মির্জা ফখরুল
সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একদফা দাবিতে তরুণ যারা আছে, যারা ভোট দিতে পারে না, তারা একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ ঘোষণা করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা আমাদের কর্মসূচি ১৮ সেপ্টেম্বর জানাব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদফা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে দেশের মানুষকে নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনে সবাই এক হয়ে আছে। সবাই একমত, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সংসদে আছে, জাতীয় পার্টির নেতারাও বলেছেন এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং আমরা একদফা দাবিতে আবারও কর্মসূচি দিব। ১৮ তারিখে ঘোষণা করব।’
দেশের নানা বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ‘ভুল বোঝানো হচ্ছে’ বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তার বক্তব্য, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকার কোন এক গ-ির মধ্যে বাস করছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের সবকিছুতে প্রতারণা, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। অথচ একবারও ভাবে না যে, মানুষ বোকা নয়; সবকিছু মানুষ বোঝে। তাদের (সরকার) সমস্যা হচ্ছে তারা একটি গ-ির মধ্যে বাস করে। তাকে (প্রধানমন্ত্রী) বোঝাচ্ছে- ‘সবকিছু ঠিক আছে। আপনি এত জনপ্রিয়, এত উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার তৈরি করেছেন, এই দেশের মানুষ আপনাকে ছাড়া কিছু বোঝে না। আপনি যা বলবেন তাই হবে।’ এই যে, ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে বারবার।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছুকেই একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমার তো বলছি না, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসান। তবে দেশকে মুক্ত করেন। তারা একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে আপনাকে। চেপে ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই দম বন্ধ পরিবেশ থেকে শ্বাস নেয়ার ও মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সবাই মিলে।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকার পুরানো মার্কেটগুলো আগুন লাগছে। বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট এখন কৃষি মার্কেট দেখলাম। এই মার্কেটগুলো এখন আবার নতুন করে তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেইগুলা তৈরি করে নিজস্ব লোকদের বরাদ্দ দেয়া হবে। আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বাতিল করে তাদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
২০১৮ সালের নির্বাচন সংক্রান্ত মামলাগুলোর কোন আদেশ এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট দেয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? সেটা হচ্ছে একটা দলকে নির্বাচিত করার সুব্যবস্থাগুলো করে দেয়া। যাতে তারা আবার ক্ষমতায় থাকতে পারে। এই অবস্থায় সামনে আবার নির্বাচন আসছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই নির্বাচনে তখন যাওয়া সম্ভব হবে যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। কারণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অধীনে তো কোন দিনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখনও সময় আছে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। তারা সমস্ত অহংকার, প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, জনগণ যেন তাদের ভোট দিয়ে সংসদ ও সরকার নির্বাচিত করতে পারে সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অন্যথায় বিএনপির ক্ষতি তো হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’
জামালপুর জেলার ডিসিকে প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আইওয়াশ। এ ছাড়া কিছুই নয়।’
ভারতে বিরোধী জোটের ১৪টি মিডিয়া বয়কটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন সেই রকম কিছু করি নাই। শুধু বলেছি, দয়া করে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করুন। সত্যকে সত্য, কালোকে কালো বলুন। এগুলো না বললে আমার কীভাবে দায়িত্ব পালন করবো। একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করবে। একইভাবে শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ তার দায়িত্ব পালন করবে। না হলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।’
সরকার আগের মতো বিএনপির বিরুদ্ধে সমানে মিথ্যা, গায়েবি মামলা দেয়া শুরু করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জামালপুরে গত ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা হয়েছে। আপনার দেখেছেন, একসঙ্গে ৭০ জন কোর্টে যাচ্ছে জামিন নিতে। হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার পরে নি¤œ আদালত প্রতি ৭ দিন পর-পর তারিখ দিচ্ছে। যার ফলে ঢাকা থেকে ৭ দিন পর-পর জামালপুর গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে এমন কোন থানা নেই যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা নেই। এটাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবেন? আমার দুঃখ হয় কিছু উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এটাকে সাপোর্ট করে, কিছু মিডিয়া তাকে সমর্থন দেয়। তাহলে কোথায় গেল আমাদের সেই ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন।’
শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২ আশ্বিন ১৪৩০, ৩০ সফর ১৪৪৫
মির্জা ফখরুল
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একদফা দাবিতে তরুণ যারা আছে, যারা ভোট দিতে পারে না, তারা একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ ঘোষণা করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা আমাদের কর্মসূচি ১৮ সেপ্টেম্বর জানাব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদফা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে দেশের মানুষকে নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনে সবাই এক হয়ে আছে। সবাই একমত, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সংসদে আছে, জাতীয় পার্টির নেতারাও বলেছেন এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং আমরা একদফা দাবিতে আবারও কর্মসূচি দিব। ১৮ তারিখে ঘোষণা করব।’
দেশের নানা বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ‘ভুল বোঝানো হচ্ছে’ বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তার বক্তব্য, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকার কোন এক গ-ির মধ্যে বাস করছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের সবকিছুতে প্রতারণা, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। অথচ একবারও ভাবে না যে, মানুষ বোকা নয়; সবকিছু মানুষ বোঝে। তাদের (সরকার) সমস্যা হচ্ছে তারা একটি গ-ির মধ্যে বাস করে। তাকে (প্রধানমন্ত্রী) বোঝাচ্ছে- ‘সবকিছু ঠিক আছে। আপনি এত জনপ্রিয়, এত উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার তৈরি করেছেন, এই দেশের মানুষ আপনাকে ছাড়া কিছু বোঝে না। আপনি যা বলবেন তাই হবে।’ এই যে, ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে বারবার।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছুকেই একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমার তো বলছি না, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসান। তবে দেশকে মুক্ত করেন। তারা একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে আপনাকে। চেপে ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই দম বন্ধ পরিবেশ থেকে শ্বাস নেয়ার ও মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সবাই মিলে।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকার পুরানো মার্কেটগুলো আগুন লাগছে। বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট এখন কৃষি মার্কেট দেখলাম। এই মার্কেটগুলো এখন আবার নতুন করে তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেইগুলা তৈরি করে নিজস্ব লোকদের বরাদ্দ দেয়া হবে। আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বাতিল করে তাদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
২০১৮ সালের নির্বাচন সংক্রান্ত মামলাগুলোর কোন আদেশ এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট দেয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? সেটা হচ্ছে একটা দলকে নির্বাচিত করার সুব্যবস্থাগুলো করে দেয়া। যাতে তারা আবার ক্ষমতায় থাকতে পারে। এই অবস্থায় সামনে আবার নির্বাচন আসছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই নির্বাচনে তখন যাওয়া সম্ভব হবে যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। কারণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অধীনে তো কোন দিনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখনও সময় আছে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। তারা সমস্ত অহংকার, প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, জনগণ যেন তাদের ভোট দিয়ে সংসদ ও সরকার নির্বাচিত করতে পারে সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অন্যথায় বিএনপির ক্ষতি তো হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’
জামালপুর জেলার ডিসিকে প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আইওয়াশ। এ ছাড়া কিছুই নয়।’
ভারতে বিরোধী জোটের ১৪টি মিডিয়া বয়কটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন সেই রকম কিছু করি নাই। শুধু বলেছি, দয়া করে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করুন। সত্যকে সত্য, কালোকে কালো বলুন। এগুলো না বললে আমার কীভাবে দায়িত্ব পালন করবো। একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করবে। একইভাবে শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ তার দায়িত্ব পালন করবে। না হলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।’
সরকার আগের মতো বিএনপির বিরুদ্ধে সমানে মিথ্যা, গায়েবি মামলা দেয়া শুরু করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জামালপুরে গত ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা হয়েছে। আপনার দেখেছেন, একসঙ্গে ৭০ জন কোর্টে যাচ্ছে জামিন নিতে। হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার পরে নি¤œ আদালত প্রতি ৭ দিন পর-পর তারিখ দিচ্ছে। যার ফলে ঢাকা থেকে ৭ দিন পর-পর জামালপুর গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে এমন কোন থানা নেই যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা নেই। এটাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবেন? আমার দুঃখ হয় কিছু উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এটাকে সাপোর্ট করে, কিছু মিডিয়া তাকে সমর্থন দেয়। তাহলে কোথায় গেল আমাদের সেই ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন।’