সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয়ার পরে বাজারে তার একটুও প্রভাব পড়েনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য তিনটি। হঠাৎ করে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সাদা এলাচের দাম অনেক বেড়ে গেছে। মাঝারি মানের যে সাদা এলাচ কেজি ১৮শ’ থেকে ১৯শ’ টাকা বিক্রি হতো তা এখন ২৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার, দোকান ও বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্রই পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেন। তাতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক হালি ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। বাজার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। পাশাপাশি মানভেদে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫৩ টাকা। দেশি পেঁয়াজ কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর আলুর কেজি ৪৩ থেকে ৫০ টাকা দেখানো হয়েছে।
নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে গেলে কাঁচা বাজারই হয় না, মাছ-মাংস খাবেন ক্যামনে। মাছ-মাংসের যে দাম! জীবন চলা নিয়ে হিমশিম অবস্থা। মাসে বেতন পাই বারো হাজার টাকা। গত দেড় বছরে সব পণ্যের দাম বেড়েছে দুই-তিনগুণ। অথচ দেড় বছরে দেড় টাকাও বেতন বাড়েনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দাম বেধে দিলেও ব্যবসায়ীরা তো মানতেছে না। তাদের মনমতোই দাম বাড়াচ্ছে। গতকাল তিনটি পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও আগের দামেই বিক্রি করছে। ঘটনা হলো বাজার মনিটরিং কম হচ্ছে।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের গেটের সামনের রাস্তায় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি করছেন মোহিন। তিনি বলেন, ‘হালি ৫০ আর ডজন ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহ ধরে এই রেটেই আছে।’
ফার্মের মুরগির ডিমের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও মা-বাবার দোয়া ডিমের আড়তের বিক্রেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা সমিতি থেকে একশো ডিম ১,১৬০ টাকা কিনে এনে ১,১৮০ টাকায় বিক্রি করছি। গতকালও একই রেটে বিক্রি করেছি।’
মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে সাদা এলাচের। পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মানভেদে বাজারে সাদা এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২,৪০০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ১,৬০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া জিরা মসলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১,১৫০ থেকে ১,২০০ টাকায়। মসলার দর-দামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ মিয়া জানান, ‘মাঝারি মানের সাদা এলাচ দুই সপ্তাহ আগেও কেজি ১,৮০০ থেকে ১,৯০০ টাকা ছিল, সেই এলাচ আজ ২,৪০০ টাকা।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পাবলিকের কোটি কোটি মারি লইয়া যাচ্ছে, ভোক্তা অধিকার মেডিকেলের দিকে যায় না। খালি পেসার মাপে মেডিকেলে ১০০ টাকা। ল্যাবএইডে সিদ্দিক সাহেব আগে ডাক্তার ভিজিট নিতো ১,৫০০ টাকা, এখন নেয় ২,৫০০ টাকা।’
সাদা এলাচের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একই বাজারের ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা যে পাইকারীর কাছ থেকে মাল (মসলা) নিয়ে আসি তাদেরকে আমদানি কারকরা বলেছে, সরকার কেজিতে ৬০০ টাকা ভ্যাট ধরেছে, তাই দাম বাড়ছে। আমরা তাই শুনে আসছি।’
নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে কয়েকদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।’ এই বক্তব্যের ইমেজ কপি ফেইসবুকে সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল হাসান খোকনকে ট্যাগ করে সমীর ভৌমিক। তিনি লেখেন, ‘এসব মনগড়া অসত্য কথা না বলে সত্যি কথা বলুন। সত্য কথা বললে মান বাড়ে। দ্রব্যমূল্যের মাত্রাতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছে। দেশে এমন কোন দ্রব্য, পণ্য নেই যেসবের দাম বৃদ্ধি পায়নি। বরং অধিকাংশ দ্রব্য-পণ্যের মূল্য দুই আড়াই গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এসব কথা বললে মানুষের সঙ্গে নির্মম রসিকতা করা হয়। মানুষের যন্ত্রণা হয়। আপনাদের প্রতি ভক্তি থাকে না। নির্বাচনের বাকি তিন মাসের কাছাকাছি। এ সময় ভ্রান্তি, ভুল কিছু হয়ে থাকলে সেসব নিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলুন। করজোড়ে নিবেদন করুন।’
দ্রব্যমূল্যের দামের ঊর্দ্ধগতির প্রেক্ষাপটে গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘এখন নানা অজুহাত দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণহীন করা হচ্ছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।’
