নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম সক্রিয় হচ্ছে : র‌্যাব

‘আফগানিস্তানে তালেবান সমর্থিত সরকার ফের ক্ষমতায় আসায়’ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসাল আল ইসলাম ফের সক্রিয়া হয়ে উঠছে বলে দাবি করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। তারা অনলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করছে। তবে কোন নাশকতা বা হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না এ তথ্য জানাতে পারেনি র‌্যাব।

র‌্যাবের ভাষ্য, দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের সক্রিয় দুটি গ্রুপের ৯ জনকে ১৫ দিনের ব্যবধানে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব অভিযানিক দল। রাষ্ট্রীয় (সামরিক) গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের দেয়া তথ্যে র‌্যাব এ দুটি অভিযানে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে আনসার আল ইসলামের সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন নেতাকেও গ্রেপ্তার করে।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বশীল মুনতাসির বিল্লাহসহ ৪ সদস্যকে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিত্বে ১৪ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১৩ এ অভিযান চালায়। গতকাল ভোরে অভিযান শেষ হয়। এ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. ইয়াছিন (১৭), মো. মুনসাসির বিল্লাহ (৩৬), আবদুল মালেক (৩৩) এবং সাব্বির হোসেন (২০)। র‌্যাবের দাবি গ্রেপ্তারকৃতরা আনসার আল ইসলামের কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে। এর আগে গত ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় (সামরিক) গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির বিভিন্ন অঞ্চলের কার্যক্রম ও সদস্য নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নজরদারি বৃদ্ধি করে। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল ও আগের দিন এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

র‌্যাবের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা (গ্রেপ্তারকৃতরা) নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে তামিম আল আদনানী, হারুন ইজহার, গুনবীসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক নেতার বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে ওই সংগঠনে যোগদান করে।

এরা উত্তরাঞ্চলে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সরাসরি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা সমাজের ধর্মভীরু মুসলমানদের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনে যোগদান ও তাদের তথাকথিত জিহাদের প্রতি আগ্রহ করার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তারা উত্তরাঞ্চলে সংগঠনের কার্যক্রম প্রসারিত করার লক্ষ্যে মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানা যায়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর অভিযানিক দল ঠাকুরগাঁও সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. ইয়াছিন নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। ওই তরুণ ঠাকুরগাঁওয়ের মো. মহসীন আলীর ছেলে। পরে তার দেয়া তথ্যে গতকাল ভোর বেলা দিনাজপুর সদর ও বিরল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. মুনতাসির বিল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে দিনাজপুরের মো. কেরামত আলীর ছেলে। এ সময় তার ৩ সহযোগী একই এলাকার রিয়াজুল ইসলামের ছেলে আবদুল মালেক, মৃত আবদুস সালামের ছেলে সাব্বির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো বলে জানা যায়।

র‌্যাবের ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসির বিল্লাহ সংগঠনটির উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি টেক্সটাইল বিষয়ে অধ্যয়নরত থাকাকালীন ৬ মাস অধ্যয়নের পর পড়া বাদ দিয়ে এলাকায় হিজামার ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি এলাকায় প্রাইভেটও পড়াতেন। তিনি ২০২১ সালে উক্ত সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগ দেন ও উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি উত্তরাঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি অদ্যাবধি ১৫ এর অধিক ব্যক্তিকে সংগঠনে যুক্ত করে বলে জানা যায়। তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, ঢাকা, লক্ষ্মীপুর, ভোলা এবং খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর ও সভায় অংশগ্রহণ করতেন বলে জানা যায়।

এছাড়া তিনি পাশর্^বর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন। তিনি সদস্যদের কাছে থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তাররকৃত ইয়াছিন এসএসসি পাস করে ঠাকুরগাঁও এলাকায় মধুর ব্যবসা করতো। সে ২০২২ সালে গ্রেপ্তারাকৃত মুনতাসিরের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। সে তার এলাকার ৬ জনকে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতো। সে তার মধু ব্যবসার অর্থ এবং ঠাকুরগাও এলাকার সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের কাছে হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরকে দিত বলে জানা যায়। সে ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত রিপন এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতো ও রিপনকে তথাকথিত হিজরতের জন্য পার্শ^বর্তী দেশে গমনের উদ্দেশ্য মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার কৃত আবদুল মালেক পূর্বে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে কুক হিসেবে কর্মরত ছিল। পরবর্তীতে সে ৩ বছর পূর্বে দিনাজপুরে ফিরে এসে দিনাজপুর শহরে চাংপাই চাইনিজ নামে একটি ফুড কার্ড এর ব্যবসা শুরু করে। ২০২১ সালে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং আনসার আল ইসলাম এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে অদ্যাবধি ৪-৫ জনকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতো। এছাড়া সে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের সঙ্গে দিনাজপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের সভায় অংশ নিয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে দিনাজপুরের বিরলে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতো। সে ২০২২ সালে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসির এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে তার নিজ এলাকা দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং ৩-৪ জনকে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। সে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের সঙ্গে উত্তরাঞ্চল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের মিটিং এ অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনের কাজে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতো এবং অন্যান্য সদস্যদের কাছে হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের কাছে প্রদান করতো বলে জানা যায়।

র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান ও নজরদারি পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে র‌্যাবের নিয়মিত নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র‌্যাব ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২ আশ্বিন ১৪৩০, ৩০ সফর ১৪৪৫

