ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা বাতিলের সুযোগ নেই

ক্ষতিপূরণের প্রশ্নই আসে না : সংসদে আইনমন্ত্রী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করা হলেও ওই আইনে ইতোপূর্বে যত মামলা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হবে না বলে সংসদে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিুসল হক। ওই আইনের ‘অপপ্রয়োগের’ কারণে যারা বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কি না? গতকাল সংসদ অধিবেশনে একজন আইন প্রণেতার এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই বছর ৮ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়।

গত জুনে সংসদ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কার্যকর হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট ৭ হাজার ১টি মামলা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে দেশের মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের আপত্তি ও সমালোচনা ছিল। তাদের অনেকে এই আইনটিকে ‘কালো আইন’ বলেও অভিহিত করেছেন। এই আইনটি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও প্রশ্ন তুলেছিল। অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে গত বুধবার জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস হয়।

গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর (টেবিলে উপস্থাপিত) পর্বে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান তার প্রশ্নে জানতে চান, ইতোমধ্যে যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের কারণে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, এখনও অনেকে কারাগারে আছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কি না। একই সঙ্গে বিষয়গুলো কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে, তা-ও আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান তিনি।

জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা বাতিলে সুযোগ নেই এবং এ-সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের অবস্থান হলো, যেসব অপরাধ পুরনো আইনে করা হয়েছে, সেই পুরনো আইনে যে শাস্তি, সেই শাস্তি অপরাধীকে আদালত প্রদান করবে। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বিচার ও দন্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইন বলে যে দন্ড দেয়া যাইতে পারিত, তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দন্ড দেয়া যাইবে না।’

আনিসুল হক বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনে রহিতকরণ ও হেফাজত সংক্রান্ত বিধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন দায়েরকৃত অভিযোগ ও তদ্?সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যক্রম বা সূচিত কোন কার্যধারা বা দায়েরকৃত কোন মামলা বা আপিল যেকোন পর্যায়ে অনিষ্পন্ন থাকলে উক্ত কার্যধারা বা আপিল এমনভাবে চলমান থাকবে, যেন তা সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীন সূচিত বা দায়েরকৃত। ফলে ডিজিটাল নিরপত্তা আইনের অধীনে দায়ের করা মামলা বাতিল করার সুযোগ নেই এবং এ-সংক্রান্তে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নই আসে না।’

এদিকে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রকাশের পর থেকেই মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলে আসছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনেও কার্যত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল বিষয়বস্তু বহাল রাখা হচ্ছে। ফলে মানুষকে হয়রানি করার সুযোগ থেকেই যাবে।

গত বুধবার সংসদ অধিবেশনে সাইবার নিরাপত্তা বিলটি পাসের আগে, বিলটির প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করেন। বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ৪২ ধারাসহ বেশকিছু ধারার বিষয়ে আপত্তি করে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানান।

বিরোধী দলীয় আইন প্রণেতারা বলেন, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বীকৃতি সংবিধানেই দেয়া হয়েছে। অথচ এই বিলের বিভিন্ন ধারায় সংবিধান স্বীকৃত এসব অধিকার খর্ব করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে।

বিরোধী দলের আপত্তি ও সমালোচনার মুখেই গত বুধবার সংসদে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস হয়।

শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১ আশ্বিন ১৪৩০, ২৯ সফর ১৪৪৫

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা বাতিলের সুযোগ নেই

ক্ষতিপূরণের প্রশ্নই আসে না : সংসদে আইনমন্ত্রী

image

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করা হলেও ওই আইনে ইতোপূর্বে যত মামলা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হবে না বলে সংসদে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিুসল হক। ওই আইনের ‘অপপ্রয়োগের’ কারণে যারা বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কি না? গতকাল সংসদ অধিবেশনে একজন আইন প্রণেতার এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই বছর ৮ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়।

গত জুনে সংসদ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কার্যকর হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট ৭ হাজার ১টি মামলা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে দেশের মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের আপত্তি ও সমালোচনা ছিল। তাদের অনেকে এই আইনটিকে ‘কালো আইন’ বলেও অভিহিত করেছেন। এই আইনটি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও প্রশ্ন তুলেছিল। অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে গত বুধবার জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস হয়।

গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর (টেবিলে উপস্থাপিত) পর্বে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান তার প্রশ্নে জানতে চান, ইতোমধ্যে যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের কারণে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, এখনও অনেকে কারাগারে আছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কি না। একই সঙ্গে বিষয়গুলো কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে, তা-ও আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান তিনি।

জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা বাতিলে সুযোগ নেই এবং এ-সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের অবস্থান হলো, যেসব অপরাধ পুরনো আইনে করা হয়েছে, সেই পুরনো আইনে যে শাস্তি, সেই শাস্তি অপরাধীকে আদালত প্রদান করবে। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বিচার ও দন্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইন বলে যে দন্ড দেয়া যাইতে পারিত, তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দন্ড দেয়া যাইবে না।’

আনিসুল হক বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনে রহিতকরণ ও হেফাজত সংক্রান্ত বিধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন দায়েরকৃত অভিযোগ ও তদ্?সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যক্রম বা সূচিত কোন কার্যধারা বা দায়েরকৃত কোন মামলা বা আপিল যেকোন পর্যায়ে অনিষ্পন্ন থাকলে উক্ত কার্যধারা বা আপিল এমনভাবে চলমান থাকবে, যেন তা সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীন সূচিত বা দায়েরকৃত। ফলে ডিজিটাল নিরপত্তা আইনের অধীনে দায়ের করা মামলা বাতিল করার সুযোগ নেই এবং এ-সংক্রান্তে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নই আসে না।’

এদিকে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রকাশের পর থেকেই মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলে আসছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনেও কার্যত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল বিষয়বস্তু বহাল রাখা হচ্ছে। ফলে মানুষকে হয়রানি করার সুযোগ থেকেই যাবে।

গত বুধবার সংসদ অধিবেশনে সাইবার নিরাপত্তা বিলটি পাসের আগে, বিলটির প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করেন। বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ৪২ ধারাসহ বেশকিছু ধারার বিষয়ে আপত্তি করে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানান।

বিরোধী দলীয় আইন প্রণেতারা বলেন, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বীকৃতি সংবিধানেই দেয়া হয়েছে। অথচ এই বিলের বিভিন্ন ধারায় সংবিধান স্বীকৃত এসব অধিকার খর্ব করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে।

বিরোধী দলের আপত্তি ও সমালোচনার মুখেই গত বুধবার সংসদে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস হয়।