সুখী দেশ

প্রতি বছর রাষ্ট্র সংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘সুখের’ ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের তালিকা প্রকাশ করে একটি সংস্থা। এ তালিকায় প্রথমসারিতে থাকে ধনী ও পশ্চিমা দেশগুলো। তাহলে প্রাচ্য কি সুখী নয়? সুখী দেশের তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে ইসরাইল।

সুখী দেশের তালিকায় ব্রিটেন রয়েছে ১৭ নম্বরে। এ দেশটির ঐশ্বর্য সেখানকার মানুষের সুখের প্রধান কারণ; কিন্তু এই সম্পদ এলো কোথা থেকে? সুখী দেশ ব্রিটেনের ঐশ্বর্য এসেছে আফ্রিকা মহাদেশ ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলো থেকে চিনি বাণিজ্য বা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে লুঠ করা সম্পদ থেকে।

সুখী দেশের তালিকায় ১৯তম অবস্থানে রয়েছে বেলজিয়াম; কিন্তু তার এই সুখ এসেছে আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে উপনিবেশ গড়ে তুলে ওই দেশের মানুষকে সীমাহীন দুর্দশায় রেখে সম্পদ লুঠ করে নেয়ার মাধ্যমে।

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইসরাইল ও নেদারল্যান্ডসের অধিবাসীরা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ।

সুখী দেশের তালিকায় ১৫তম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। আর এই আমেরিকায় যে আয়-বৈষম্য রয়েছে, তা অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বেশি। সরকারি হিসাবে সেখানে প্রায় ৪ কোটি লোক গরিব।

২০২৩ সালের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় ইউরোপের দেশের সংখ্যাই বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত ৯ বছর ধরে ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছে। তবে এর সঙ্গে এই তথ্যটি জানা দরকার যে, ফিনল্যান্ডের মানুষ ইউরোপে অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট বা ডিপ্রেশনের ওষুধ ব্যবহারকারীদের মধ্যে একদম প্রথমে। একই কথা প্রযোজ্য সুইডেনের বেলাতেও। সুখী দেশের তালিকায় তাদের অবস্থান ৬ নাম্বারে।

আইসল্যান্ডের নামও যারা সুখী দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে। এই দেশগুলো সুখী দেশের তালিকায় প্রথমসারিতে রয়েছে যেমন, ঠিক তেমনিভাবে তাদের মধ্যে রয়েছে বিষন্নতারোধী ওষুধ ব্যবহারের রেকর্ড। অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট ও স্লিপিং পিল না খেলে তাদের ঘুম আসে না। তাই বলা যায়, ফিনল্যান্ডসহ সুখী দেশগুলোর মানুষ বিষন্ন, তবে সুখী।

একজন মানুষের সুখ আরেকজনের অসুখী জীবনযাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আশপাশের কেউ অসুখী হলে, দুঃখী থাকলে আমরা সহজে সুখী হতে পারি না। আসলে কারও পৌষমাস তো কারও সর্বনাশ! কারও সুখের জন্য অসুখী হতে হয় আরেকজনকে। ডাকাত সুখ শান্তিতে থাকার জন্য করে ডাকাতি। আজ যারা ধনকুবের হয়েছে, আর তা সম্ভব হয়েছে অন্যদের শোষণের মাধ্যমেই।

বিশ্ব হ্যাপিনেস রিপোর্ট আমাদের সত্যিকার অর্থে কী বলছে? এটা পশ্চিমা ভাবধারাকে অনুসরণ করে জোর গলায় বলছে, ‘দেখো, আমরা ভালো আছি। আমরা আমাদের সভ্য ও সুখের জীবন নিয়ে খুব সন্তুষ্ট।’ এটাই অন্যদের দেখাতে চায় ওরা।

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৩ সাল অনুযায়ী সুখী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০০ দেশের মধ্যে নেই বাংলাদেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭ দেশের মধ্যে ১১৮ নম্বরে।