কয়েকটি খাদ্য পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ায় প্রেক্ষিতে কীভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ হবে এসব বিষয়ে গতকাল রংপুরে টিপু মুনশি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকারের যথেষ্ট পরিমাণ লোকের অভাব রয়েছে। এরপরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দাম ঠিক করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের বিশাল বাজার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। সেটি কাভার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছেন। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সব সময় ব্যবসায়ীদের যে চাপে রাখা যায়, তা কিন্তু নয়। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার দিচ্ছি।’
দেশে উৎপাদিত ডিম ও আলুর দাম নির্ধারণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন যে পণ্যের মজুদ কমে যায়, তখন সেই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সরকার। সেটা দেশি বা বিদেশি পণ্য হতে পারে।’
গতকাল নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযান শেষে আবদুল জব্বার বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ডিম, সয়াবিন তেল, আলু, পেঁয়াজের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, তা তদারকি করার জন্যই মূলত আজকের এই অভিযান।
তিনি বলেন, যেহেতু গতকালই এই মূল্য তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে তাই ব্যবসায়ী মহল এখনও এই ব্যাপারে সিনসিয়ার না, তারা আগের মূল্য তালিকাই রেখে দিয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অনিয়ম পেয়েছি। ডিমের একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অনিয়ম পেয়ে তাকে আইনের আওতায় এনেছি। আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছে।
এই কর্মকর্তা জানান, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা দুটি প্রতিষ্ঠানে দেখিনি। ফলে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের উপস্থিতিতে মূল্য তালিকা ঠিক করেছে। আমরা আশা করছি, যেহেতু প্রথমদিন তাই একটু সময় লাগছে। বিকেল থেকে বা আগামীকাল থেকে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২ আশ্বিন ১৪৩০, ৩০ সফর ১৪৪৫
আমিরুল মোমিনিন সাগর
সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয়ার পরে বাজারে তার একটুও প্রভাব পড়েনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য তিনটি। হঠাৎ করে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সাদা এলাচের দাম অনেক বেড়ে গেছে। মাঝারি মানের যে সাদা এলাচ কেজি ১৮শ’ থেকে ১৯শ’ টাকা বিক্রি হতো তা এখন ২৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার, দোকান ও বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্রই পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেন। তাতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক হালি ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। বাজার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। পাশাপাশি মানভেদে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫৩ টাকা। দেশি পেঁয়াজ কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর আলুর কেজি ৪৩ থেকে ৫০ টাকা দেখানো হয়েছে।
নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে গেলে কাঁচা বাজারই হয় না, মাছ-মাংস খাবেন ক্যামনে। মাছ-মাংসের যে দাম! জীবন চলা নিয়ে হিমশিম অবস্থা। মাসে বেতন পাই বারো হাজার টাকা। গত দেড় বছরে সব পণ্যের দাম বেড়েছে দুই-তিনগুণ। অথচ দেড় বছরে দেড় টাকাও বেতন বাড়েনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দাম বেধে দিলেও ব্যবসায়ীরা তো মানতেছে না। তাদের মনমতোই দাম বাড়াচ্ছে। গতকাল তিনটি পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও আগের দামেই বিক্রি করছে। ঘটনা হলো বাজার মনিটরিং কম হচ্ছে।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের গেটের সামনের রাস্তায় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি করছেন মোহিন। তিনি বলেন, ‘হালি ৫০ আর ডজন ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহ ধরে এই রেটেই আছে।’
ফার্মের মুরগির ডিমের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও মা-বাবার দোয়া ডিমের আড়তের বিক্রেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা সমিতি থেকে একশো ডিম ১,১৬০ টাকা কিনে এনে ১,১৮০ টাকায় বিক্রি করছি। গতকালও একই রেটে বিক্রি করেছি।’
মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে সাদা এলাচের। পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মানভেদে বাজারে সাদা এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২,৪০০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ১,৬০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া জিরা মসলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১,১৫০ থেকে ১,২০০ টাকায়। মসলার দর-দামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ মিয়া জানান, ‘মাঝারি মানের সাদা এলাচ দুই সপ্তাহ আগেও কেজি ১,৮০০ থেকে ১,৯০০ টাকা ছিল, সেই এলাচ আজ ২,৪০০ টাকা।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পাবলিকের কোটি কোটি মারি লইয়া যাচ্ছে, ভোক্তা অধিকার মেডিকেলের দিকে যায় না। খালি পেসার মাপে মেডিকেলে ১০০ টাকা। ল্যাবএইডে সিদ্দিক সাহেব আগে ডাক্তার ভিজিট নিতো ১,৫০০ টাকা, এখন নেয় ২,৫০০ টাকা।’
সাদা এলাচের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একই বাজারের ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা যে পাইকারীর কাছ থেকে মাল (মসলা) নিয়ে আসি তাদেরকে আমদানি কারকরা বলেছে, সরকার কেজিতে ৬০০ টাকা ভ্যাট ধরেছে, তাই দাম বাড়ছে। আমরা তাই শুনে আসছি।’
নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে কয়েকদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।’ এই বক্তব্যের ইমেজ কপি ফেইসবুকে সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল হাসান খোকনকে ট্যাগ করে সমীর ভৌমিক। তিনি লেখেন, ‘এসব মনগড়া অসত্য কথা না বলে সত্যি কথা বলুন। সত্য কথা বললে মান বাড়ে। দ্রব্যমূল্যের মাত্রাতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছে। দেশে এমন কোন দ্রব্য, পণ্য নেই যেসবের দাম বৃদ্ধি পায়নি। বরং অধিকাংশ দ্রব্য-পণ্যের মূল্য দুই আড়াই গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এসব কথা বললে মানুষের সঙ্গে নির্মম রসিকতা করা হয়। মানুষের যন্ত্রণা হয়। আপনাদের প্রতি ভক্তি থাকে না। নির্বাচনের বাকি তিন মাসের কাছাকাছি। এ সময় ভ্রান্তি, ভুল কিছু হয়ে থাকলে সেসব নিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলুন। করজোড়ে নিবেদন করুন।’
দ্রব্যমূল্যের দামের ঊর্দ্ধগতির প্রেক্ষাপটে গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘এখন নানা অজুহাত দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণহীন করা হচ্ছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।’
কয়েকটি খাদ্য পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ায় প্রেক্ষিতে কীভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ হবে এসব বিষয়ে গতকাল রংপুরে টিপু মুনশি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকারের যথেষ্ট পরিমাণ লোকের অভাব রয়েছে। এরপরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দাম ঠিক করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের বিশাল বাজার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। সেটি কাভার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছেন। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সব সময় ব্যবসায়ীদের যে চাপে রাখা যায়, তা কিন্তু নয়। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার দিচ্ছি।’
দেশে উৎপাদিত ডিম ও আলুর দাম নির্ধারণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন যে পণ্যের মজুদ কমে যায়, তখন সেই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সরকার। সেটা দেশি বা বিদেশি পণ্য হতে পারে।’
গতকাল নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযান শেষে আবদুল জব্বার বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ডিম, সয়াবিন তেল, আলু, পেঁয়াজের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, তা তদারকি করার জন্যই মূলত আজকের এই অভিযান।
তিনি বলেন, যেহেতু গতকালই এই মূল্য তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে তাই ব্যবসায়ী মহল এখনও এই ব্যাপারে সিনসিয়ার না, তারা আগের মূল্য তালিকাই রেখে দিয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অনিয়ম পেয়েছি। ডিমের একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অনিয়ম পেয়ে তাকে আইনের আওতায় এনেছি। আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছে।
এই কর্মকর্তা জানান, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা দুটি প্রতিষ্ঠানে দেখিনি। ফলে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের উপস্থিতিতে মূল্য তালিকা ঠিক করেছে। আমরা আশা করছি, যেহেতু প্রথমদিন তাই একটু সময় লাগছে। বিকেল থেকে বা আগামীকাল থেকে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।