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম সক্রিয় হচ্ছে : র‌্যাব

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘আফগানিস্তানে তালেবান সমর্থিত সরকার ফের ক্ষমতায় আসায়’ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসাল আল ইসলাম ফের সক্রিয়া হয়ে উঠছে বলে দাবি করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। তারা অনলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করছে। তবে কোন নাশকতা বা হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না এ তথ্য জানাতে পারেনি র‌্যাব।

র‌্যাবের ভাষ্য, দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের সক্রিয় দুটি গ্রুপের ৯ জনকে ১৫ দিনের ব্যবধানে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব অভিযানিক দল। রাষ্ট্রীয় (সামরিক) গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের দেয়া তথ্যে র‌্যাব এ দুটি অভিযানে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে আনসার আল ইসলামের সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন নেতাকেও গ্রেপ্তার করে।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বশীল মুনতাসির বিল্লাহসহ ৪ সদস্যকে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিত্বে ১৪ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১৩ এ অভিযান চালায়। গতকাল ভোরে অভিযান শেষ হয়। এ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. ইয়াছিন (১৭), মো. মুনসাসির বিল্লাহ (৩৬), আবদুল মালেক (৩৩) এবং সাব্বির হোসেন (২০)। র‌্যাবের দাবি গ্রেপ্তারকৃতরা আনসার আল ইসলামের কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে। এর আগে গত ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় (সামরিক) গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির বিভিন্ন অঞ্চলের কার্যক্রম ও সদস্য নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নজরদারি বৃদ্ধি করে। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল ও আগের দিন এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

র‌্যাবের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা (গ্রেপ্তারকৃতরা) নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে তামিম আল আদনানী, হারুন ইজহার, গুনবীসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক নেতার বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে ওই সংগঠনে যোগদান করে।

এরা উত্তরাঞ্চলে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সরাসরি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা সমাজের ধর্মভীরু মুসলমানদের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনে যোগদান ও তাদের তথাকথিত জিহাদের প্রতি আগ্রহ করার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তারা উত্তরাঞ্চলে সংগঠনের কার্যক্রম প্রসারিত করার লক্ষ্যে মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানা যায়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর অভিযানিক দল ঠাকুরগাঁও সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. ইয়াছিন নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। ওই তরুণ ঠাকুরগাঁওয়ের মো. মহসীন আলীর ছেলে। পরে তার দেয়া তথ্যে গতকাল ভোর বেলা দিনাজপুর সদর ও বিরল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. মুনতাসির বিল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে দিনাজপুরের মো. কেরামত আলীর ছেলে। এ সময় তার ৩ সহযোগী একই এলাকার রিয়াজুল ইসলামের ছেলে আবদুল মালেক, মৃত আবদুস সালামের ছেলে সাব্বির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো বলে জানা যায়।

র‌্যাবের ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসির বিল্লাহ সংগঠনটির উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি টেক্সটাইল বিষয়ে অধ্যয়নরত থাকাকালীন ৬ মাস অধ্যয়নের পর পড়া বাদ দিয়ে এলাকায় হিজামার ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি এলাকায় প্রাইভেটও পড়াতেন। তিনি ২০২১ সালে উক্ত সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগ দেন ও উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি উত্তরাঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি অদ্যাবধি ১৫ এর অধিক ব্যক্তিকে সংগঠনে যুক্ত করে বলে জানা যায়। তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, ঢাকা, লক্ষ্মীপুর, ভোলা এবং খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর ও সভায় অংশগ্রহণ করতেন বলে জানা যায়।

এছাড়া তিনি পাশর্^বর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন। তিনি সদস্যদের কাছে থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তাররকৃত ইয়াছিন এসএসসি পাস করে ঠাকুরগাঁও এলাকায় মধুর ব্যবসা করতো। সে ২০২২ সালে গ্রেপ্তারাকৃত মুনতাসিরের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। সে তার এলাকার ৬ জনকে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতো। সে তার মধু ব্যবসার অর্থ এবং ঠাকুরগাও এলাকার সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের কাছে হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরকে দিত বলে জানা যায়। সে ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত রিপন এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতো ও রিপনকে তথাকথিত হিজরতের জন্য পার্শ^বর্তী দেশে গমনের উদ্দেশ্য মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার কৃত আবদুল মালেক পূর্বে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে কুক হিসেবে কর্মরত ছিল। পরবর্তীতে সে ৩ বছর পূর্বে দিনাজপুরে ফিরে এসে দিনাজপুর শহরে চাংপাই চাইনিজ নামে একটি ফুড কার্ড এর ব্যবসা শুরু করে। ২০২১ সালে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং আনসার আল ইসলাম এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে অদ্যাবধি ৪-৫ জনকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতো। এছাড়া সে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের সঙ্গে দিনাজপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের সভায় অংশ নিয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে দিনাজপুরের বিরলে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতো। সে ২০২২ সালে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসির এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে তার নিজ এলাকা দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং ৩-৪ জনকে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। সে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের সঙ্গে উত্তরাঞ্চল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের মিটিং এ অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনের কাজে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতো এবং অন্যান্য সদস্যদের কাছে হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেপ্তারকৃত মুনতাসিরের কাছে প্রদান করতো বলে জানা যায়।

র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান ও নজরদারি পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে র‌্যাবের নিয়মিত নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র‌্যাব ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।