শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে অভিযান নিয়ে ‘তথ্য বিকৃতি’

অধিকারের আদিলুর-এলানের ২ বছরের কারাদন্ড

একদশক আগের মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে অভিযান নিয়ে ‘তথ্য বিকৃতির’ অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের ২ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।

গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এই রায় ঘোষণা করেন। কারাদন্ডের পাশাপাশি তাদের দশ হাজার টাকা জরিমানাও করে আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। রায় ঘোষণাকালে আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

এ রায়ে ‘সন্তুষ্ট’ নয় রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের ‘প্রত্যাশা’ ছিল রায়ে সাজা আরও বেশি হবে। তারা রায় পর্যালোচনা করে সাজা ‘বাড়ানোর’ আবেদন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে এ রায়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে আসামিপক্ষ। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন।

রায় ঘোষণার পর সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা রায়ে সাজা বেশি প্রত্যাশা করেছিলাম। রায় পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেবো।’

আর আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। সেখানে তারা খালাস পাবেন।’

২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে থেকে তাদের সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ‘৬১ জন’ নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেয় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

পরে ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৪ আগস্ট রায়ের দিন ৭ সেপ্টেম্বর ধার্য করে আদালত। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ঘোষণার দিন পিছিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন বিচারক।

এটা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের প্রথম মামলা। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ‘ক্ষোভের’ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা ‘বিঘ্নের’ অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে ‘চরমভাবে ক্ষুণ্ন’ করে।

একইসঙ্গে তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘বিরূপ’ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ‘উত্তেজনা’ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি’ ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে ‘হেয়’ করার চেষ্টা চালায়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।

রায় পর্যাবেক্ষণে আদালতে বিদেশি কূটনীতিকরা

হেফাজত সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা। এর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তারা এ রায় ‘পর্যবেক্ষণ’ করতে এসেছেন বলেও জানিয়েছেন।

আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি সাচা ব্লুমেন। কেন আদালত প্রাঙ্গণে এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রায় পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি।’

রায়ের বিষয়ে তাদের কোন উদ্বেগ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আমরা শুধু পর্যবেক্ষক হিসেবে আদালতে এসেছি।’

শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১ আশ্বিন ১৪৩০, ২৯ সফর ১৪৪৫

শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে অভিযান নিয়ে ‘তথ্য বিকৃতি’

অধিকারের আদিলুর-এলানের ২ বছরের কারাদন্ড

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

একদশক আগের মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে অভিযান নিয়ে ‘তথ্য বিকৃতির’ অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের ২ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।

গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এই রায় ঘোষণা করেন। কারাদন্ডের পাশাপাশি তাদের দশ হাজার টাকা জরিমানাও করে আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। রায় ঘোষণাকালে আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

এ রায়ে ‘সন্তুষ্ট’ নয় রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের ‘প্রত্যাশা’ ছিল রায়ে সাজা আরও বেশি হবে। তারা রায় পর্যালোচনা করে সাজা ‘বাড়ানোর’ আবেদন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে এ রায়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে আসামিপক্ষ। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন।

রায় ঘোষণার পর সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা রায়ে সাজা বেশি প্রত্যাশা করেছিলাম। রায় পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেবো।’

আর আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। সেখানে তারা খালাস পাবেন।’

২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে থেকে তাদের সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ‘৬১ জন’ নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেয় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

পরে ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৪ আগস্ট রায়ের দিন ৭ সেপ্টেম্বর ধার্য করে আদালত। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ঘোষণার দিন পিছিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন বিচারক।

এটা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের প্রথম মামলা। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ‘ক্ষোভের’ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা ‘বিঘ্নের’ অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে ‘চরমভাবে ক্ষুণ্ন’ করে।

একইসঙ্গে তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘বিরূপ’ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ‘উত্তেজনা’ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি’ ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে ‘হেয়’ করার চেষ্টা চালায়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।

রায় পর্যাবেক্ষণে আদালতে বিদেশি কূটনীতিকরা

হেফাজত সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা। এর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তারা এ রায় ‘পর্যবেক্ষণ’ করতে এসেছেন বলেও জানিয়েছেন।

আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি সাচা ব্লুমেন। কেন আদালত প্রাঙ্গণে এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রায় পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি।’

রায়ের বিষয়ে তাদের কোন উদ্বেগ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আমরা শুধু পর্যবেক্ষক হিসেবে আদালতে এসেছি।’