বিলুপ্তির পথে বাকেরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিক রকমারি ডিজাইনের প্লাস্টিকের সাথে পাল্লা দিয়েও এগোতে পারছে না হাতে তৈরি এ কুটির শিল্পটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে,বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম শীতল পাটি তৈরীর জন্য বিখ্যাত এর মধ্যে রয়েছে দড়িয়াল ইউপির কাজলাকাঠী,রঙ্গশ্রী ইউপির কাঠালিয়া, রাজাপুর, গারুড়িয়া ইউপির সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রাম। এসব গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক যুগ যুগ ধরে তৈরী করে আসছে হাতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের শীতল পাটি এক সময় গ্রামের এ শীতল পাটির বেশ সুনাম ও খ্যাতি ছিল যার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার এসে ভাল দামে নিয়ে বিভিন্ন শহরে বিক্রি করে সরগরম করে রেখেছিল এ শিল্পটি।

গরমের সময় এ শীতল পাটি খুব আরামদায়ক হত মূলত শীতল পাটি কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এ ছাড়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন শিল্প কর্ম ফুটে উঠত এ শিল্পকর্মে আর এর বর্ণিল নকশাও সবাইকে মুগ্ধ করত।

এ শিল্প তৈরীর প্রধান উপকরণ হল পাটিয়া গাছের বাকল তবে স্থানীয় নাম একেক অঞ্চলে একেক ধরনের কোথাও এই গাছকে মোতরাও বলে তবে বরিশাল অঞ্চলে এই গাছটি পাইত্রা বা পাইতরা নামে বেশ পরিচিত তবে শীতল পাটি তৈরীর পিছনে রয়েছে এক শ্রেনীর নারী পুরুষের দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম বাগান থেকে পাইত্রা গাছ কেটে আঁটি বেধে মাঠে এনে ধারালো বটি দিয়ে বাকল আলাদা লম্বা চারটি ভাগ করে অতি সূক্ষ্ম ভাবে পাতলা বেতি তৈরী করা আবার সেই বাকল নানা রংয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে বুননের উপযোগী করে তৈরি হয় শীতল পাটি। তবে নানা প্রতিকুলতায় এই হস্তশিল্প থেকে এখন অনেকে হাত গুটিয়ে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সর্বোপরি একটি শীতল পাটি তৈরী করতে যে পরিমাণ সময় ও পরিশ্রম দিতে হয় সে পরিমাণ চাহিদা ও মুল্য না পাওয়াও এর একটি বড় কারণ। উপজেলার উল্লেখিত গ্রামগুলোয় রয়েছে পাটিকর পাড়া এরা মুলত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন কারনে এইসব পাড়ার লোকজন আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা লাভের আশায় পেশা বদল করে অন্য পেশায় জড়িত হয়েছে এছাড়াও নানাবিধ কারনে কাজলাকাঠী সহ আশপাশের গ্রামের শীতল পাটির এ শিল্প কর্মটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কিছু সংখ্যক টিকে থাকলেও অভাবের কারনে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে তারা জানিয়েছেন।

কাজলাকাঠী গ্রামের পাটিকর পাড়ার ননী গোপাল পাটিকর বলেন,অনাহারে অর্ধাহারে কোনভাবে দিন চলছে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে পেশা বদল ছাড়া উপায় নেই আমাদের পাটিকর সম্প্রদায়ের পুর্বপুরুষের স্মৃতি ধরে রাখার চেস্টা করছি জানি না আর কত পোহাতে হয়। রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামের যোগেশ্বর পাটিকর বলেন,স্থানীয়ভাবে পটিকরদের তালিকা করে সরকারি ভাবে প্রনোদনা দেওয়া সহ সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়ান হয় তাহলে হয়ত ঘুরে দাড়াতে পারবে শিল্প।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বর পাটিকর বলেন, শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনে ইউনেস্কো ২০১৭ সালে শীতলপাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে তবে তালিকায় স্থানের পর আমাদের জন্য এর পরবর্তী সফলতা কি ভাবে আসতে তা এখনো বোধগম্য নয়।

এ শিল্পকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু অমল চন্দ্র দাস বলেন, পাটিকরের এই শিল্পটি পাটিকরদের পুর্বপুরুষের স্মৃতিজরিত তাই এই শিল্পটি তাদের ধরে রাখা উচিৎ তবে পাটিকরদের প্রতি সরকারি ভাবে একটু নজর দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি নয়তো এই শিল্পটি বিলুপ্তর পথে প্রায়। এই শিল্পটির প্রতি খেয়াল না দিলে পাটিকরদের এই মুল ব্যবসা ছেরে অন্যত্র দিকে তারা ঝুকবেন তাই এদের কে রক্ষা করা উচিৎ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল দৈনিক সংবাদ কে জানান,এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট মহলকে অভিহিত করা হবে।

রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩ আশ্বিন ১৪৩০, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বিলুপ্তির পথে বাকেরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি

