে দেখছিলাম। একইরকম ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটবে, এটি স্বপ্নেও ভাবিনি। এত টাকার লোন কেমনে পরিশোধ করবো এখন? নতুন করে দোকানই বা শুরু করবো কেমনে? এক কর্মচারীর কাঁধে হাত দিয়ে কান্না করে দেন মামুন নামে ওই ব্যবসায়ী। এ সময় অশ্রুসিক্ত চোখে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দোকানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখা যায় দোকানের কর্মচারীদের।
শুধু মামুন ও তার দোকানগুলোর কর্মচারীই নয়, রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অবস্থা প্রায় একইরকম। তিলতিল করে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেকে। চোখের সামনে আগুনের লেলিহান শিখায় নিজের স্বপ্ন পুড়তে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কেউ কেউ। কর্মচারী ও স্বজনদের জড়িয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে। মার্কেটটির ব্যবসায়ীরা বলছেন, জামা-কাপড় থেকে শুরু করে, ক্রোকারিজ, জুয়েলারি, প্লাস্টিক পণ্য, জুতা, চাল-ডাল এমনকি মুরগিরও দোকান ছিল মার্কেটটিতে। গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে মার্কেটের উত্তর দিক থেকে লাগা আগুন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ৪ শতাধিক দোকান পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ অগ্নিকান্ডে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে তাদের।
গতকাল সরজমিন মোহাম্মাদপুরের কৃষি মার্কেটে গেলে কথা হয় ব্যবসায়ী মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তানিমনি ফ্যাশন নামে আমার ৩টি কাপড়ের দোকান। এই দোকানগুলোতে প্রায় দেড় কোটি টাকার কাপড় ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বুধবার রাতে মোটরসাইকেল রেখে গেছিলাম, দোকানের সামনে। সেটিও শেষ। তিনি বলেন, ২২ লাখ টাকা ধারদেনা আছে, পাইকারি দোকানে লাখ লাখ টাকা বাকি, একমাত্র অবলম্বন দোকানতো শেষ। এখন ঘুরে দাঁড়াবো কীভাবে? এই দোকানগুলোতে ৯ জন কর্মচারী কাজ করে। ওদের বেতনই বা দিবো কীভাবে? দোকানতো পুড়ছেই, সেই সঙ্গে পুড়ছে আমাদের কপালও।
তার বিপরীত পাশের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মাথা ও হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা এক ব্যক্তিকে। তিনি জানান, তার নাম সাইফুল ইসলাম খন্দকার। দোকানের নাম শিফা থ্রি-পিস সেন্টার। ভোর রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে দোকানে ছুটে যান। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তার দোকানেও। জীবনের ঝুঁকি দিয়ে একবস্তা কাপড় রক্ষা করেন। পরে আরেক বস্তা কাপড় আনতে গেলে হাত ও মাথায় দগ্ধ হন। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারও দোকানে ছুটে এসেছেন। খ ব্লকের বিসমিল্লাহ চাল ভান্ডারের মালিক তৌহিদুল ইসলাম সৈকত বলেন, একই নামে তার ৪টি দোকান ও একটি গুদাম রয়েছে। এগুলোতে ১২ লাখ টাকার ৩০০ বস্তারও বেশি চাল ছিল। এক কেজি চালও রক্ষা করতে পারিনি। সব পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। পাশের আরেকটি চালের দোকানের কর্মচারী আপন বলেন, এখানে প্রায় ৩০টি চালের দোকান রয়েছে। সবগুলোই পুড়ে গেছে।
পুড়ে যাওয়ায় স্তূপ করে রাখা মাইক্রোওভেন, রাইস কুকার, কিচেন উড, ব্লেন্ডার, গ্যাস ও ইলেকট্রিকের চুলা, ফ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গৃহসজ্জার শোপিসের পাশে কাঠের টুলে বসেছিলেন জুনাইদ শেখ। তিনি বলেন, বিক্রমপুর ক্রোকারিজ নামের দোকানটির মালিক জিয়াউল হকের ফোন পেয়ে দৌড়ে দুই মিনিটের মধ্যে মার্কেটে চলে আসি। কিন্তু কিছুই রক্ষা করা যায়নি। অন্য দোকানিদের মতো তালা ভেঙে মালপত্র বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে কিছুই সরাতে পারিনি। ফজলুল হক নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটে কাপড়ের দুটি দোকান পুড়ে গেছে। প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। আর কয়েক লাখ নগদ টাকা। সব পুড়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত (বুধবার) আমি চার লাখ টাকার মালামাল উঠেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত চার টাকার মালও বিক্রি করতে পারি নাই। তার আগেই সব শেষ। কোন কিছুই বের করতে পারিনি। এভাবে দোকান পুড়ে গেল, কবে ঠিক হবে, কীভাবে চলবে আবার, কবে এখানে বসতে পারবো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
এদিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মার্কেটটির ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পুড়ে যাওয়া দোকানের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে ঘটনাস্থলের দক্ষিণ পাশের চৌরাস্তায় হাজির হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একজন হ্যান্ড মাইকে এমন ঘোষণা দিচ্ছিলেন। সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা পুড়ে যাওয়া নিজের দোকানটি খুঁজতে এবং প্রয়োজনীয় মালামাল পেতে মরিয়া ছিল। কিন্তু কাউকেই মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অবশেষে দুপুরে ১টার পর মার্কেটটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়লে তাদের সরিয়ে দেয় সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় মাইকে বলা হয়, আপনারা নিজ নিজ দোকানের সামনে চলে যান। যাতে কেউ কোনো মালামাল সরিয়ে না ফেলতে পারে। পাশাপাশি দোকানটি যে আপনার এর প্রমাণস্বরূপ জাতীয় পরিচয় পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, দোকান মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র এবং মোবাইল নম্বর সঙ্গে নিয়ে আসবেন। ঘোষণায় আরও বলা হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আজকের মধ্যেই মার্কেটের দক্ষিণ পাশে থাকা সোনালী ব্যাংকের নিচে ব্যবসায়ীদের আসতে হবে। এমন ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে শুরু করেন। অনেকের কাগজপত্র পড়লেও দোকান মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র রয়েছে। কিন্তু যাদের এসবের কোনটাই নেই তারা বেশ বিপাকে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কেটে যারা প্রকৃত দোকান ব্যবসায়ী তারাই যেন ক্ষতিপূরণ পান। সেই সাথে তাদেরকেই যেন দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। অবশ্য ব্যবসায়ীদের ঘোষণার আগে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে লোকজন এসেছিল। তারা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছেন। কতজন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত সেই তালিকাও তারা প্রস্ততির কাজ করছেন। এদিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দোকানের সংখ্যা ২৪৩টি। কিন্তু দোকান ব্যবসায়ীদের দাবি দোকান রয়েছে ৩১৭টি। এর মধ্যে পুড়ে গছে ২১৭টি। মার্কেটটিতে স্থায়ী দোকান ছাড়াও ভাসমান মিলে দোকানের সংখ্যা ৫৫০ এর অধিক ছিল বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।