লিয়াকত হোসেন খোকন

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২ আশ্বিন ১৪৩০, ৩০ সফর ১৪৪৫

সুখী দেশ

প্রতি বছর রাষ্ট্র সংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘সুখের’ ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের তালিকা প্রকাশ করে একটি সংস্থা। এ তালিকায় প্রথমসারিতে থাকে ধনী ও পশ্চিমা দেশগুলো। তাহলে প্রাচ্য কি সুখী নয়? সুখী দেশের তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে ইসরাইল।

সুখী দেশের তালিকায় ব্রিটেন রয়েছে ১৭ নম্বরে। এ দেশটির ঐশ্বর্য সেখানকার মানুষের সুখের প্রধান কারণ; কিন্তু এই সম্পদ এলো কোথা থেকে? সুখী দেশ ব্রিটেনের ঐশ্বর্য এসেছে আফ্রিকা মহাদেশ ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলো থেকে চিনি বাণিজ্য বা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে লুঠ করা সম্পদ থেকে।

সুখী দেশের তালিকায় ১৯তম অবস্থানে রয়েছে বেলজিয়াম; কিন্তু তার এই সুখ এসেছে আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে উপনিবেশ গড়ে তুলে ওই দেশের মানুষকে সীমাহীন দুর্দশায় রেখে সম্পদ লুঠ করে নেয়ার মাধ্যমে।

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইসরাইল ও নেদারল্যান্ডসের অধিবাসীরা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ।

সুখী দেশের তালিকায় ১৫তম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। আর এই আমেরিকায় যে আয়-বৈষম্য রয়েছে, তা অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বেশি। সরকারি হিসাবে সেখানে প্রায় ৪ কোটি লোক গরিব।

২০২৩ সালের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় ইউরোপের দেশের সংখ্যাই বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত ৯ বছর ধরে ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছে। তবে এর সঙ্গে এই তথ্যটি জানা দরকার যে, ফিনল্যান্ডের মানুষ ইউরোপে অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট বা ডিপ্রেশনের ওষুধ ব্যবহারকারীদের মধ্যে একদম প্রথমে। একই কথা প্রযোজ্য সুইডেনের বেলাতেও। সুখী দেশের তালিকায় তাদের অবস্থান ৬ নাম্বারে।

আইসল্যান্ডের নামও যারা সুখী দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে। এই দেশগুলো সুখী দেশের তালিকায় প্রথমসারিতে রয়েছে যেমন, ঠিক তেমনিভাবে তাদের মধ্যে রয়েছে বিষন্নতারোধী ওষুধ ব্যবহারের রেকর্ড। অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট ও স্লিপিং পিল না খেলে তাদের ঘুম আসে না। তাই বলা যায়, ফিনল্যান্ডসহ সুখী দেশগুলোর মানুষ বিষন্ন, তবে সুখী।

একজন মানুষের সুখ আরেকজনের অসুখী জীবনযাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আশপাশের কেউ অসুখী হলে, দুঃখী থাকলে আমরা সহজে সুখী হতে পারি না। আসলে কারও পৌষমাস তো কারও সর্বনাশ! কারও সুখের জন্য অসুখী হতে হয় আরেকজনকে। ডাকাত সুখ শান্তিতে থাকার জন্য করে ডাকাতি। আজ যারা ধনকুবের হয়েছে, আর তা সম্ভব হয়েছে অন্যদের শোষণের মাধ্যমেই।

বিশ্ব হ্যাপিনেস রিপোর্ট আমাদের সত্যিকার অর্থে কী বলছে? এটা পশ্চিমা ভাবধারাকে অনুসরণ করে জোর গলায় বলছে, ‘দেখো, আমরা ভালো আছি। আমরা আমাদের সভ্য ও সুখের জীবন নিয়ে খুব সন্তুষ্ট।’ এটাই অন্যদের দেখাতে চায় ওরা।

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৩ সাল অনুযায়ী সুখী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০০ দেশের মধ্যে নেই বাংলাদেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭ দেশের মধ্যে ১১৮ নম্বরে।

লিয়াকত হোসেন খোকন