রেলের আইন অনুযায়ী, লাইন পারাপার দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাইনের উপর দিয়ে দিয়ে দিব্যি চলছে পারাপার। এত করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলায় ট্রেনের ধাক্কা বা ট্রেনে কাটাপড়ে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের গেল নয় মাসে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে নয়জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় নিহতদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ের জিআরপি থানায় মামলা হয়েছে। এরমধ্যে পাবনাতে ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন, রাজশাহী ৪ জন ও সিরাজগঞ্জে ১৫ জন। এছাড়া বগুড়া, সান্তাহার ও জয়পুরহাট মিলে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু মৃত্যু অসাবধানতাবশত হয়েছে। দ্রুত রেল লাইন পারাপার ছাড়াও আত্মহত্যার মতো ঘটনা রয়েছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে ও দুর্ঘটনা রোধে সচেতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মনিকা তাবাসুম চৈতির (১৩) মৃত্যু হয়। চৈতি নগরীর পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখার শিক্ষার্থী। ঘটনার দিনে সে পরিবারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। অসাবধানতাবশত তিনি রেল লাইনে উঠে গেলে ট্রেনের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। তার দু’দিন পরে ১৩ আগস্ট রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে দ্বীপ বাবুর (২৫) মৃত্যু হয়।
১১ জুন নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- উপজেলার জামানগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত তছলিমের ছেলে মফিজুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০)। গত ১৫ আগস্ট নাটোরের লালপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের (১৪) মৃত্যু হয়। গত ৫ জুলাই নাটোরে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়। গত ২৩ জুলাই নাটোরে ট্রেনে কাটাপড়ে সম্পা খাতুনের (৩০) মৃত্যু হয়।
৬ জুলাই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে কাশিনাথপুরের কাবারীকোলা গ্রামের মাসুদ মুন্সির ছেলে জামিরুল (৩২) এবং একই এলাকার জালাল মুন্সির ছেলে বাবু মুন্সি (২৪)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। গত ১৩ মার্চ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দৌড়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে শাহজাহান আলী বাবু (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় মিজান খাঁ (২৭) নামে এক ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, চলতি বছরের গত ১ মে জয়পুরহাটে ট্রেনের ধাক্কায় আবুল কাশেমের (৬৫) মৃত্যু হয়। ওইদিন পাঁচবিবি রেলস্টেশন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। গত ২১ জুন জয়পুরহাট শহরের ডাকবাংলা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক যুবকের মৃত্যু হয়। গত ৮ আগস্ট জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকার ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ২৩ জুলাই আক্কেলপুরের জামালগঞ্জ রেলস্টেশনে পঞ্চগড় অভিমুখী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
এদিকে, গত ১৯ জুন নওগাঁর আত্রাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শাহিনুর ইসলামের (৩২) মৃত্যু হয়। ভারত থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় আমেনা বেগমের (৬৫) মৃত্যু হয়। গত ১৯ মে নাচোলে ট্রেনের ধাক্কায় রুহুল আমিনের (৩৫) মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনের কাটা পড়ে বা ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে। পরে তদন্ত উঠে আসে কারো মৃত্যু রেললাইনে চলাচলের সময় অসাবধানতাবশত হয়েছে। কেউ বা ট্রেন আসার সময় দ্রুত রেল লাইন পারাপারের সময় হয়েছে। কেউ কেউ অভিমানে বা বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
বগুড়া রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার সোনাতলা থেকে সান্তাহার, জয়পুরহাট ও নাটোর নিয়ে মোট ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এসআই (নি:) হারুনুজ্জামান রোমেল বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীতে ট্রেনে কাটাপড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্য মৃত্যুর বিষয়ে মামলা হয়েছে। পাবনাতে ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন ও রাজশাহীতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ট্রেনে কাটাপড়ে নিহতের সংখ্যা কম। সবাই সচেতন হলে আরও কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহী : এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছেন পথচারীরা -সংবাদ
আরও খবরশনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২ আশ্বিন ১৪৩০, ৩০ সফর ১৪৪৫
জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী
রাজশাহী : এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছেন পথচারীরা -সংবাদ
রেলের আইন অনুযায়ী, লাইন পারাপার দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাইনের উপর দিয়ে দিয়ে দিব্যি চলছে পারাপার। এত করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলায় ট্রেনের ধাক্কা বা ট্রেনে কাটাপড়ে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের গেল নয় মাসে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে নয়জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় নিহতদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ের জিআরপি থানায় মামলা হয়েছে। এরমধ্যে পাবনাতে ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন, রাজশাহী ৪ জন ও সিরাজগঞ্জে ১৫ জন। এছাড়া বগুড়া, সান্তাহার ও জয়পুরহাট মিলে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু মৃত্যু অসাবধানতাবশত হয়েছে। দ্রুত রেল লাইন পারাপার ছাড়াও আত্মহত্যার মতো ঘটনা রয়েছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে ও দুর্ঘটনা রোধে সচেতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মনিকা তাবাসুম চৈতির (১৩) মৃত্যু হয়। চৈতি নগরীর পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখার শিক্ষার্থী। ঘটনার দিনে সে পরিবারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। অসাবধানতাবশত তিনি রেল লাইনে উঠে গেলে ট্রেনের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। তার দু’দিন পরে ১৩ আগস্ট রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে দ্বীপ বাবুর (২৫) মৃত্যু হয়।
১১ জুন নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- উপজেলার জামানগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত তছলিমের ছেলে মফিজুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০)। গত ১৫ আগস্ট নাটোরের লালপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের (১৪) মৃত্যু হয়। গত ৫ জুলাই নাটোরে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়। গত ২৩ জুলাই নাটোরে ট্রেনে কাটাপড়ে সম্পা খাতুনের (৩০) মৃত্যু হয়।
৬ জুলাই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে কাশিনাথপুরের কাবারীকোলা গ্রামের মাসুদ মুন্সির ছেলে জামিরুল (৩২) এবং একই এলাকার জালাল মুন্সির ছেলে বাবু মুন্সি (২৪)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। গত ১৩ মার্চ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দৌড়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে শাহজাহান আলী বাবু (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় মিজান খাঁ (২৭) নামে এক ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, চলতি বছরের গত ১ মে জয়পুরহাটে ট্রেনের ধাক্কায় আবুল কাশেমের (৬৫) মৃত্যু হয়। ওইদিন পাঁচবিবি রেলস্টেশন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। গত ২১ জুন জয়পুরহাট শহরের ডাকবাংলা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক যুবকের মৃত্যু হয়। গত ৮ আগস্ট জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকার ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ২৩ জুলাই আক্কেলপুরের জামালগঞ্জ রেলস্টেশনে পঞ্চগড় অভিমুখী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
এদিকে, গত ১৯ জুন নওগাঁর আত্রাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শাহিনুর ইসলামের (৩২) মৃত্যু হয়। ভারত থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় আমেনা বেগমের (৬৫) মৃত্যু হয়। গত ১৯ মে নাচোলে ট্রেনের ধাক্কায় রুহুল আমিনের (৩৫) মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনের কাটা পড়ে বা ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে। পরে তদন্ত উঠে আসে কারো মৃত্যু রেললাইনে চলাচলের সময় অসাবধানতাবশত হয়েছে। কেউ বা ট্রেন আসার সময় দ্রুত রেল লাইন পারাপারের সময় হয়েছে। কেউ কেউ অভিমানে বা বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
বগুড়া রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার সোনাতলা থেকে সান্তাহার, জয়পুরহাট ও নাটোর নিয়ে মোট ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এসআই (নি:) হারুনুজ্জামান রোমেল বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীতে ট্রেনে কাটাপড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্য মৃত্যুর বিষয়ে মামলা হয়েছে। পাবনাতে ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন ও রাজশাহীতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ট্রেনে কাটাপড়ে নিহতের সংখ্যা কম। সবাই সচেতন হলে আরও কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।