পবিত্র চক্রবর্তী, বাকেরগঞ্জ (বরিশাল)

image

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিক রকমারি ডিজাইনের প্লাস্টিকের সাথে পাল্লা দিয়েও এগোতে পারছে না হাতে তৈরি এ কুটির শিল্পটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে,বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম শীতল পাটি তৈরীর জন্য বিখ্যাত এর মধ্যে রয়েছে দড়িয়াল ইউপির কাজলাকাঠী,রঙ্গশ্রী ইউপির কাঠালিয়া, রাজাপুর, গারুড়িয়া ইউপির সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রাম। এসব গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক যুগ যুগ ধরে তৈরী করে আসছে হাতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের শীতল পাটি এক সময় গ্রামের এ শীতল পাটির বেশ সুনাম ও খ্যাতি ছিল যার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার এসে ভাল দামে নিয়ে বিভিন্ন শহরে বিক্রি করে সরগরম করে রেখেছিল এ শিল্পটি।

গরমের সময় এ শীতল পাটি খুব আরামদায়ক হত মূলত শীতল পাটি কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এ ছাড়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন শিল্প কর্ম ফুটে উঠত এ শিল্পকর্মে আর এর বর্ণিল নকশাও সবাইকে মুগ্ধ করত।

এ শিল্প তৈরীর প্রধান উপকরণ হল পাটিয়া গাছের বাকল তবে স্থানীয় নাম একেক অঞ্চলে একেক ধরনের কোথাও এই গাছকে মোতরাও বলে তবে বরিশাল অঞ্চলে এই গাছটি পাইত্রা বা পাইতরা নামে বেশ পরিচিত তবে শীতল পাটি তৈরীর পিছনে রয়েছে এক শ্রেনীর নারী পুরুষের দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম বাগান থেকে পাইত্রা গাছ কেটে আঁটি বেধে মাঠে এনে ধারালো বটি দিয়ে বাকল আলাদা লম্বা চারটি ভাগ করে অতি সূক্ষ্ম ভাবে পাতলা বেতি তৈরী করা আবার সেই বাকল নানা রংয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে বুননের উপযোগী করে তৈরি হয় শীতল পাটি। তবে নানা প্রতিকুলতায় এই হস্তশিল্প থেকে এখন অনেকে হাত গুটিয়ে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সর্বোপরি একটি শীতল পাটি তৈরী করতে যে পরিমাণ সময় ও পরিশ্রম দিতে হয় সে পরিমাণ চাহিদা ও মুল্য না পাওয়াও এর একটি বড় কারণ। উপজেলার উল্লেখিত গ্রামগুলোয় রয়েছে পাটিকর পাড়া এরা মুলত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন কারনে এইসব পাড়ার লোকজন আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা লাভের আশায় পেশা বদল করে অন্য পেশায় জড়িত হয়েছে এছাড়াও নানাবিধ কারনে কাজলাকাঠী সহ আশপাশের গ্রামের শীতল পাটির এ শিল্প কর্মটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কিছু সংখ্যক টিকে থাকলেও অভাবের কারনে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে তারা জানিয়েছেন।

কাজলাকাঠী গ্রামের পাটিকর পাড়ার ননী গোপাল পাটিকর বলেন,অনাহারে অর্ধাহারে কোনভাবে দিন চলছে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে পেশা বদল ছাড়া উপায় নেই আমাদের পাটিকর সম্প্রদায়ের পুর্বপুরুষের স্মৃতি ধরে রাখার চেস্টা করছি জানি না আর কত পোহাতে হয়। রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামের যোগেশ্বর পাটিকর বলেন,স্থানীয়ভাবে পটিকরদের তালিকা করে সরকারি ভাবে প্রনোদনা দেওয়া সহ সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়ান হয় তাহলে হয়ত ঘুরে দাড়াতে পারবে শিল্প।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বর পাটিকর বলেন, শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনে ইউনেস্কো ২০১৭ সালে শীতলপাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে তবে তালিকায় স্থানের পর আমাদের জন্য এর পরবর্তী সফলতা কি ভাবে আসতে তা এখনো বোধগম্য নয়।

এ শিল্পকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু অমল চন্দ্র দাস বলেন, পাটিকরের এই শিল্পটি পাটিকরদের পুর্বপুরুষের স্মৃতিজরিত তাই এই শিল্পটি তাদের ধরে রাখা উচিৎ তবে পাটিকরদের প্রতি সরকারি ভাবে একটু নজর দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি নয়তো এই শিল্পটি বিলুপ্তর পথে প্রায়। এই শিল্পটির প্রতি খেয়াল না দিলে পাটিকরদের এই মুল ব্যবসা ছেরে অন্যত্র দিকে তারা ঝুকবেন তাই এদের কে রক্ষা করা উচিৎ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল দৈনিক সংবাদ কে জানান,এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট মহলকে অভিহিত করা হবে।